নাটোর নলডাঙ্গার নির্বাচনী মাঠে ‘সর্বহারা’


নাটোর প্রতিনিধি:  আগামী ১৮জুন অনুষ্ঠিত হবে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার নির্বাচন। পঞ্চম ও শেষ ধাপের এই উপজেলা নির্বাচন বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। তবে এই উপজেলার ভোটাররা প্রার্থীদের নিয়ে যতটা না আলোচনা করছে, তার চেয়ে বেশি আলোচনা চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি সর্বহারা বাচরমপন্থিদের নিয়ে। সশস্ত্র অবস্থায় প্রতিদিন সর্বহারা দলের সদস্যরা বাড়িবাড়ি গিয়ে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। তবে দীর্ঘ দিন পর সর্বহারা পার্টিরসদস্যরা তাদের কর্মকান্ডে ফিরে আসায় আতংকিত হয়ে পড়েছে ভোটাররা। সুষ্ঠনির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তারা।

অভিযোগ রয়েছে, ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থীআসাদুজ্জামান আসাদ আলোচিত সব সর্বহারা নেতাদের দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। তবে আসাদুজ্জামান আসাদ তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও সর্বহারাদের আনাগোনার বিষয়ে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী সব জানলেও কার্যকর কোনব্যবস্থা নিচ্ছে না। যার কারনে শেষ ধাপের এই নির্বাচন কতটা সুষ্ঠ হবে তানিয়ে ভোটারদের মনে শঙ্কা তৈরী করেছে।

আশির দশক থেকেই চলনবিলের আশপাশের অঞ্চল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেখানে চরমপন্থীরা ঘাঁটি গাড়ে। ২০০০ সাল থেকে ১৮ বছরে সারা দেশে এদের হাতে ২০৯জন নিহত হন। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭টি মামলা আছে দেশের বিভিন্ন থানায়।

সন্ত্রাসী পেশা ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি-এই প্রত্যয় নিয়ে গত ৯ এপ্রিলপাবনায় ১৪ জেলার ৫৯৫ চরমপন্থী আÍসমর্পণ করে।

এর মধ্যে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল লাল পতাকা), সর্বহারা, নিউবিপ্লবী ও কাদামাটির অনুসারী ৫৯৫ জন চরমপন্থী আÍসমর্পণ করেন। তাদেরমধ্যে নওগাঁ জেলার ৭০, জয়পুরহাট ৮২, রাজশাহী ৬০, সিরাজগঞ্জ ৬৯, নাটোর ২৭,বগুড়া ১৫, পাবনা জেলা থেকে ১৩২ জন সহ মোট ৫৯৫জন আÍসমর্পন করে।

এই অনুষ্ঠানেই বাগমারার আলোচিত সর্বহারা নেতা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্টবাবু সহ রাজশাহীর ৬০জন আÍসমর্পন করে। কিন্তু আÍসমর্পনের পরওসন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেমে নেই তাদের।

অনুসন্ধনে জানা যায়, নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর এলাকার ইউপি সদস্য শহিদুলইসলাম সঞ্জয় এর নেতৃত্বে বারিয়াহাটি এলাকার ফয়সাল শাহ ফটিক, আশরাফ আলীরাজা, সরকুতিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল, রামশাকাজিপুর এলাকার শাহিদুল ইসলাম,আব্দুস সাত্তার, মাধনগরের মাজু এবং যুবদল নেতা গামা হত্যা মামলার ফাসিঁরআসামী আতাউর রহমান, রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুরের আলোচিত সর্বহারা নেতাআব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদিন নৌকারপ্রার্থীর পক্ষে সশস্ত্র অবস্থায় মহড়া দিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে,বাগমারার তাহেরপুরের আলোচিত সর্বহারা নেতা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে সর্বহারার পার্টির সদস্যরা প্রতিদিন হেলমেট পরিহিত অবস্থায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। যার কারনে আতঙ্কেদিন কাটছে নলডাঙ্গা উপজেলার ভোটারদের। এছাড়া প্রতিদিনই তারা আসাদের পক্ষেসশস্ত্র অবস্থায় গণসংযোগ করে যাচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার আসাদের প্রচারণায় অংশ নিয়ে ব্রক্ষপুর এলাকায়স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আহমেদ আলী শাহের নির্বাচনী প্রচারণায়হামলা চালিয়ে দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে তারা। প্রতিদিনই আতঙ্ক সৃষ্টিকরছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পার্টির সদস্যরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভোটাররা বিটিসি নিউজকে জানান, সুষ্ঠ ভাবে ভোট দেওয়ারকোন পরিবেশ নাই এখানে। চরমপন্থি দলের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি এসে নৌকায় ভোটদেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন ভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নাইএখানে।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করে বিটিসি নিউজকে বলেন, গত মঙ্গলবার যখন নলডাঙ্গা হাটে আমি গণসংযোগ করি, তখন মুর্শেদ এবং সর্বহারা দলের সদস্য আশরাফ ও জলিলের নেতৃত্বে ২০/২৫জন আমার কাছ থেকে পোস্টার ছিঁড়ে নেয়।

তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের প্রার্থী আসাদ এলাকায় সর্বহারাদের নিয়ে এসে ত্রাসসৃষ্টি করছে। প্রশাসনকে বলে আমরা এর প্রতিকার পাচ্ছি না।

চরমপন্থিদের আশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বিটিসি নিউজকে বলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী চরমপন্থিদের এলাকায় এনে ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। বিদ্রোহী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আহমদআলী শাহ তার সমর্থক আনিসুর রহমানকে দিয়ে এই কাজগুলো করিয়ে আমার ঘাড়ে দোষচাপানোর চেষ্টা করছে।

তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আহমদ আলী শাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, আসাদুজ্জামান আসাদ এলাকায় চরমপন্থিদের এনে ত্রাসসৃষ্টি করেছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাছাড়া চরমপন্থিদের দিয়ে আসাদ শুক্রবার ব্রক্ষপুর এলাকায় আমার নির্বাচনী প্রচারণায় চরমপন্থিদের দিয়েহামলা চালিয়ে দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। আমরা এবিষয়ে প্রশাসনকেবারবার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলে কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান চরমপন্থিদের অবস্থানের কথা স্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, যখনই আমরা খবর পেয়ে অভিযানে বেরহই, তখন গিয়ে তাদের কারো অবস্থান পাওয়া যায় না। মৌখিক ভাবে প্রার্থীরাআমাকে চরমপন্থিদের বিষয়ে অবগত করেছে, তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহরিয়াজ বিটিসি নিউজকে বলেন, চরমপন্থিদের আনাগোনার বিষয়ে শুনেছি। তবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোট কেন্দ্র গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। আশা করছি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.