নেক্সট-জেন কম্ব্যাট কৌশল নিয়ে কাজ করছে ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উইপন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং এস্টাবলিশমেন্ট (ডব্লিউইএসইই) যাত্রা শুরু করেছিল ২০ জন সদস্য নিয়ে। এ প্রতিষ্ঠানই পরে তৈরি করে ডেটা লিংকভিত্তিক সরঞ্জাম যা নৌবাহিনীর জন্য বার্তা বিনিময় ও কৌশলগত যোগাযোগের অন্যতম সহায়ক হয়ে ওঠে।
শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল নৌযানগুলোতে নানা ধরনের সরঞ্জাম সংযোজন এবং স্থানীয় কম্ব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সংস্কার। তবে ৪৫ বছরে নৌবাহিনীর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারদের এ ইউনিটটি সেই কাজের সীমা অতিক্রম করে এখন পরবর্তী প্রজন্মের (নেক্সট-জেন) যুদ্ধ-কৌশল উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।
১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নৌবাহিনী রাষ্ট্রায়ত্ত শিপইয়ার্ডগুলো ব্যবহার করে যুদ্ধ-জাহাজ নির্মাণ শুরু করেছে। এ কাজের জন্য দেশিয় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হলেও ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলো আনা হচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে।
এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপনার একটি দল গড়ে ওঠে যা উইপন্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক সিস্টেমস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউইএসও) নামে পরিচিতি পায়। ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিলো নৌবাহিনীর জাহাজগুলোতে নানা প্রযুক্তির সরঞ্জাম সংযোজনে সমর্থ প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি মৌল ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
নেভাল অফিসার, বিজ্ঞানী ও কর্মীদের ২০ জনের একটি দল নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নয়া দিল্লির সফদরজং এনক্লেভের একটি ভাড়া বাড়িতে যাত্রা শুরু করে। পরে তা সিভিল লাইন্সে স্থানান্তরিত হয়।
বর্তমানে নৌবাহিনীর উইপন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং এস্টাবলিশমেন্ট হিসেবে পরিচিত এ প্রতিষ্ঠানটি এখন ভারতীয় নৌবাহিনীর সব জাহাজে পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধ-কৌশল ব্যবস্থা সংযোজনের কাজ করছে। এর মধ্যে এয়ারক্রাফট কেরিয়ার আইএনএস ভিক্রান্তও রয়েছে।
যুদ্ধজাহাজগুলোতে সিএমএস একটি কেন্দ্রিয় ভূমিকা রাখে কেননা এটি রাডার, সোনার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) সিস্টেম, অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) এবং বন্দুক, মিসাইল, টর্পেডো ও রকেটের মতো যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
প্রতিষ্ঠানটি একটি ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয় যার সভাপতি (চেয়ার) সেক্রেটারি ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স (আরএনডি)। এ ছাড়া এতে আরও রয়েছেন ডিআরডিও, এমওডি, এমওডি (ফিন্যান্স), চিফ অব ম্যাটেরিয়াল (সিওএম), ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ডব্লিউইএসইই-এর ডিরেক্টর জেনারেল।
ডব্লিউইএসইই বর্তমানে জাহাজগুলোতে ব্যবহৃত সফটঅয়্যার ডিফাইনড রেডিও (এসডিআর) ব্যবস্থা বদলে সর্বশেষ প্রযুক্তির সফটঅয়্যার-ডিফাইনড রেডিওস স্থাপনের কাজ করছে। এসডিআর সমুদ্রে ভারতীয় জাহাজগুলোর মধ্যে এবং নেভাল এয়ারক্রাফটের সঙ্গে বিরামহীন যোগাযোগের সক্ষমতা তৈরি করে। ২০০৯ সালে এ ব্যাপারে প্রথম কাজ শুরু হয় ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)।
শুরুতে ডব্লিউইএসও-এর কাজ ছিল প্রজেক্ট-১৬ (গোদাভরি ক্লাস) ফ্রিগেটগুলোর মধ্যে সিস্টেমস ইন্টিগ্রেশন করা। গোদাভরি ক্লাস জাহাজগুলোতে সোভিয়েত নির্মিত অস্ত্র, পশ্চিমা ও ভারতীয় সেন্সর এবং কমিউনিকেশন্স ইক্যুইপমেন্ট ছিলো। এতে সিস্টেমস ইন্টিগ্রেশনের জন্য দরকার ছিলো কমিউনিকেশন প্রটোকল, এমবেডেড সিস্টেমস এবং সফটঅয়্যার তৈরির জন্য দক্ষতা সৃষ্টি করা।
বর্তমানে ডব্লিউইএসইই কম্ব্যাট সিস্টেমস ইন্টিগ্রেশন, কম্ব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস, নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড ডেটা লিংক এবং সাইবার সিকিউরিটি—এই চারটি প্রধান ক্ষেত্রে কাজ করছে।
প্রজেক্ট-১৬এ (ব্রহ্মপুত্র ক্লাস), প্রজেক্ট-১৫ (দিল্লি ক্লাস), প্রজেক্ট-২৫এ (কোরা ক্লাস) এবং প্রজেক্ট-১২৪১আরই (বীর ক্লাস)-এর জাহাজগুলো এবং মড্যুলার ডেটা বাস (এমডিবি) ও মড্যুলার ইন্টারফেস ফর শিপ-বোর্ন সিস্টেমসের (এমআইএসএস বক্সেস) সঙ্গে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠানটিকে এর ক্রেডিট সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন করতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ডব্লিউইএসইই-এর ক্রিপ্টোগ্রাফি ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি সরকারের মধ্যে ক্রিপ্টোগ্রাফিক ব্যবস্থা তৈরির জন্য অনুমোদন পেয়েছে। ভারতে ন্যাশনাল সাইফার পলিসি কর্তৃক অনুমোদিত গুটিকয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডব্লিউইএসইই একটি।
২০১৪ সালে ডব্লিউইএসইই ভারতীয় নৌবাহিনীর ইন্টিগ্রেশন অথরিটি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। ডব্লিউইএসইই-এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে আমরা সহজলভ্য সবশেষ প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এ শিল্পে প্রযুক্তি রয়েছে এবং এসব তখনই কাজের যখন এর ব্যবহারকারী থাকবে। তাই আমরা প্রযুক্তি শিল্পের নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি।
‘আমরা কোয়ান্টাম, স্বয়ংক্রিয় যান, এআই বিগ ডেটা, লেজার কমিউনিকেশন এবং ব্লক চেইনের মতো সর্বশেষ ও উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি। আমরা হয় নিজেরা এগুলো করছি অথবা স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করছি। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব খাতে যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ডব্লিউইএসইই-এর রয়েছে তা আমাদের যা প্রয়োজন এবং সহজলভ্য এসব প্রযুক্তির সম্ভাবনার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনে ভূমিকা রাখছে।’ (সূত্র: দ্য প্রিন্ট)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.