নিরাপদ সড়ক চাই!


ফিরোজ কবির: নিরাপদ সড়ক বাংলাদেশের সকল স্তরের জনসাধারণের একটি প্রাণের দাবি। এই দাবিতে কারও দ্বিমত নেই।সড়ক নিরাপদ হওয়া খুবই জরুরি। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না।

প্রতিদিনই সড়কে মানুষ মরছে। আসলে বহু বছর ধরে দেখছি নিরাপদ সড়কের জন্য হাজারও হুঙ্কার, আন্দোলন, ধর্মঘট, মিছিল, সমাবেশ কত কিছুই না হয়; সড়ক আর নিরাপদ হয় না।

আইন হয়, আইনের প্রয়োগ হয় না। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে? মনে প্রশ্ন জাগে, আদৌ কি সড়ক আমাদের জন্য নিরাপদ হবে? থামবে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল?

পথ যেন হয় শান্তির মৃত্যুর নয়’ এ স্লোগানে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) এর জন্ম আজ থেকে ২৭ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর।স্ত্রীকে হারিয়ে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন যখন শুরু করেছিলেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন। ওই বছর ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তিনি অনুধাবন করেছিলেন, দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য সবার আগে দরকার ব্যক্তিসচেতনতা।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে লাখে ১৫ দশমিক ৩ জন মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়।

আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা যাওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলন সুনির্দিষ্টভাবে সড়ক ব্যবস্থাপনার দুর্বল দিকগুলো দেখিয়ে দিয়েছিল।

শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের পর সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস এবং জাতীয় সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা-২০২০ গ্রহণসহ নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার।

এর মাধ্যমে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যদিও এ লক্ষ্য অর্জনে বড় কোনো অগ্রগতি নেই। এখনো প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহারে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সড়কে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি ভারতে। দেশটিতে লাখে ২২ দশমিক ৬ জনের মৃত্যু হয় সড়কে।

এছাড়া ভুটানে প্রতি লাখে ১৭ দশমিক ৪, নেপালে ১৫ দশমিক ৯, বাংলাদেশে ১৫ দশমিক ৩, আফগানিস্তানে ১৫ দশমিক ১, শ্রীলংকায় ১৪ দশমিক ৬ ও পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৩ জনের মৃত্যু হয় সড়কে।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর তথ্য অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন ১৮ জনের প্রাণহানি হচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এ সংখ্যা আরো বেশি। তাদের মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ ব্যক্তির প্রাণহানি হচ্ছে।

আর বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষ নিহত এবং ৩৫ হাজার আহত হয়। বলা বাহুল্য, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও পাওয়া যায় না। সব দুর্ঘটনা ও হতাহতের হিসাব থানায় লিপিবদ্ধ হয় না বা সংবাদপত্রেও আসে না। এ কারণেই এবিষয়ক পরিসংখ্যানে সংগঠনভেদে পার্থক্য দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনার অনেক কারণ রয়েছে।

এর মধ্যে অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং আইনের যথারীতি প্রয়োগ না করাই দুর্ঘটনার কারণ। সড়ক দুর্ঘটনার এ সবই প্রকৃত কারণ। বিভিন্ন সংগঠনের পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা ও গবেষণায় এই কারণগুলোই পাওয়া যায়।

২০১৮ সালে মন্ত্রীসভায় নিরাপদ সড়ক আইন ২০১৮ খসড়া অনুমাদন করেন । এই আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত বা প্রাণহানি ঘটালে চালকের সর্বউচ্চ ৫ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে । তবে যদি এই ধরণের মৃত্যু ইচ্ছাকৃত প্রমানিত হলে দন্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে তার বিচার হবে এবং সর্বউচ্চ মৃত্যুদন্ড হবে । এছাড়াও নির্ধারিত গতিসীমার , অতিরিক্ত গতি বা বেপরোয়াভাবে ঝাঁকিপূর্ণ ভাবে ওভারটেকিং বা ওভারলোডিং বা নিয়ন্তণহীনভাবে  গাড়ী চলানোর মাধ্যমে দুর্ঘটনা করে জীবন বা সম্পত্তির ক্ষতি করলে অনধিক তিন বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে ।

প্রতি প্রাণীকে মৃত্যুর সাধ গ্রহন করতে হবে । তার মানে এই নয় যে কেউ নিশ্চয়ই বলি হয়ে বা স্বাভাবিকভাবে মরতে চাই । সড়ক দুর্ঘটনা কথা শুনলেই আমাদের মনে কম্পনের সৃষ্টি হয় । অজানা একাটা ভয় আমাদের মনেকে ঘিরে ধরে । এই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন । আজ বাংলাদেশ প্রতিটি মানুষের একটাই দাবী স্বাভাবিক মৃত্যুর নিচ্ছয়তা চাই এবং নিরাপদ সড়ক চাই ।

সংবাদ প্রেরক: ফিরোজ কবির, লেখক- ব্যাংকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.