নানান সংকটে রাজশাহী অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে তরমুজ চাষ!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর ক্ষেতে এবছর তরমুজ নেই। কিন্তু ফল বাজারে থরে থরে সাজানো রসালো তরমুজ। রকমভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়। সপ্তাখানেক আগেও প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় তরমুজ বিক্রি হয়েছে। কৃষি দপ্তর বলছে, একসময় বরেন্দ্রখ্যাত এ অঞ্চলে তরমুজের ব্যাপক চাষ হতো। কিন্তু নানান সংকটে একেবারেই তলানিতে নেমেছে এর চাষ। রাজশাহীর তরমুজের জায়গায় চলে এসেছে বরিশাল-ভোলার তরমুজ। প্রতিদিনই এখানকার বিভিন্ন ফলের মোকামে ঢুকছে তরমুজবাহী অর্ধশতাধিক ট্রাক।
২০১৫ সালের দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরের কৃষক মনিরুজ্জামান মনির ১০ বিঘা বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করেন। ওই সময় বাজারে তরমুজের কেজি ছিলো ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সেবার ফলন ভালো হলেও লাভের মুখ দেখতে পাননি ওই চাষি। তিনি জানান, কেবল বাজার না থাকায় ভালজনক হয়নি তার বর্ষাকালীণ তরমুজ চাষ। ফলেল পরের বছর আর তরমুজ চাষে নামেননি মনির।
চাষি মনিরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেখনাকর ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার। পরে তিনিই পথ দেখান লাভজনক ‘ওয়াক্স মেলন’ চাষে। অতনু বলেন, বাজার চড়া থাকলেও অপ্রচলিত ফসলের নায্য দাম পাচ্ছেননা চাষিরা। লাভের পুরোটাই চলে যাচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের পকেটে। তরমুজ চাষে লাভ করতে না পারলেও ওয়াক্স মেলন চাষে লাভভান হচ্ছেন মনির।
বরেন্দ্রে অঞ্চলে তরমুজ চাষে ঝুঁকি বাড়ায় চাষ কমছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি। তিনি বলেন, তরমুজের বীজের দাম চড়া। তাছাড়া মারত্মকসব রোগ রয়েছে। গৃষ্মকালীন ফসল হওয়ায় শিলাবৃষ্টির শঙ্কা তো রয়েছেই। এসব উৎরে গেলেই লাভের মুখ দেখেন চাষি। তবে সম্প্রতি অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ি এবং কম ঝুঁকিসাপেক্ষ ফসল চাষে চলে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
লাভজনক বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ সীমিত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়েছে দেব দুলাল ঢালি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহীর দু-একটি এলাকায় এ জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। কেবল সৌখিন চাষিরাই সীমিত পরিসরে বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করছেন। তবে পর্যাপ্ত বাজার ও সরকারী সহায়তা পেলে বর্ষায় তরমুজ চাষ ছড়িয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, গত বছর জেলায় ১৫ দশমিক ৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। হেক্টর প্রতি ৪০ টন হারে উৎপাদন ছিলো ৬১৬ টন। এটিই এবছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তরমুজ চাষের খবর নেই।
এদিকে, রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অধিপ্তরের হিসেবে, গত ২০১৬-২০১৭ কৃষিবর্ষে রাজশাহী অঞ্চলে অপ্রচলিত ফলের চাষ ছিলো ৮৭ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৭ হেক্টর। এ থেকে উৎপাদন হয় ১১ লাখ ২৮ হাজার ৪৬২ টন বিভিন্ন ধরণের অপ্রচলিত ফল। এর মধ্যে ৫৬৫ দশমিক ৪ হেক্টর জমিতে ২১ হাজার ৬৮১ টন তরমুজ উৎপাদন হয়। এটিই ছিলো এ মৌসুমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা।

বরাবরই চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা তরমুজ চাষে আগ্রহী নন। গত মৌসুমে রাজশাহীতে ১৫ দশমিক ৪ হেক্টরে ৬১৬ টন, নওগাঁয় ৬৪ হেক্টরে ২ হাজার ১০ টন এবং নাটোরে ৪৮৬ হেক্টরে ১৯ হাজার ৫৫ টন তরমুজ উৎপাদন হয়।
এর আগে ২০১৫-২০১৬ মৌসুমে ৬১ হেক্টরে ২২ হাজার ২৯৩ টন, ২০১৪-২০১৫ মৌসুমে ৬৪০ হেক্টরে ২২ হাজার ৩৭৮ টন, ২০১৩-২০১৪ মৌসুমে ৮১৩ হেক্টরে ২৬ হাজার ৫৭ টন এবং ২০১২-২০১৩ মৌসুমে এক ২২৬ হেক্টরে ৬৭ হাজার ১১৪ টন তরমুজ উৎপাদন হয়।
এদিকে, নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফলের দোকান ছাড়াও নগরীর প্রধান রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে তরমুজের দোকান। স্থানীয় দোকানের পাশাপাশি ভ্যানে ফেরি করেও তরমুজ বিক্রি করছেন মৌসুমী ফল বিক্রেতারা।
নগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারী তরমুজের মোকাম শালবাগান। সেখানকার চারজন ফল ব্যবসায়ী তরমুজ আনেন বরিশাল থেকে। এছাড়া নগরীর তালাইমারী, ভদ্রা এবং কোর্ট এলাকায় আরো অন্তত: দশজন ব্যবসায়ী পাইকারী তরমুজ বিক্রি করেন।
নগরীর শালবাগান এলাকার নীলিমা ফল ভান্ডারের মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরিশাল থেকে ট্রাকে করে তরমুজ সরাসরি রাজশাহীতে আসছে। এরপর চলে যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। প্রতি ট্রাকে তরমুজ থাকছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার। তারা কমিশনে বিক্রি করছেন এসব। চাষিদের ধরে রাখতে অনেকেই অগ্রিম টাকাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই ফল ব্যবসায়ী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.