নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে : মির্জা ফখরুল

ঢাকা প্রতিনিধি: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার (২১ জুন) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিকতা: নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনো সংবিধান সম্মত’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সেমিনারের বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জাতির সামনে কোনো বিকল্প নাই। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে যেন আমরা প্রতিফলন ঘটাতে পারি, পুরণ করতে পারি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০০৬ সালে শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি (ওই বছরের) তিনি পার্লামেন্টে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যেরে একটা অংশ ছিলো এই কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট বিষয়ে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, পার্লামেন্টের প্রসিডিংকস থেকে নিয়ে আসা সেই বক্তব্য থেকে আমি কোট করে বলছি, ‘‘সাংবিধানিকভাবে অবগত রয়েছে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে জনগনের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ এটা তখন আমাদের সরকার ছিল। এটাতে আরও অনেকগুলো কথা বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালেও সংস্কারের কথা বলে শেখ হাসিনা কিন্তু এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকেই কার্যকরীর কথা বলেছেন। মান্না সাহেব (মাহমুদুর রহমান মান্না) কিছুক্ষণ আগে কথা বলেছেন যে, কোয়াকশন । আমরা একটা উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, আমরা কোয়াকশনে ঠিক বিশ্বাস করতাম না। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের দাবিগুলাকে আদায় করার চেষ্টা করি।’
নির্দলীয় সরকারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আজকে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে যে তারা পরিবর্তন চায় এবং তারা এই সরকারকে সরাতে চায়। আমাদের দাবির মধ্যে একটা দাবি পরিষ্কার আছে। পরিষ্কার করে বললে যে, শেখ হাসিনা থাকলে কিন্তু নির্বাচনে যাবেন না- এটা সাধারণ মানুষের কথা এবং সে জন্য আমরা খুব পরিষ্কার বলছি যে, এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় সবাই একমত যে, আমরা এই সরকারের পদত্যাগ চাই, আমরা এই সংসদের বিলুপ্তি চাই এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার যে নামেই আমরা বলি না কেনো সেই সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচটা নির্বাচন করেছি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে, সেই নির্বাচনগুলোকে কিন্তু আমাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আজকে আলোচনায় পরিষ্কার হয়ে এসেছে যে, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুচিন্তিতভাবে- এখানে সিরাজুল ইসলাম সাহেব বলেছেন, আসলে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করবার জন্যই ফিফটিনথ অ্যামেন্ডমেন্ট নিয়ে এসেছে একটু ভিন্ন ভাবে, ভিন্ন মোড়কে। আজকে সেই ইলেকশনগুলো মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।’
 মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আমরা এই লড়াই-সংগ্রামটা করছি। আমরা একটা জায়গায় বলতে ঐক্যমত হবো যে, আমাদের একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনোভাবে জনগণের ক্ষমতায় যাওয়ার উপায় নাই। জনগণের প্রতিনিধিদের যদি ক্ষমতায় যেতে হয় তাহলে অবশ্যই সেটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে এবং সেটা জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে এই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য। এটাই হচ্ছে আমাদের মূল কথা।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ। এতে বক্তব্য দেন জাতীয় পাটির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম, গণফোরামের আবু সাইয়িদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমূখ।
সেমিনারে অংশ নেন বিএনপির মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, এ জে মোহাম্মদ আলী, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, মাহবুবু উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো: মাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.