নামায ও রোযা সম্পর্কে হাদিস

১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, বান্দার ঈমান ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল নামায ত্যাগ করা। -আহমদ।
২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল হল ওয়াক্তমত নামায় আদায় করা।- বোখারী।৩। সালমান ফারসী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে, ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে চল্লিশ দিন যাবত প্রথম তাকবীরের সাথে জামাতে নামায পড়বে, তার জন্য দু’টি পরওয়ানা লেখা হয়, একটি জাহান্নম থেকে অপরটি মোনাফেকী থেকে মুক্তির।- তিরমিযী।
৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযূ করে নামায পড়ার আশায় মসজিদের দিকে যায়, অথচ মসজিদে গিয়ে দেখে জামাত শেষ, তবু সে জামাতের সওয়াব পাবে।- আবু দাউদ।
৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যতক্ষণ মানুষ নামাষের প্রতীক্ষায় থাকে, ততক্ষণ নামাযের সওয়াব লাভ করতে থাকে।- বোখারী, মুসলিম।
৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যারা রাতের অন্ধকারে বেশি বেশি মসজিদে গমন করে, তাদের কেয়ামতের দিন পূর্ণ নূরের সূসংবাদ দান কর।- ইবনে মাজা।
৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন বান্দার আ’মলসমূহ থেকে সর্বপ্রথম ফরয নামাযসের হিসাব নেওয়া হবে।- তিরমিযী।
৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে নামাযের কেরাআত লম্বা তাই শ্রেষ্ঠ নামায।- বায়হাকী।
৯। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শীতের সময় নামায আদায় করতে অভ্যস্ত, সে জান্নতী।- বোখারী।
১০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি জামাতে নামাযের মাত্র এক রাকাত পেলেই সে জামাতের সওয়াব পেয়েছে।- বোখারী।
১১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আছরের নামায ছেড়ে দিয়েছে, তার সব নেক আ’মল বরবাদ হয়ে গেছে।- বোখারী।
১২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নামায ভূলে যায়, স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করবে, তা না করলে এ গুনাহ মাফ করাবার কোন উপায় নেই।- বোখারী।
১৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, লোকেরা যদি ফজর ও এশার নামায জামাতে পড়ার ফযীলত জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাযদ্বয়ের জামাতে হাজির হত।- বোখারী।
১৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।- বোখারী।
১৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সাত প্রকার মানুষকে আল্লাহ পাক ছায়া দান করবেন, যার মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে, যাদের মন নামাযের ওয়াক্তের সাথে লটকে থাকে, কখন নামাযের ওয়াক্ত হবে এবং মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করবে।- বোখারী।
১৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল বিকাল মসজিদে যায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য প্রতি সকালে বিকালে ওই পরিশ্রমের প্রতিফলস্বরূপ বেহেশতে মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরী করে রাখেন।- বোখারী।
১৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ইমাম আল-হামদু সূরা শেষ করে যখন আমীন বলবে, তুমিও তখন আমীন বলো, এ সময় ফেরেশতাগণ আমীন বলে থাকেন। যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে হবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।- বোখারী।
১৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ পাক সাত অঙ্গের উপর সেজদা করতে আদেশ করেছেন। দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পায়ের সম্মুখভাগ এবং কপালের সঙ্গে নাকেও ইশারা করে দেখিয়েছেন। আরো আদেশ করেছেন, কাপড় ও মাথার চুল টেনে রাখবে না ।- বোখারী।
১৯। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমরা সুন্দররূপে স্থিরতার সাথে সেজদা করো। সেজদার সময় দুই হাত কুকুরের ন্যায় যমীনের উপর বিছিয়ে দিও না ।- বোখারী।
২০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, সে কি ভয়ংকর যে ইমামের আগে মাথা উঠায়? আল্লাহ তার মাথা গাধার মাথার ন্যায় করে দিতে পারেন।- বোখারী।
২১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যারা কাতারের ডান দিকে থাকেন, নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতগণ তাদের উপর দরূদ পাঠান।-আবু দাউদ।
