নিম্নমানের চাল নেয়নি: আড়াই মাস ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দর থেকে চাল নিয়ে আসা এমভি ড্রাগন জাহাজ ফিরে যাওয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সহসাই কাটছে না। ল্যাব পরীক্ষায় ‘নিম্নমান’ নিশ্চিত হওয়ার পর চালের ওই চালানটি নিতে অস্বীকৃতি জানায় খাদ্য অধিদফতর।
এ ঘটনায় গত ৮ আগস্ট জাহাজটিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পাঠানো হয়। সেই থেকে গত আড়াই মাস জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে।
নিম্নমানের চাল নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় জাহাজটি ফিরে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছে স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ট্রাইটন শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৌমেন চক্রবর্তী।
এ ঘটনায় সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছে জাহাজটির মালিক পক্ষ। আদালতে মামলা করায় এই নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা আরও বেড়েছে। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে না জাহাজটি।
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে স্থানীয় শিপিং এজেন্ট সৌমেন চক্রবর্তী বিটিসি নিউজকে বলেন, গত সপ্তাহে জাহাজটির মালিক পক্ষ চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের (নাফেদ) বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে।
দীর্ঘদিন জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে বসে থাকায় ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সুরাহা না হওয়ায় মালিকপক্ষ নাফেদের বিরুদ্ধে মামলাটি করে। ওই মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জিটুজির আওতায় ভারতের ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল সরবরাহের চুক্তি হয়। নাফেদ থেকে প্রথম দফায় কনটেইনারে ৫৩৪ টন চাল পাঠানোর পর গত জুলাইয়ের শেষদিকে দ্বিতীয় দফায় এমভি ড্রাগন জাহাজে প্রতিষ্ঠানটি ১৯ হাজার ২০০ টন চাল চট্টগ্রামে পাঠায়। প্রতি টন চাল ৪০৭ ডলারে কেনা হয়।
গত ২২ জুলাই জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসার পর চালের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় সরকারি খাদ্য বিভাগের ল্যাবে। ল্যাব প্রতিবেদন আসার পর বন্দরের এক নম্বর জেটিতে জাহাজটি ভেড়ানোর পর চাল খালাস শুরু হয়। এরই মধ্যে তিন হাজার ২৮৯ টন চাল ছাড় করে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সরকারি গুদামে পাঠানোর পর দেখা যায় চালগুলো নিম্নমানের।
বর্তমানে জাহাজটিতে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৫ কোটি টাকারও বেশি দামের চাল রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে দ্বিতীয় দফায় জাহাজ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পুনরায় ল্যাবে পাঠায় খাদ্য অধিদফতর। ল্যাব পরীক্ষায় নিম্নমান আসায় চালগুলো নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এরপর গত ৮ আগস্ট বন্দরের বহির্নোঙরে পাঠানো হয় জাহাজটি। ওইদিন থেকে এখন পর্যন্ত জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। চাল ফেরত গেলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি জাহাজটিকে বহির্নোঙরে বসিয়ে যেকোনও মূল্যে চাল গ্রহণে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) রায়হানুল কবির বিটিসি নিউজকে বলেন, চালানটিতে বিও (বিল অব এন্ট্রি) স্পেসিফেকশন বহির্ভূত চাল আসায় সেগুলো আমরা গ্রহণ করিনি। চালগুলো গ্রহণ করা হবে না বিষয়টি ভারতীয় সরবরাহকারী নাফেদকে জানিয়েও দেওয়া হয়। তারপরও জাহাজটি কেন চাল নিয়ে ভারতে ফিরে যায়নি, সেটা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট ভালো বলতে পারবে। বিস্তারিত জানার জন্য তিনি চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদেরের অফিসে গেলে তিনি ঢাকায় ট্রেনিংয়ে থাকায় তার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় আছেন জানিয়ে এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের চলাচল ও সংরক্ষণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুনীল দত্তের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
সুনীল দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘জাহাজটি কেন যায়নি সেটি আমরা বলতে পারবো না। খাদ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সেই চাল গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ছাড়পত্রও দিয়েছে। ফলে জাহাজটির চলে যেতে কোনও বাধা ছিল না। এখন তারা জাহাজ ফেরত নিয়েছে নাকি সাগরে বসিয়ে রেখেছে, সেটি তাদের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, তারা নানা কৌশলে নষ্ট চাল আমাদের গছানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিও স্পেসিফেকেশন থেকে নিম্নমানের চাল গ্রহণের কোনও সুযোগ নেই। শুনেছি, দীর্ঘদিন জাহাজটি বসিয়ে রাখায় জাহাজের মালিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাফেদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। তবে এই মামলার সঙ্গে আমাদের কোনও সর্ম্পক নেই। দীর্ঘদিন অলস বসিয়ে রাখায় ভাড়া নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় জাহাজটির মালিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাফেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে শুনেছি।

জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ট্রাইটন শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৌমেন চক্রবর্তী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা সরবরাহকারীও না, সংগ্রহকারীও না। আমরা জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট। বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দিয়েছে চাল গ্রহণ করা হবে না। মামলাটি হয়েছে দীর্ঘদিন জাহাজটি অলস বসিয়ে রাখার কারণে ক্ষতিপূরণ নিয়ে জটিলতা নিয়ে।’

খাদ্য অধিদফতর থেকে চালগুলো গ্রহণ করা হবে না জানানোর পরও জাহাজটি বসিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি জাহাজের সব চাল খারাপ না। সেক্ষেত্রে ভালো চাল গ্রহণ করার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে  যাচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান স..জিয়াউর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.