নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান: বিরোধীদের বিক্ষোভে উত্তাল ভেনেজুয়েলা

 

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নেমে এসেছে বিক্ষোভকারীরা। তারা পথে পথে সহিংস বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। তাদের দমন করতে মুহুর্মুহু টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। সংঘাতে চার জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় হাজার হাজার মানুষ মধ্য কারাকাসের রাস্তায় নেমে আসে। কেউ কেউ শহরের চারপাশের পাহাড়ি এলাকা কিংবা বস্তি থেকে কয়েক মাইল পথ হেঁটে রওয়ানা দেন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে।
রবিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেশটির নির্বাচন কমিশন নিকোলাস মাদুরোকে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী দাবির পরদিন এই বিক্ষোভ শুরু হয়। কারণ, দেশটির বিরোধী দল মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণাকে জালিয়াতি বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলছেন, বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস অন্তত ৭৩ দশমিক দুই শতাংশ ভোট পেয়ে নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপেও স্পষ্ট জয়ের আভাস ছিল গঞ্জালেসের।
গত ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট মাদুরো। তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশটির অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করে। যা নিয়ে দেশে অসন্তোষও তৈরি হয়। পরে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গঞ্জালেসের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো একত্রিত হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, এবার বিরোধী জোট বিজয়ী হবে। কিন্তু নির্বাচন কর্তৃপক্ষ মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করলে গঞ্জালেস তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর তার সমর্থকরা রাজপথে নেমে আসে।
ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভকারীরা যখন রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে যাচ্ছিল তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কারাকাসের রাস্তায় জলকামানসহ সামরিক বাহিনী এবং বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিতি ছিল। এ সময় তারা স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। সেই সঙ্গে সরকারের পতনেরও আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।
প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজগুলোতে দেখা যাচ্ছে, হাইওয়েতে টায়ার জ্বলছে এবং রাস্তায় বিপুলসংখ্যক মানুষ বিক্ষোভ করছে। তাদের নিবৃত করতে মোটরসাইকেল থেকে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পোস্টার ছিঁড়ে পুড়িয়ে ফেলে। রাস্তায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় টায়ার, গাড়ি এবং বিভিন্ন দ্রব্য। সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সশস্ত্র পুলিশ, সামরিক বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একই সময় তারা শহরের চারপাশের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
৪১ বছর বয়সি এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এটা ভয়াবহ জালিয়াতি! ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে গঞ্জালেস বিজয়ী হয়েছেন, কিন্তু তারা একই কাজ আবারও করল। আমাদের বিজয় কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা তরুণদের জন্য, আমাদের দেশের একটি উন্নত ভবিষ্যত্ চাই। তাই মাদুরোর বিদায় চাই। তিনি নির্বাচনে হেরেছেন, এখন তার থাকার কোনো অধিকার নেই। কারসাজি করে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ মাদুরোকে বিজয়ী বলে দাবি করেছে। ’
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অনেক অসন্তোষ ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছিল। মাদুরো দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও দেশে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রেসিডেন্ট শ্যাভেজ মারা যাওয়ার পর মাদুরোর নেতৃত্বে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক যুবক বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন চাই, আমরা একটি ভালো চাকরি চাই।’
এদিকে ঊর্ধ্বতন মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন যে, ঘোষিত ফলাফল দ্রুত গণনা এবং যথাযথভাবে যাচাই না করে যেভাবে ফলাফলে ঘোষণা করা হয়েছে তা মানুষের প্রকৃত ভোটের সঙ্গে বৈপরীত্য থাকতে পারে। এটিই আমাদের মূল উদ্বেগের জায়গা। তাই আমরা ভেনেজুয়েলার নির্বাচনি কর্তৃপক্ষকে প্রকৃত ডেটা প্রকাশ করতে বলেছি, যা মানুষের প্রদত্ত ভোটের প্রতিফলন ঘটায়।
তবে, ভেনিজুয়েলার প্রতি তাদের নিষেধাজ্ঞা নীতির ফলাফল কী হবে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) সোমবার ঘোষণা করেছে যে, ভেনেজুয়েলার এই ফলাফল নিয়ে স্থায়ী কাউন্সিলের বুধবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.