নাদালের ‘২২’ ছুঁলেন জোকোভিচ

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: ‘সে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। অসাধারণ টেনিস খেলছে। কিন্তু আমি ইতিহাসটা গড়তে চাই।’ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পুরুষ এককের ফাইনালে নামার আগে প্রতিপক্ষের প্রশংসা করতে গিয়ে এভাবেই নিজের আকাঙ্ক্ষার ঘোষণা দেন নোভাক জোকোভিচ। তো জোকোভিচের মতো কিংবদন্তি যখন জয়ের জন্য এমন মরিয়া, প্রতিপক্ষ স্টেফানো সিসিপাসের সাধ্য কি তার জয় রোধ করে!
জোকোভিচের ইতিহাস গড়ার পথে বাধা হতে পারেননি গ্রিসের তারকা। গতকাল মেলবোর্ন পার্কের রড লেভার অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে ঠিকই সিসিপাসকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছেন জোকোভিচ। জিতেছেন সরাসরি ৬-৩, ৭-৬ (৭-৪), ৭-৬ (৭-৫) গেমে।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পুরুষ এককে সবচেয়ে বেশি বার শিরোপা জয়ের রেকর্ডটি আগে থেকেই তার দখলে ছিল। গতকাল নিজের রেকর্ডই ভেঙে জোকোভিচ ছুঁলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ১০ম শিরোপা জয়ের মাইলফলক। তার চেয়েও বড় কথা, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতে সার্বিয়ান তারকা ছুঁয়ে ফেললেন পুরুষ এককে সবচেয়ে বেশি ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জেতা রাফায়েল নাদালকে। নাদালের সঙ্গে তারও এখন গ্র্যান্ড স্লাম এককের শিরোপা সংখ্যা হলো ২২।
গত বছর ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জয়ের মধ্যদিয়ে নাদাল যখন নিজের গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা সংখ্যা ২২-এ উন্নীত করেন, জোকোভিচ তা দেখেছিলেন টেলিভিশনের সামনে বসে। গতকাল জোকোভিচ যখন তার সেই ২২ ছুঁলেন, নাদালও ছিলেন দর্শক। করোনার টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনসহ অনেক টুর্নামেন্টেই খেলা হয়নি জোকোভিচের। খেললে হয়তো আরো আগেই নাদালকে ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন। এবার যেতেন এগিয়ে। কিন্তু যা হয়নি তা নিয়ে আফসোস করার পাত্র জোকোভিচ নন। তার মতো কিংবদন্তিদের অতীত নিয়ে আক্ষেপ করার কথাও নয়। তাছাড়া জোকোভিচ তো জেনেবুঝেই টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে গতবার মিস করায় এবার যে শিরোপা জিততে সার্বিয়ান তারকা অনেক বেশি আগ্রাসী ছিলেন, সেটা তার প্রতিটা ম্যাচেই প্রমাণিত হয়েছে। এবারের আসরে বেশির ভাগ ম্যাচই তিনি খেলেছেন চোট নিয়ে। কিন্তু কোর্টে নামার পর তার খেলা দেখেই মনেই হয়নি চোট নিয়ে খেলছেন তিনি! বরং প্রতিটা সার্ভ, রিটার্নে জোকোভিচের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে তো তার চেটের বিষয়টি নিয়েই সংশয় ছড়ায়।
গতকাল ফাইনালেও নিজের আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েই ইতিহাস ছুঁয়েছেন তিনি। তবে প্রতিপক্ষ স্টেফানো সিসিপাসও তাকে ছেড়ে দেননি। সরাসরি সেটে হারলেও দারুণ লড়াই করেছেন তিনি। দুই ঘণ্টা ৫৬ মিনিটের লড়াইয়ে পরের দুটি সেটকেই নিয়ে যান টাইব্রেকারে। সেই টাইব্রেকারেও লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। তবে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে জোকোভিচের অভিজ্ঞতার। জোকোভিচ যেখানে ২২তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতলেন, সেখানে সিসিপাস ক্যারিয়ারে এখনো গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা ছুঁয়েই দেখতে পারেননি। কালকের আগে তার গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালের অভিজ্ঞতা বলতে ছিল-২০২১ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে খেলা। সেই ফাইনালেও এই জোকোভিচের কাছেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তার। এবারও সেই জোকোভিচের হাতেই চুরমার হলো তার প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের আশা।
কাল তীব্র উত্তেজনাকর লড়াইয়ে শেষ পয়েন্টটি পেতেই হাতের র‍্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে আনন্দে লাফিয়ে উঠেন জোকোভিচ। এরপর দুই হাত বজ্রমুষ্টি পাকিয়ে নিজের স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে উদযাপন করেন। ট্রফিটা হাতে নিয়েই তাতে এঁকে দেন চুমু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.