২২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের প্রতি নির্ধারিত পাঁচটি নামায পড়, এতে তোমরা তোমাদের রবের বেহেশতে প্রবেশ করবে।- আহমদ, তিরমিযী।
২৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের সন্তানদের নামাযের জন্য আদেশ করবে যখন তাদের বয়স সাত বছরে পৌঁছবে, আর নামাযের জন্য পিটাবে যখন বয়স দশ বছর হবে।- আবু দাউদ।
২৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আমাদের ও মোনাফেকদের মাঝে যে পার্থক্য রয়েছে তা হচ্ছে নামায। সুতরাং যে নামায ত্যাগ করবে সে প্রকাশ্য কাফের হয়ে যাবে।- আহ্মদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজা।
২৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যার আছরের নামায ছুটে গেল, তার পরিবার ও সব ধন-সম্পদ যেন লুট হয়ে গেল।- তিরমিযী।
২৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে এশার নামায জামাতের সাথে পড়েছে, সে যেন অর্ধরাত নামায পড়েছে, আর যে ফজরের নামায জামাতে পড়েছে সে যেন পূর্ণ রাত নামায পড়েছে।- ইবনে মাজা।
২৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে সকালে ফজরের নামাযের দিকে গেল সে ঈমানের পাতাকা আর যে সকালে নামায না পড়ে বাজারে গের সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল।- ইবনে মাজা।
২৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তির নামায ঠিক থাকবে, কেয়ামতের দিন তার সব আমলই ঠিক থাকবে।- বোখারী।
২৯। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ঘরে নামায পড়ে ঘরকেও ফযীলত দান কর।- বোখারী।
৩০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে লোক রুকু সেজদায় পিঠ সোজা করে না, তার নামায পূর্ণ হয় না।- বোখারী।
৩১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, একামতের সময় আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। তখন সকর দোয়াকরীর দোয়াই কবুল করা হয়।- মেশকাত।
৩২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে পবিত্রতা হাসিল করে এবং সুগন্ধ ব্যবহার করে মসজিদে যায়, আর কাউকে কষ্ট না দিয়ে যেখানে জায়গা পায় সেখানেই বসে যায়, ভাগ্যে লেখা পরিমাণ নামায পড়ে, চুপ করে ইমামের খোতবা শোনে, সে জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ কর দেয়া হয়। বোখারী।
৩৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়া উত্তম। বসে পড়লে অর্ধেক সওয়াব আর শুয়ে পড়লে বসে পড়ার অর্ধেক সওয়াব।- বোখারী।
৩৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রথমতঃ নামায দাঁড়িয়ে পড়বে আর সম্ভব না হলে বসে পড়বে, তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে শোয়া অবস্থায় পড়বে।- বোখারী।
৩৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ও প্রিয় নামায হল দাউদ (আঃ)- এর নামায। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, রাতের তৃতীয়াংশে নামায পড়তেন এবং পুনরায় ষষ্ঠাংশে ঘুমাতেন।-বোখারী।
৩৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রত্যেক রাতের যখন এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আল্লাহ পাক দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বান্দাকে আহবান করে বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব।- বোখারী।
৩৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, নামাযের মধ্যে ইমামকে কোন ঘটনায় সতর্ক করা আবশ্যক হলে পুরুষগণ সুবহানাল্লাহ বলবে।- বোখারী।
৩৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ নামাযে দাঁড়ালে শয়তান এসে নানা প্রকার বাধা সৃষ্টি করে, ফলে নামাযী কত রাকাত পড়েছে তা ভূলে যায়। কেউ এ অবস্থার সম্মুণীন হলে শেষ বৈঠকে দুটি সেজদা করবে।- বোখারী।
৩৯। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তা’আলা মুসাফির থেকে চিরতরে অর্ধেক নামায উঠিয়ে দিয়েছেন।- আবু দাউদ, তিরমিযী।
৪০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ফরয নামাযের পরে রাতের নামাযই শ্রেষ্ঠ।- মুসলিম।
রোযা
১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয় না, ক) ইফতারের সময় রোযাদারের দোয়া,
খ) ন্যায়বিচারক বাদশাহর দোয়া,
গ) মজলুমের দোয়া।- আহমদ।
