‘নাটোরে হত্যা-অপহরণের শিকার যুবলীগ নেতারা, সাত বছরে ৭ খুন

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গসংগঠন যুবলীগের রাজনীতি দিনদিন কঠিনতর হয়ে উঠছে। যুবলীগ নেতারা হত্যা ও অপহরণের শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা বেড়ে গেছে। ঘটছে অপহরণের ঘটনাও। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিরোধের জেরে এসব ঘটনা ঘটছে। গত সাত বছরে ৭ যুবরীগ নেতা -কর্মী খুন ও একজন অপহৃত হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজপথের সবচেয়ে সক্রিয় এ অঙ্গসংগঠনের নেতাদের এমন নাজুক অবস্থায় হতাশা বিরাজ করছে সংগঠনটির কর্মীদের মধ্যে।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রয়ারী লালপুর উপজেলার কদিমচিনানে যুবলীগ নেতা খায়রুল বাসারকে হত্যা করে স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। খায়রুল কদমচিলান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ ছিলেন।বাড়িতে হামলা করে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খায়রুলকে খুন করা হয়। জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর স্থানীয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা ও হত্যাকান্ড ঘটায় বলে এলাকায় কথিত আছে।

২০১৫ সালের ৫ মার্চ রাতে নাটোর শহরের ঝাউতলা এলাকায় সিরাজ শিকদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিরাজ পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্মসাধারণ স¤পাদক ছিলেন। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে সিরাজকে হত্যা করা হয় বলে দাবী করে পরিবার।

২০১৬ সালের ৩রা মে সদর উপজেলার তেবাড়িয়া যুবলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাজ্জাক ছিলেন তেবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ও তেবাড়িয়া বাজারের একজন মুদি দোকানী। ওই দিন ভোরে সদর উপজেলার ইয়াসিনপুর রেললাইন
থেকে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

২০১৮ সালের ১৮ই মার্চ নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকায় প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে যুবলীগ নেতা ইমরান হোসেনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ইমরান হোসেন পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের ক্রীড়া স¤পাদক ছিলেন। কানাইখালী এলাকায় কাঁচের ব্যবসা করতেন তিনি।

২০১৮ সালের ২৮শে নভেম্বর জেলার লালপুরে জাহারুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ কেটে ও মাথায় কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। হামলাকারীরা তার দুই হাত ও দুই পায়ের রগ কেটে দেয়। একইসঙ্গে তার মাথায় একাধিক কোপ দেয়। জাহারুল ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক।

চলতি বছরের ৭ই জানুয়ারী নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার কাউন্সিলর জামিরুল ইসলাম(৪০) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। গোপালপুর পৌর এলাকার বিরুপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ৯নং ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরকে। তিনি গোপালপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। জামিরুল হত্যার দুদিনের
মাথায় স্বামীশোকে কাতর স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ, চলতি মাসের ১৪ই ফেব্র“য়ারী নাটোর সদরের বড়হরিশপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া বাজারে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা হাসান আলী খাঁকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। হত্যাকান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন সেন্টু ও একটি হত্যা মামলার জামিনে থাকা দুই আসামী।
হাসান ১নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ছিলেন।

এদিকে, ১লা ফেব্রুয়ারী নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনায়ন প্রত্যাশী জামিল হোসেন মিলনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার তালতলা হাফরাস্তা এলাকায় নিজ অফিস থেকে তাকে তুলে নেয়া হয় বলে থানায় সাধারণ ডায়েরী করে মিলনের পরিবার। মিলন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক স¤পাদক এবং জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক স¤পাদক। অপহরণের ২০ দিন পার হলেও এখনও সন্ধান মেলেনি মিলনের।

জেলা যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ সংগঠনের নেতাদের একের পর এক হত্যাকান্ডে চিন্তিত। এলাকায় আধিপত্য, নেতৃত্বে অসম প্রতিযোগিতা, পূর্ব বিরোধসহ নানা কারণে এসব হত্যাকান্ড ঘটছে বলে মনে করছেন তারাও। সাবেক নেতাদের মতে, উপজেলাগুলোতে যুবলীগের বর্তমান কমিটিতে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায়, কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা দ্বিধান্বিত। আর বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবী, অভ্যন্তরীণ বিরোধে হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে।

জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, এক সময় যুবলীগ কর্মীদের শ্লোগানে রাজপথ প্রক¤িপত থাকতো। বিএনপি জামায়াতের শাসনামলে যুবলীগ রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতো। অথচ এখনকার যুবলীগ নেতারা পার¯পরিক বিরোধে জড়িয়ে সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। এটি বর্তমান নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতা ছাড়া কিছুই নয়।

যুবলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব বলেন, যুবলীগ রাজপথে নেতৃত্বে দেয় বলে এখানে প্রতিযোগিতা অনেক। ব্যক্তিগত বিরোধে সাম্প্রতিক সময়ে নেতা-কর্মীদের হত্যা-অপহরণের ঘটনা বেড়েছে, যা দুঃখ জনক। আমরা দলীয় ফোরামে পর¯পরের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের নির্দেশনা দেবো। প্রয়োজনে সংগঠনের অভ্যন্তরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চালু ও কার্যকর করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল কুদ্দুস এমপি বলেন, যুবলীগ নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধজনিত কর্মকান্ডের সমালোচনা এমনকি হত্যাকান্ডের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা না বাড়ালে সংগঠনের পাশাপাশি তারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.