নাটোরে ২ মাস ধরে মেয়েকে ধর্ষণ’র অভিযোগে পলাতক কথিত সাধক বাবা ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার

নাটোর প্রতিনিধি: চুল-দাড়ি রেখে সাধক সেজেছিল ৪০ বছর বয়সী শরীফুল ইসলাম। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হলে তিনি স্বামীকে ছেড়ে চলে যান। সঙ্গে যায় তাদের ১৬ বছর বয়সী মেয়ে।
এবার ঈদুল আযহার আগে নানা কৌশলে মেয়েকে নাটোরের বড়াইগ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে নিজেকে ‘পীর’ পরিচয় দেওয়া শরীফুল। সেখানে মেয়েটির ওপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
একপর্যায়ে মেয়েকে ভয় দেখিয়ে দুই মাস ধরে ধর্ষণ করে সে। পাশবিক এই ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা হয়। এরপর মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ ব্যাপারে জানাতে বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সিআইডির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার বসন্তপুরের বাগডাংগী নামক দুর্গম চর এলাকায় টানা ২৫ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ধর্ষক শরীফুলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
তিনি জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে সিআইডির সার্বিক দিকনির্দেশনায় এলআইসির একটি চৌকস দল মানিকগঞ্জ জেলা সিআইডির সহায়তায় এ অভিযান চালায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরীফুল নিজের মেয়েকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। পরে তাকে নাটোর জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত ২২ শে সেপ্টেম্বর নিজ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের মা বাদী হয়ে বড়াইগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিল শরিফুল। এছাড়াও ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট শরীফুলের বিরুদ্ধে থানায় ধারা- ২২(গ)/২৫, ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর মামলা রয়েছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, শরীফুলের সঙ্গে কথা বলে তাকে মানসিক রোগী বলে মনে হয়নি। সে বিভিন্ন মাজারে ঘুরে নিজেকে পীর হিসেবে পরিচয় দিয়ে মুরিদ সংগ্রহ করত।
সিআইডি জানায়, শরীফুল সন্ন্যাসীর বেশ ধরে থাকলেও সে প্রকৃতপক্ষে ভণ্ড। ধর্ষণ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। তার এরকম জীবনাচরণের কারণে দুই বছর আগে স্ত্রী তাকে ছেড়ে বাবার বাড়ি নাটোরের দিঘাপতিয়ার পূর্ব হাগুরিয়া গ্রামে চলে যান।
এদিকে মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে এলেও কোনো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে তাকে দেখা করতে দিত না শরীফুল। ধর্ষণের কথা কাউকে না বলার জন্য ভয়-ভীতিও দেখাত। একপর্যায়ে মেয়েটি তার নানীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার ওপর নির্যাতনের বিষয়ে জানায়। তখন মা ও নানী মিলে তাকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম থানায় একটি মামলা করেন। এরপর শরীফুল পালিয়ে যায়।
ধরা পড়ার ভয়ে সে তার লম্বা চুল-দাড়ি কেটে ভিন্ন চেহারায় এক নারীর বাসায় আত্মগোপন করে ছিল। বিভিন্ন মাজারে ঘুরে বেড়ানোর সূত্রে ওই নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
তবে শেষপর্যন্ত পুলিশ তাকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর দাদা-দাদীর সংশ্নিষ্টতার প্রমাণ পেলে তাদেরও গ্রেপ্তার করবে সিআইডি।
এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ধর্ষণ মামলার আসামি শরিফুল কে সিআইডি আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে, আগামীকাল তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.