২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রোযা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ পর্যন্ত (মিথ্যা ও গীবত দ্বারা) তা ফেড়ে না ফেলে।- নাসাঈ।
৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তোমরা এমন একটি মাস পেয়েছ, যাতে এমন এক রজনী রয়েছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম।
৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ক্বদরের রাত্রে জিব্রাঈল (আঃ) ফেরেশতাদের এক জামাত নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায় যারা আল্লাহর যিকির এবং বিভিন্ন এবাদতে রত থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।- রায়হাকী।
৫। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযানের শেষ দশ দিনের বিজোড় তারিখগুলোতে তোমরা শবে ক্বদর অনুসন্ধান কর। (বোখারী, হাদিস নং ১৮৯০)
৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, এতেকাফকারী সকল পাপ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য এতবেশী নেকী লেখা হয় যেন সে সর্বপ্রকার সৎকাজ করেছে।- মেশকাত।
৭। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন রমযান মাস আসে তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানগুলোকে। (বোখারী-হাদিস নং ১৭৭৮,মুসলিম শরীফ-২৩৬২)
৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে, তন্মধ্যে একটির নাম রাইয়ান, রোযাদাররা ব্যতীত এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।- (বোখারী হাদিস নং ১৭৭৫)
৯। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করা হবে।- (বোখারী, হাদিস নং -১৭৮০)
১০। আমর ইবনুল আনাস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আমাদের রোযা ও ইহুদী খৃষ্টানদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হল সেহ্রী খাওয়া।- মুসলিম।
১১। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে, কেননা তাতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা হল পবিত্রকারী। – আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজা।
১২। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করিয়েছে অথবা কোন গাজীকে জেহাদের সামগ্রী দান করেছে, তার জন্যও অনুরূপ সওয়াব রয়েছে।- তিরমিযী, নাসাঈ।
১৩। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং মিথ্যাচার ছাড়ে নাই, তার রোযা রেখে খানপিনা ছেড়ে দেওয়ায় আল্লাহর কোন কাজ নাই।- (বোখারী,হাদিস নং ১৭৮২)
১৪। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে রোযা অবস্থায় ভুলে কিছু পানাহার করেছে, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে, কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন পান করিয়েছেন।- (বোখারী,হাদিস নং ১৮০৯)
১৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন রোযা আল্লাহর নিকট রোযাদারের জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে পরওয়ারদেগার, আমি দিনের বেয়ায় তাকে পানাহার ও প্রকৃত্তির কামনা বাসনা থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। অতএব সুপারিশ কবুল করা হবে।- বায়হাকী।
১৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযান মাসের শেষ রাতে তাঁর উম্মতকে মাফ করা হয়।- আহমদ।
১৭। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তিন জিনিস রোযাদারের রোযা নষ্ট করে না, শিঙ্গা লওয়া, অনিচ্ছাকৃত বমি এবং স্বপ্নদোষ।- তিরমিযী।
১৮। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যদি কেউ সফরে রোযা রাখতে চাও তা হলে রাখতে পার। আর চাইলে নাও রাখতে পার।- (বোখারী, হাদিস নং ১৮১৯)
১৯। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে মরে গেছে আর তার ফরয রোযা কাজা রয়েছে, ওলী তার পক্ষে রোযা রাখবে।-(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৮)
২০। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে রমযানের রোযা মাথায় রেখে মৃত্যুবরণ করেছে, তার পক্ষ থকে প্রত্যক দিনের পরিবর্তে যেন একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো হয়।- তিরমিযী।
২১। হযরত আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযানের রোযা এবং পরে শাওয়ালের ছয় দিন রোযা রেখেছে, এটা তার পূর্ণ বছর রোযা রাখার সমনাব।- মুসলিম, হাদিস নং ২৬২৫)
