নির্বাচন কমিশনের চিঠি সরকারের লেটেস্ট কৌশল : মির্জা ফখরুল

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: বিএনপিকে আলোচনায় বসতে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া চিঠিকে ক্ষমতাসীনদের ‘লেটেস্ট কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে এবার একটা খেলায় নেমেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই খেলাটা হচ্ছে, আমি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলব, ভোটের কথা বলব, ভোটও করব। কিন্তু আমার কাজটা আমি করে ফেলব। আমার মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করব। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, বিডিআর—সবকিছু আমার কথায় চলবে এবং আমি যা চাইব, সেইভাবেই করব।’
আজ শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের কাজী বশিরউদ্দিন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।
‘সরকার আবারও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের পাঁয়তারা শুরু করেছে’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার মধ্যে লেটেস্ট কৌশল হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের আমাদের (বিএনপি) একটা চিঠি দেওয়া। এটা নিয়ে আমি এখনই কথা বলতে চাই না। সোমবার আমাদের স্থায়ী কমিটির সভা আছে। সেই সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে এটুকু বলতে পারি, নির্বাচন কমিশনে কোনো ক্ষমতা আছে না কি। সে পারবে, এই প্রশাসনকে তার নিয়ন্ত্রণে নিতে?’
এ সময় দর্শকসারি থেকে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে কর্মীরা চিৎকার করলে, মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঠিক, ঠিক বলছেন।’

এ পর্যায়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন, চিঠি–টিঠি দিয়ে অযথা কেন আপনারা হয়রানি হচ্ছেন। আপনারা ভদ্রলোকের মতো থাকেন বেতন–টেতন নেন। ইভিএম চেয়েছিলেন, ইভিএম নিতে পারছেন না। আরও অন্যান্য কী আছে না আছে। অতীতের যে নির্বাচন কমিশন ছিল, তারা শুধু ট্রেনিংয়ের নাম করে কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছেন। আপনারাও দেখেন এ রকম কিছু আছে কি না, সেগুলো দেখেন। অযথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এসব কথা বলে নিজেদের খাটো করবেন না।’
‘সংকট একটাই’—এ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সেই সংকট হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারে কে থাকবে। নির্বাচনকালে যদি এই আওয়ামী লীগ থাকে, তাহলে এই নির্বাচন কোনো দিনই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারবে না—এটা প্রমাণিত। শুধু জাতীয় সংসদে নয়, স্থানীয় সরকারগুলোও। সুতরাং অযথা এসব না করে আসল জায়গায় আসেন। আসল জায়গাটা হচ্ছে, নির্বাচনের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। সেটা নিয়ে কাজ করুন, কথা বলুন, ঘোষণা দিন। তা না হলে অন্য কোনো কিছু এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোনো ভোটই হয়নি। ১৫৪ জনকে আগে ঘোষণা করে ফেলল। ঠিক একই কায়দায় ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট খালাস। আবার ওই পাঁয়তারা চলছে।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তখন অনেকে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে গণবাহিনী গঠন করেছিলেন। তাঁরা সেই সরকারের নির্যাতন, অন্যায়-অত্যাচার, দুর্নীতির কারণে তখন আওয়ামী লীগকে বয়কট করেছিল, আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তাদের (জাসদ) নির্মমভাবে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে যে র‍্যাব, ঠিক তখনকার সরকার রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিল। সেই রক্ষীবাহিনী তখন ৩০ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল। কেন ভিন্নমত, একমত নয়—সে জন্য। সিরাজ সিকদারকে পেছন থেকে গুলি করে পার্লামেন্টে তাদের নেতা জোর গলায় বলেছিলেন কোথায় সিরাজ সিকদার। তখনো সেই দাম্ভিকতা, আজকেও সেই একই দাম্ভিকতা।

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নাটক করেছে
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো সময়েই অন্যের অবদান স্বীকার করেনি। মুক্তিযুদ্ধকে তাদের একক অর্জন মনে করে। এ কারণে স্বাধীনতার পর প্রখ্যাত সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান তাঁর হলিডে পত্রিকায় শিরোনাম করেছিলেন, তাহলে দেশের সাড়ে ৬ কোটি মানুষ কি রাজাকার?
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সাহেব একটা কথা বলেছিলেন পল্টন ময়দানে। যখন তিনি রাজনীতি শুরু করলেন। পল্টনের জনসভায় বলেছিলেন যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করে নাই। আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই, এটাই সত্য।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা মুক্তিযুদ্ধ করেনি। অন্যের ঘাড়ের মধ্যে রাইফেল রেখে তারা মুক্তিযুদ্ধের নাটক করেছে।

মানুষ খেতে পায় না, তারা পাতালরেল করছে
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘খালি বলে আমরা এই উন্নয়ন করেছি। আমরা উন্নয়ন দেখতে পাই না, আমাদের চোখ অন্ধ। মাঝখানে আমি বরিশাল গিয়েছিলাম। বরিশাল থেকে আসার পথে পদ্মা সেতুর ওপরে রাস্তা অর্ধেক বন্ধ করে দিয়ে রিপেয়ার কাজ হচ্ছে। এক বছরও পার হয় নাই, অলরেডি রিপেয়ারিংয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। এই হচ্ছে তাদের উন্নয়নের নমুনা। ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ ৩০ হাজার কোটি টাকায় করেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ খেতে পায় না। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখবেন, মানুষ কীভাবে ন্যায্য মূলের চাল, ডাল, তেল কেনার লাইন দিচ্ছে। তারা পাতালরেল তৈরি করছে।’
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.