নাটোরে মটরশুটির আবাদ বেড়েছে

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরাও। আর্থিক মূল্য এবং জমির উর্বরতা শক্তির সুফল প্রাপ্তির কারণে কৃষকরা মটরশুটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিগত বছরে জেলায় আবাদী জমি ও উৎপাদন উভয়ই বেড়েছে। চলতি বছর জেলায় অন্তত ৭০ কোটি টাকার মটরশুটি উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়,নাটোর জেলায় চলতি মৌসুমে ৯৬০ হেক্টর জমিতে মটরশুটি চাষ হয়েছে। এর অধিকাংশই নাটোর সদর উপজেলায়- যা ৭৬৫ হেক্টর। বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১১৫ হেক্টর, লালপুরে ৪০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ২৫ হেক্টর এবং সিংড়া উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে মটরশুটি চাষ হয়েছে।

কৃষি বিভাগ আশা করছে, ৯৬০ হেক্টর জমি থেকে ৯ হাজার ৬০০ টন মটরশুটি উৎপাদন হবে। মণ প্রতি ৩০০০ টাকা হিসাবে যার আর্থিক মূল্য ৭২ কোটি টাকা। গত বছরে জেলায় ৮১২ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৮০ টন মটরশুটি উৎপাদন হয়। ২০১৬ সালে ৬৮৫ হেক্টর জমি থেকে ৬ হাজার ৮১৫ টন এবং এর পূর্ববর্তী বছরে ১৭৭ হেক্টর জমি থেকে ১ হাজার ৭৭৮ টন মটরশুটি উৎপাদন হয়।

ডিসেম্বর মাসে জমি চাষ করে মটরশুটির বীজ বপন করা হয়। বিঘা প্রতি ১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। জমিতে শুধু টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন হয়। ক্ষেত্রবিশেষে গোড়াপঁচা ও পোকাবিরোধী কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। তিন দফায় গাছ থেকে মটরশুটি সংগ্রহ করা হয়। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে খরচ পড়ে ১০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় গড়ে ২৫ মণ। প্রতি মণের দর ২৫০০ টাকা হিসাবে ৬২ হাজার টাকা বিক্রি হয়।

নাটোর সদর উপজেলার সব গ্রামে মটরশুটি চাষ হলেও লক্ষ্মীপুর-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের হয়বতপুর, কাঁঠালবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুর গ্রামে মটরশুটি চাষের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার কৃষক মজিদুল ইসলাম তার দুই বিঘা জমিতে মটরশুটি আবাদ করেছেন।

তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে গাছ থেকে মটরশুটি পেয়েছেন ১৫ মণ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আরও ১৫ মণ করে পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

এক বিঘা জমিতে মটরশুটি চাষ করেছেন আব্দুল জলিল। তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, মটরশুটি উঠলে ওই জমিতে পাট চাষ করবেন। মটরশুটি গাছের ডালপালা ও শেকড় মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তাই পরের ফসলে সার কম লাগবে।

নাটোরে উৎপাদিত সবজি ও ফল সারা দেশে সমাদৃত। হয়বতপুর, দত্তপাড়া এবং ছাতনী বটতলা হাটের আড়তে মৌসুমী সবজির সঙ্গে প্রতিদিন শত শত মণ মটরশুটি বিপণন হয়। নাটোর ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা মটরশুটির ক্রেতা।

বটতলা হাটের আড়তদার মোহাম্মদ আলী বিটিসি নিউজকে জানান, তার আড়তে গত রোববার ২০০ মণ মটরশুটি কেনাবেচা হয়েছে গড়ে ২৫০০ টাকা মণ দরে। মৌসুমের শুরুতে এই দর প্রায় দ্বিগুণ ছিল।

নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর ইউনিয়নের কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা ও মো আসরাফুদ্দৌলা খোকন বিটিসি নিউজকে জানান, চাষবিহীন এবং চাষকৃত জমিতে- উভয় পদ্ধতিতে মটরশুটি আবাদ হয়। চাষবিহীন জমিতে তুলনামূলকভাবে মটরশুটির উৎপাদন কম হলেও আগাম ফলন ওঠার ফলে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকেন এবং ওই জমিতে ভুট্টা চাষের সুযোগ পান।

অক্টোবরে ভারি বৃষ্টি ছাড়াও নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এবং বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়ায় নিচু জমিতে মটরশুটির ফলন ঘাটতি হলেও গড় ফলন মন্দ নয় বলে জানান নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো আমিরুল ইসলাম।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, মটরশুটির শেকড় ইউরিয়ার ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। তাই মটরশুটির জমিতে ইউরিয়া সার তো প্রয়োজন হয়ই না, অধিকন্তু পরবর্তী ফসল চাষাবাদে ওই জমিতে ২০ ভাগ ইউরিয়া কম ব্যবহার করলে চলে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের উচ্চমূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা মটরশুটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে মটরশুটি এই এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.