নানা অপকর্মের হোতা কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল অস্ত্র ও মাদক মামলায় জেলে, এলাকায় স্বস্তি

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি:  নানা অপকর্মের হোতা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেনকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় অবশেষে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দায়ের করা পৃথক দুটি মামলার রায়ে আদালত তাকে ১৭ বছরের সাজা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কামালের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ইয়াবা সেবন, সুদ, ঘুষ, দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী কেলেংকারী, নির্বাচন কর্মকর্তাকে হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। কামাল জেলা হাজতে থাকায় স্বস্তি ফিরেছে এলাকায়। এলাকাবাসী অভিযুক্ত কামাল ও তার সহযোগীদের বিচার দাবী করেছে।
খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের হাজী বজলুর রহমানের ছেলে কামাল হোসেন ২০১০ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই তিনি নানা অনিয়ম, সাধারণ মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার, সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে অসদাচরন, এলাকায় মাদকের আখড়া বসানো, মাদক সেবন, সুদ, ঘুষ, দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অপকর্ম পাকাপোক্ত ও মানুষকে জিম্মি করতে গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেই তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলতে থাকেন। বাহিনী গঠন করে এলাকার মানুষকে জিম্মি করে নানা অপকর্ম করতে থাকেন। কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলে কিশোর গ্যাং-এর সদস্যদের দিয়ে হুমকি দেয়া হতো। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় বটতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাব উল্যাহর বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এমনকি তার ব্যবহৃত টয়লেট পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলা হয়। তাকে নানা ভাবে হয়রানি ও কয়েক বার কিশোর গ্যাং দিয়ে তাঁর উপর হামলার ঘটনাও ঘটায় কামাল। এ ঘটনায় কামালের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মামলা করলেও ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে কামাল সে সময় নিস্তার পায়। বর্তমানেও ওই মামলা চলমান রয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতিকে ভোট করার সময় কেন্দ্র দখলে বাঁধা দেওয়ায় ও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কামাল নির্বাচন অফিসারকে হুমকি দেয়। এমন অভিযোগে চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও তাকে বরখাস্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ক্ষমা চেয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পায় কামাল। তার অসচাদনের কারণে ২০১৬ সালের নির্বাচনে জনগণ তাকে প্রত্যাক্ষাণ করলে নির্বাচনে চরম ভাবে পরাজিত হলেও দৌরাত্ম কমেনি কামালের। ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃত হতে থাকে তার অপকর্ম। প্রকাশ্যে নেশা করা, পরনারীর প্রতি আসক্তিও বেড়ে যায় তার। প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে অনৈকিত কাজ করা কালে ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি রাতে দারোগাপুকুর পাড় এলাকায় কামালকে ঘরের ভেতর আটক করে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার কাছে থাকা অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করলে আবুল কালাম নামের একজন গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ৫ জন আহত হয়। দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবুল কালামের মৃত্যু হয়। নিহত আবুল কালাম কুতুবপুর ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের আব্দুস  সোবহানের ছেলে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।
২০১৯ সালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কামাল  ও জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী খালাসি সুমনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমান গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে  বেগমগঞ্জ মডেল থানায় পৃথক মামলা দায়ের করে গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার পরবর্তীতে কামাল জামিনে থেকে গত বছর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
মামলার তদন্ত কর্মর্কতা আসামীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের পর স্বাক্ষী প্রমাণ হাজিরাসহ বিচারকার্যও সম্পন্ন হয়। ২৩ জানুয়ারী নোয়াখালী জজ আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মাসফিকুল হক আসামি কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন। রায়ের পর তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। অপর আসামী খালাসি সুমন পালাতক থাকলেও তিনিও একই রায়ে দন্ডিত।
অপরদিকে ২০২২ সালেও কামাল হোসেন পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ইউনিয়নবাসীর প্রতি জুলুম নির্যাতন শুরু করেছেন। হোলডিং টেক্সের নামে প্রতিটি বাড়ি ঘরে থেকে এবং নতুন ভোটার হওয়ার সময় কাগজপত্র সত্যায়িত করার নামে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অংকের টাকা। কামাল তার ভাগিনা সুজন ও পিএস সোহাগের নেতৃত্বে একাধিক বাহিনীর মাধ্যমে এলাকায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসা করিয়ে থাকে। যা ওপেন সিক্রিট। মামদকসহ কেউ কারবারি গ্রেফতার করে তাদের ছাড়িতে নিতে কামাল তদরিব করারও অভিযোগ রয়েছে।
কামাল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাঁধা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। কাজিরহাটে সরকারী লোকজন খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে কামাল দোকানদার থেকে মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে খাল দখল মুক্ত করতে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অস্ত্র ও মাদক মামলায় কামাল হোসেনকে আদালত জেল হাজতে পাঠানোয় খুশি এলাকাবাসী। স্থানীয়রা কামাল ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিচার ও কামালকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিস্কারের দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্ধা নাম প্রকাশ করা শর্তে বিটিসি নিউজকে জানান, আমরা কামাল চেয়ারম্যানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। আমরা চাই কামালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
অভিযুক্ত কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জেল হাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি বিটিসি নিউজকে জানান, কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, হামলা, ভাংচুর, হুমকি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে সবগুলো মামলায় কামাল জামিনে আছে।
এ ব্যাপারে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক নাজিবুল হায়দার ও বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত বিটিসি নিউজকে জানান, যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অবর্তমানে প্যানেল চেয়ারম্যান-০১ দায়ীত্ব পালন করার বিধান ইউনিয়ন পরিষদের গঠনতন্ত্রেই বলা আছে। আমরা আদালতের নির্দেশনা মতেই পরবর্তি প্রদক্ষেপ গ্রহন করবো।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি মোরশেদ আলম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.