নিয়োগপাপ্তদের অধিকাংশই শিবিরের নৃশংসতার শিকার ও দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মী : ডাবলু সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আমি হলফ করে বলতে পারি- হিসেব করে দেখেছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান স্যার চলে যাওয়ার সময় যাদেরকে নিয়োগ দিয়ে গেছেন যারা বিভিন্ন সময় শিবিরের নৃশংসতার শিকার ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের ও দুঃসময়ের নেতাকর্মী। এমন ৭৩ জন ত্যাগী নেতাকর্মীসহ মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ পরিবারের মোট ১২৫ জনকে অ্যাডহকে চাকরি দিয়েছেন বিদায়ী উপাচার্য । এটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি সুখের খবর।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রতি অ্যাডহকে শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশীকে অ্যাডহকে নিয়োগ প্রদানের পর সারাদেশজুড়ে যখন এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঠিক সেই মূহুর্তে দেশের একটি অনলাইন পোর্টালের আয়োজনে গত সোমবার (১০ মে) এক ‘টকশো’ প্রোগ্রামে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন।
রাবির অতীত ইতিহাস টেনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা টকশো-তে বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে আমাদের রাজনীতির একটি প্রেক্ষাপট কিন্তু সবসময় থাকে। যেটি সারাদেশের মানুষই জানে। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে করেছি। সারা বাংলাদেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের সুতিকাগার হিসেবে একটি সুনাম রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৬৯ সালে রাবির তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা শহীদন হন। তিনিই শিক্ষকদের মধ্যে প্রথম শহীদ। সেই প্রেক্ষাপটেই কিন্তু রাবিতে কোনো ঘটনা ঘটলে তা সারাদেশেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়। সঙ্গত কারণেই এই নিয়োগ নিয়ে সারাদেশেই আলোচনা চলছে।’
ডাবলু সরকার বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে বেশিরভাগ সময়ই প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন শিবিরের আধিপত্য কিংবা দখলদারিত্ব ছিল। তারা সবসময় ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছিল। রাবি ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রগকাটা, লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়লে শরীর এখনো শিউরে ওঠে। তাই ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শান্তি, শৃক্সক্ষলা রক্ষা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু সজাগ হয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় থাকার পরও রাবি ক্যাম্পাসে শিবির আমাদের ছেলেদের হাত-পায়ের রগ কাট, হত্যা, গুম-খুন অব্যাহত রেখেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার থাকার পরও নৃশংস উপায়ে শিবির আমাদের প্রায় ২২ জন ত্যাগী নেতাকর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছিল। এছাড়া ওই দিন ছাত্রলীগের ৪ জন নেতা লাশ হয়ে নিজ বাড়িতে মা-বাবার কোলে ফিরে গিয়েছেন। শিবিরের নৃশংস হামলায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিবের ডান পা কেটে তো বাদই দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল্লাহ মাসুদকে শিবিরের ক্যাডাররা পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা যারা শিবিরের নৃশংস হামলায় পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আর আমি যতদূর জানি, তাদেরসহ দুঃসময়ে যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান চাকরি দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নিয়োগটি তিনি কেন দিয়ে গেলেন আমি এ সম্পর্কে একটু খোলাশা করে বলতে চাই। বিভিন্ন সময় যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে এসেছিলেন তাদের সঙ্গে অসংখ্যবার বসে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছি। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য পদ ফাঁকা রয়েছে। তাদেরকে বলেছিলাম- নিয়ম মেনেই আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য পদগুলোতে চাকরি দেন। বিগত উপাচার্য মিজান-স্বজল প্রশাসন কিন্তু কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে পারিনি। এজন্য সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান আপাতত ২০০টি পদে নিয়োগের জন্য সার্কুলার করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করোনা থাবার কারণে সেটি স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির কথা আসলে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিতে জানানো হয় যে, আপাতত যাতে কোনো নিয়োগ দেয়া না হয়। এই চিঠি পাওয়ার পর তিনি যে নিয়োগ দেননি এমনটা কিন্তু নয়। তিনি কিন্তু চিঠি পাওয়ার পরপরই নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা যেটি জানতে পেরেছি, চিঠি পাওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেনকে তিনি অ্যাডহকে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এটি তিনি মানবিক কারণেই দিয়েছিলেন। এই নিয়োগের কিন্তু আমরা বিরোধিতা না করে আমরা সবাই সাপোর্ট করেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, কিন্তু এই নিয়োগ তিনি কেন দিলেন, কী কারণে দিলেন সেটির ব্যাখ্যা কিন্তু আমরা করছি না। মিডিয়ার সামরেনও বিষয়টি আসছে না। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মিডিয়া শুধু মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সামনে টেনে নিয়ে আসছে। তবে আমার জানামতে, তিনি যাদেরকে এই নিয়োগগুলি দিয়ে গেছেন তারা একেবারেই মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই নিয়োগটা তিনি হয়তো আগেই দিতে পারতেন। কিন্তু হয়তোবা আগে দিলে তিনি এই চাপটি সামলাতে পারতেন না। একটি যেটি দিয়ে গেছেন হয়তো তার চোখের সামনে মানবিকতা ভেসে উঠেছে যে, এই ছেলেগুলোর যদি আমি কর্মের ব্যবস্থা না করে যাই তাহলে সারাজীবন আমি আমার নিজেকে দংশাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এই নিয়োগ দিয়েছেন তার ক্ষমতা রয়েছে বলেই। কেননা, ১৯৭৩ এর অ্যাক্ট অনুযায়ী, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকবেন তিনি ‘অল ইন অল’। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপাকে যে কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন। তার সেই একক ক্ষমতাবলেই তিনি যাওয়ার সময় এই নিয়োগটি মানবিতার দৃষ্টিকোণ থেকেই দিয়ে গেছেন।’
বর্তমান রেজিস্ট্রারের দ্বিমুখী নীতি সম্পর্কে এই নেতা বলেন, ‘এরআগে বিএনপি-জামায়াতের সময় বর্তমান যিনি রেজিস্ট্রার রয়েছেন তিনিই তখনও দায়িত্বে ছিলেন। রাতারাতি ৫৪৪ জনকে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে তার স্বাক্ষরেই চাকরি দিয়েছিলেন। গত ৪ মে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছিল। সেদিন তিনি শত বাধা উপেক্ষা করে সেই সিন্ডিকেট মিটিংয়ে গিয়েছিলেন। যদিও মিটিংটি আমার জানামতে হয়নি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের ছেলেদের যখন নিয়োগের প্রশ্ন আসলো তিনি তার মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে থাকলেন। দুই দিন পর তিনি ক্যাম্পাসে এসে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, তাতে আমরা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছি। অথচ এই রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম সদ্যবিদায়ী উপাচার্যকে এর আগে বলেছিলেন, আপনার বক্তব্য শুনলে মনে হয়, বঙ্গবন্ধু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন শিমুল। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.