পঞ্চগড়ে উপানুষ্ঠানিকের ঝরে পড়া প্রকল্পে অনিয়ম

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে উপানুষ্ঠানিকের ঝড়ে পড়া প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন-চার মাস আগেই বন্ধ হয়ে গেছে কোন কোন স্কুল। কোন স্কুলে রাখা হয়েছে ভুট্টা, খড়ি, সিমেন্টের গুদাম কোন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী নাই, পায়নি বই, কোথায় ছাত্রছাত্রী থাকলেও ৫-৮ বছরের শিশুই বেশি, কেউ কেউ সরকারি প্রাথমিক বা কওমি মাদ্রাসায় পড়লেও উপবৃত্তি, ব্যাগ, ড্রেসের লোভে ভর্তি হয় উপানুষ্ঠানিকের স্কুলে। সব মিলিয়ে সরকারের শিক্ষা প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্যে ভেস্তে যেতে বসেছে। তবুও তুলে নেয়া হয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থাটির দাবী ঠিকঠাক চলেছে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তথ্য সূত্রে জানা যায়,চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫ এর আওতায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিখন কেন্দ্রের বিদ্যালয় বহির্ভূত (ঝরে পড়া এবং ভর্তি না হওয়া) ৮-১৪ বছরের শিশুদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয়া এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূলধারায় ফিরিয়ে আনা এই কর্মসূচির লক্ষ্য।
মূলত প্রাথমিক এবং পরিকল্পিত শিক্ষা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সম্পন্ন করে দেয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্যে পঞ্চগড় সদর, বোদা, দেবীগঞ্জ, আটোয়ারী প্রতিটি উপজেলায় ৭০টি করে স্কুলে ৩০ জন হারে মোট ৮ হাজার ৪১৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে প্রকল্প ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়। কয়েক বছর চলমান থাকার কথা থাকলেও প্রকল্পের মুল উদ্দেশ্য পুরণ না হওয়ায়, জুন ২০২৩ শেষ করার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কিন্তু সময় বাড়ানোর চেষ্টায় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান আরডিআরএস বাংলাদেশ।
স্কুল প্রতি থাকছে একজন শিক্ষকসহ সুপার ভাইজার, উপজেলা ও জেলা অফিসার।দেয়া হবে স্কুলের মাসিক ভাড়া,শিক্ষার্থীদের যাবতীয় উপকরণ খাতা, পেনসিল, সার্পনার,ইরেজার, রং পেনসিল, স্কুল ব্যাগ, ড্রেস আইডি কার্ড ও উপবৃত্তি।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ৯৭৬ জন ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল।আরডিআরএস সেখানে ৮ হাজার ৪১৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে স্কুল পরিচালনা করছে। সরকারি হিসাবে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা এতোকম হলে কিভাবে এ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে দাবী সচেতন মহলের।
সম্প্রতি সরেজমিনে পঞ্চগড় সদর ও দেবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জালাসী শিখন স্কুলটি অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে, প্রধান পাড়া স্কুলটিতে সিমেন্টসহ অন্য মালামালের গুদাম, বসুনিয়া পাড়া স্কুলটির ভিতরে ভুট্টা, দলুয়া পাড়ায় স্কুলটি আগে থেকে বন্ধ,কায়েত পাড়া স্কুলটির একই অবস্থা। বড়দরগা স্কুলটি বন্ধ, তিনঘড়িয়া পাড়া স্কুলে চার পাঁচজন ছাত্রছাত্রী, উত্তর বনগ্রাম বন্ধ, খেনপাড়া বন্ধ, দেউনিয়া পাড়া,পন্ডিতপাড়া বন্ধ, প্রামানিক পাড়া,ফুলবাড়ী, শেখবাধা, কাজলদিঘী মুন্সিপাড়া, তিস্তাপাড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
কায়েত পাড়া এলাকার শিখন স্কুল ঘরের মালিক নাসির উদ্দীন বিটিসি নিউজকে জানান, দুই-তিনমাস আগে থেকে স্কুলে কেউ আসেনা। তবে শিক্ষিকা মনছুরা বেগম ঘন্টা খানেক পরে এসে বলছে প্রতিদিন স্কুলে ছাত্রছাত্রী আসে কিন্তু বই পাইছি ১৫ সেট।
দলুয়া পাড়া শিখন কেন্দ্রের শিক্ষিকা হাসনাতুন পারুল বিটিসি নিউজকে জানান, তৃতীয় শ্রেনীর বই পাইনি।শিখন স্কুলটি কোথায় জানতে চাইলে বলেন,ঘর ভাঙ্গার কারনে অন্য স্থানে নেয়া হয়েছে।
বড়দরগা শিখন স্কুলের শিক্ষিকা মর্জিনা বেগম সকাল ১০ টায় বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন তার কাছে ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন বৃষ্টির কারনে আজকে কেউ আসেনি।
আরডিআরএস বাংলাদেশ আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন পঞ্চগড় জেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো.জহুরুল হক বিটিসি নিউজকে জানান, শিখন স্কুল ভালই চলেছে প্রতিদিন মনিটরিং ছিল সুপার ভাইজার ও উপজেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজারদের। তবে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা শুনে হয়ত দু-একজন স্কুল বন্ধ করে ফেলেছে
পঞ্চগড় জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সহকারী পরিচালক (অ:দ ) পারভেজ আখতার খান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি ধরেননি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর পঞ্চগড় প্রতিনিধি শেখ সম্রাট হোসাইন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.