নাসিম ও আবদুল্লাহর মৃত্যুতে সংসদে আবেগতাড়িত হয়ে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: দলীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম ও শেখ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে সংসদে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক জীবনে চলার পথ সহজ ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বারবার বাধা পেয়েছি, কিন্তু যে কজন মানুষ সব সময় খুব পাশে থেকেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদের দুজন মানুষকে এক সঙ্গে হারালাম, এটা সবচেয়ে কষ্টের।’ 

আজ রবিবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদের মুলতবি অধিবেশন শুরু হয়। এতে অধিবেশনে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন মতিয়া চৌধুরী, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, হাবিবে মিল্লাত ও মৃণাল কান্তি দাস।

মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুজনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।

সংসদীয় রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশনের শুরুতে সম্পূরক কার্যসূচি শোক প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন স্পিকার। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন। এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর জীবনবৃত্তান্তসহ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এরপর মোহাম্মদ নাসিমের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা শুরু হয়।

এ সময় বিভিন্ন শাসনামলে মোহাম্মদ নাসিমের ওপরে নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব দুঃখজনক… আসলে আমার জন্য খুব কষ্টকর হচ্ছে বলতে, এভাবে সবাইকে হারানো খুবই দুঃখজনক।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিমের পিতা জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর কথা স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন দেশে ফিরি মোহাম্মদ নাসিম একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন একটা প্রচেষ্টা ছিল এ শহীদ পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে নিয়ে আসা। আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং শক্তিশালী করা। এ কাজ করতে গিয়ে নাসিম ভাইকে সব সময় আমার পাশে পেয়েছি।’

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি (দেশে ফিরে) আসার পর থেকেই আবদুল্লাহ সাহেবকে পেয়েছি, মণি (শেখ ফজলুল হক মণি) ভাইয়ের সঙ্গে তিনি ছিলেন। আমার নির্বাচন পরিচালনাই শুধু নয়, আমার নির্বাচনী এলাকার সম্পূর্ণ দেখা শোনা তাকে করতে হতো। রাজনীতিতে অনেক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে গোপালগঞ্জবাসী। যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে, সেটা জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া; তাদের যেন একটা লক্ষ্যই ছিল গোপালগঞ্জের ওপরে হাত দেওয়ার চেষ্টা। আমাদের বহু নেতা–কর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছে। সেই দুঃসময়গুলোতে সংগঠনকে ধরে রাখা, সংগঠনের নেতা–কর্মীদের দিকে নজর দেওয়া, এ কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন আবদুল্লাহ সাহেব।’

শেখ আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। রাজনীতিতে তার ত্যাগ বেশ আলোচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন শেখ আবদুল্লাহ। কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.