২২। হযরত আবু সাঈদ খুদরী(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে আল্লাহর ওয়াস্তে একটি রোযা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার চেহারা দোযখের আগুন থেকে সত্তর বছরের পথ দূরে রাখবেন। – (মুসলিম, হাদিস নং ২৫৭৮)
২৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখে, আল্লাহ্ তার ও দোযখের মধ্যখানে একটি পরিখা সৃষ্টি করেন, যার এক পাড় থেকে অন্য পাড়ের দূরত্ব আসমান যমীনের মধ্যেকার দূরত্বেও সমান।- তিরমিযী।
২৪। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিসের যাকাত রয়েছে এবং শরীরের যাকাত হল রোযা।- ইবনে মাজা।
২৫। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রোযা সবরের অর্ধেক এবং সবর ইসলামের অর্ধেক।
২৬। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, শবে কদর তালাশ করবে রমযানের নয় রাত অথবা সাত রাত বাকি থাকতে। অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে, অথবা, তিন রাত বাকি থাকতে।- তিরমিযী।
২৭। হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট জিজ্ঞাসা করেন, যদি আমি বুঝতে পারি, শবে কদর কোন তারিখে, তখন আমি কি করব? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, তুমি বলবে, ইয়া আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা ভালবাস, অতএব আমাকে ক্ষমা কর।- আহমদ ইবনে মাজা, তিরমিযী।
২৮। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, রমযান মাসের রোযা ওমরা হজ্জের সমান।- বোখারী, মুসলিম।
২৯। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমযানের রাতে তার বিশেষ (তারাবীহ) নামায ঈমানী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সওয়াবের আশায় আদায় করবে,তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে।-(বোখারী, হাদিস নং ১৮৮৩)
৩০নং হাদিস থেকে ৪৯ নং হাদিস বোখারী শরিফ হতে উদ্বৃত
৩০। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত নবী করীম (স)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা রমযানের চাঁদ দেখলে রোযা রাখ এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখলে ইফতার কর। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তা হলে (ত্রিশ দিন) হিসাব কর। (বোখারী, হাদিস নং ১৭৭৯)
৩১। হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, যে ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় শবে কদরে নামায পড়বে এবং রমযানের রোযা রাখবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বোখারী, হাদিস নং ১৮৮৭)
৩২। হযরত আবূ বাকরা (রা) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিনা করেন, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, এমন দু’টি মাস আছে যার উভয়টিই ঘাটতি অর্থাৎ উনত্রিশ দিনে হয় না। আর তা হল ঈদের দু’টি মাস রমযান ও যিলহজ্জ। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯১)
৩৩। হযরত আবূ হোরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, তোমাদের কেউ রমযানের একদিন বা দু’দিন পূর্বে রোযা রাখবে না। তবে কেউ প্রতিমাসে এ তারিখে রোযা রাখতে অভ্যস্ত হলে তবে রাখতে পার। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৩)
৩৪। হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বাড়ীতে পরিবার-পরিজনের সাথে সেহরী খেতাম। সেহরী খাওয়ার পর হযরত নবী করীম (স)Ñ এর সাথে ফজরের নামায পড়ার জন্য তাড়াহুড়া করে খেতাম। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৮)
৩৫। হযরত যায়িদ বিন সাবেত (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন আমরা হযরত নবী করীম (স)- এর সাথে সেহরী খেয়েছি। তারপর তিনি নামায পড়তে দাঁড়িয়েছেন। বর্ননাকারী বলেন, আমি যায়েদ ইবনে সাবেত (রা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সেহরী ও আযানের মাঝখানে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার মত সময়ের ব্যবধান ছিল। -(বোখারী, হাদিস নং ১৭৯৯)
৩৬। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও। কেননা সেহরী খাওয়ায় বরকত লাভ হয়। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০১)
৩৭। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেছেন রোযা অবস্থান হযরত নবী করীম (স) তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু দিতেন, একথা বলে তিনি হেসে দেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৫)
৩৮। হযরত আবদুর রহমান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি মারওয়ানকে জানিয়ে দেন, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ও উম্মে সালামা (রা) তাঁকে বলেছেন, হযরত নবী করীম (স) রাত্রে স্ত্রী সহবাসজনিত নাপাকী নিয়ে নিদ্রা যেতেন এবং এ অবস্থায়ই ফজরের নামাযের সময় হয়ে যেত। তিনি গোসল করতেন এবং নিয়ত করে রোযা রাখতেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৩)
৩৯। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত, রমযান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়াই হযরত নবী করীম (স)- এর ফরয গোসলের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় ফজরের ওয়াক্ত হয়ে আসত। তিনি গোসল করতেন এবং রোযার নিয়ত করতেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৮)
৪০। হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, রোযাদার যদি ভূল করে কিছু খায় বা পান করে, তা হলে সে যেন রোযা পূর্ন করে। কেননা আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় সে পানাহার করেছেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮০৯)
৪১। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) এহ্রাম এবং রোযা অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়েছেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮১৪)
৪২। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন হামযা ইবনে আমরুল আসলামী (রা) অধিক মাত্রায় রোযা রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি হযরত নবী করীম (স)- কে বললেন, আমি সফরেও রোযা রেখে থাকি। হযরত নবী করীম (স) বললেন, সফর অবস্থায় তুমি ইচ্ছা করলে রোযা রাখতে পার নাও রাখতে পার। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮১৯)
৪৩। হযরত আবূ সালামা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা)- কে বলতে শুনেছি, আমার উপর রমযানের কাযা রোযা থাকত, কিন্তু শাবান মাস আসার পূর্বে আমি তা আদায় করতে পারতাম না। ইয়াহইয়া বলেন, হযরত নবী করীম (স)- এর খেদমতে অধিক ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি কাযা রোযা আদায়ের অবকাশ পেতেন না। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৬)
৪৪। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, এটা কি ঠিক নয় যে, হায়েয শুরু হলে মেয়েরা নামায পড়তে বা রোযা রাখতে পারে? আর এও তাদের দ্বীনের কমতি বা লোকসান। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৭)
৪৫। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত নবী করীম (স) বলেছেন, মৃত ব্যক্তির উপর রোযার কাযা থাকলে মৃতের ওয়ারিশগণ তার পক্ষ থেকে তা আদয় করবে। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮২৮)
৪৬। হযরত আবূ হোরায়ারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমার পরম বন্ধু হযরত নবী করীম (স) আমাকে তিনটি বিষয়ের অসিয়ত করে গেছেন। (১)আমি যেন প্রতি মাসে (১৩, ১৪, ১৫ তারিখে) তিনটি রোযা রাখি, (২) চাশতের সময় দু’রাকআত নামায আদায় করি, (৩) রাত্রে নিদ্রা খাওয়ার আগেই যেন বেতেরের নামায আদায় করি। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৫৭)
৪৭। হযরত আবূ হোরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত রাসূলুল্লাহ (স)- কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যেন কখনও শুধু জুমআর দিনে রোযা না রাখে। তবে জুমআর আগের কিংবা পরের দিনও যোন রোযা রাখে। -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৬২)
৪৮। হযরত আলকামা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা)- কে জিজ্ঞেস করলাম, হযরত নবী করীম (স) রোযার জন্য কোন বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করতেন কি? তিনি বললেন না। তাঁর আমল ছিল স্থায়ী। হযরত নবী করীম (স)- এর মত শক্তি সামর্থ রাখে তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে? -(বোখারী, হাদিস নং ১৮৬৪)
৪৯। হযরত হেশাম বিন ওরওয়া (রা) কর্তৃক বর্ণিত, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে রোযা রাখতেন এবং ওরওয়াও এ দিনগুলোতে রোযা রাখতেন। -(বোখারী, হাদিস নং ১২৫০)। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.