নাটোরে পকেট নেবুলাইজার তৈরি করলেন দশম শ্রেণীর রাকেশ

নাটোর প্রতিনিধি: নিজের প্রচেষ্টায় যে সব কিছু করা সম্ভব এমনটাই প্রমান করলেন নাটোরের দশম শ্রেনী পড়–য়া ছাত্র রাকেশ সাহা। স¤পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তিনি উদ্ভাবন করেছেন পকেট লেবুলাইজার।
সবচেয়ে ছোট পকেট নেবুলাইজার মেশিন আবিস্কার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানের ক্ষুদে শিক্ষার্থী রাকেশ সাহা। মাস্কের ভিতরে এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করায় এটি বুক পকেটে রেখে সব সময় বহন করা যায়। সে সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুলের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের একজন ছাত্র।
এ বছর ৪৩ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করে সিংড়া উপজেলা থেকে প্রথম স্থান, নাটোর জেলা থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন সহ বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অংশগ্রহণ করে সিংড়া উপজেলা থেকে “সেরা মেধাবী” শিক্ষার্থীর পুরস্কার লাভ করেছে এই স্কুল পড়ুয়া ছাত্র।
রাকেশ সাহা জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি আশি বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন ইলেকট্রিক প্রকল্প উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নের পেছনে ব্যয় করে। আমি ইলেকট্রনিকস ও রোবোটিকস স¤পর্কে খুবই আগ্রহী। সব সময় আমার স্বপ্ন আমি ব্যবহারযোগ্য কিছু উদ্ভাবন করব। সে চিন্তা থেকেই মাথায় এলো সহজলভ্য এবং সহজে বহনযোগ্য সাশ্রয়ী মূল্যের পকেট নেবুলাইজার মেশিন তৈরীর কথা। আমি খুশি যে আমি নিজে কিছু উদ্ভাবন করতে পেরেছি।
করোনার সময় অনেক মানুষ শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। এছাড়া অনেক মানুষ নিয়মিত শ্বাসকষ্টে ভোগে। কিন্তু শ্বাসকষ্টের রোগীদের অনেকেরই ব্যক্তিগতভাবে নেবুলাইজার মেশিন কেনার সামর্থ্য নেই।
এছাড়া নেবুলাইজার মেশিনগুলো আমাদের দেশে তৈরি হয়না। নেবুলাইজার মেশিনের বেশির ভাগই চায়না থেকে এ দেশে আমদানি করতে হয়। বাজারে অথবা হাসপাতালে যে নেবুলাইজার মেশিন ব্যবহার হয় তা আকারে সাধারণত বড় হয়ে থাকে। যা সাধারণত বাংলাদেশে তৈরী হয়না, বরং বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।একটি নেবুলাইজার মেশিনের দাম ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা। যা অনেক ব্যয় বহুল। তাই সবার সামর্থ্যও হয় না একটা নেবুলাইজার মেশিন ব্যক্তিগত ভাবে কেনার। তাই আমি এই বিষয়টি নিয়ে রিসার্চ করলাম।
গুগল ইউটিউব সব জায়গায় আমি নেবুলাইজারের বিস্তারিত তথ্য খুঁজতে লাগলাম। কেউ কি সব থেকে ছোট নেবুলাইজার মেশিন বানিয়েছে? কেউ কি কম খরচে নেবুলাইজার মেশিন বানিয়েছে? এড়ড়মষব,? Google, youtube উইকিপিডিয়া এসব জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর যেসব তথ্য পেলাম তা দেখে আমি সত্যিই অনেক আনন্দিত হলাম। দেখলাম গত চার পাঁচ বছরে ছোট নেবুলাইজার মেশিন যন্ত্র কেউ আবিষ্কার করেনি।
আর যেসব যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে তা খুব একটা সাশ্রয়ী নয় এবং খুব একটা ছোটও নয়। সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমিই তৈরি করব পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট, পকেটে বহনযোগ্য এবং সাশ্রয়ী নেবুলাইজার মেশিন।
বিষয়টি আমি সঙ্গে সঙ্গে তরুণ উদ্ভাবক জয় বড়–য়া দাদাকে বিষয়টা জানালাম। দাদা আমাকে অনুপ্রেরণা এবং সাহস দিলেন। আমি কাজ শুরু করে দিলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করলাম। কাজ শুরু করলাম একটা নেবুলাইজার মেশিন তৈরির। মাত্র তিনদিনের ভেতর আমার কাঙ্খিত যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হলাম। আমি নিজেই একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। গত কয়েক বছর যাবত শ্বাসকষ্টের জন্য আমি কলকাতায় চিকিৎসা করাচ্ছি। আমাকে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। আমার ইনহেলার টা শেষ হয়ে যাওয়ায় পর এটি ব্যবহার করে আমি খুব ভালো ফল পাচ্ছি।
রাকেশ বলেন, আমার তৈরি এই ছোট মিনি পকেট নেবুলাইজারটি বেশ কাজে দিচ্ছে। বড় বড় নেবুলাইজার মেশিনগুলো ব্যবহার করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন হয় এবং এসব মেশিন থেকে অনেক শব্দ সৃষ্টি হয়।
আমার তৈরি এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি ছোট , দেখতে সুন্দর এবং পকেটে বহনযোগ্য। এমনকি এটি রিচার্জেবল হওয়ায় এটি ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের কোন প্রয়োজন নেই। আমার তৈরি এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি বড় মেশিনের মত শব্দ সৃষ্টি হয় না। এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি তৈরি করতে আমার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। ফলে এটি আমি অনেক কম খরচেই তৈরি করে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে সক্ষম ।
তিনি বলেন,যেহেতু একটি পকেট নেবুলাইজার মেশিন কিনতে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার লাগছে। এতে করে বাহিরের দেশ থেকে বড় বড় নেবুলাইজার মেশিনের আমদানি কমিয়ে আমাদের দেশীয় পণ্য তথা আমার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পকেট নেবুলাইজার মেশিন উৎপাদন করে এবং সাধারণ জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে পারলে আমাদের সাধারণ মানুষ গুলো অনেক উপকৃত হবে। এছাড়া আমার তৈরী পকেট নেবুলাইজার মেশিনগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের আমদানি করে আমাদের দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারবো বলে আমি আশা করছি।
র্দীঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভোগা স্কুল শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান ,রাকেশের তৈরী নেবুলাইজার মেশিন আমি ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছি। এটা বড় মেশিনের মতোই কাজ করে । পকেটে রেখে ব্যবহার করা যায় । এটা সত্যিই একটি যুগান্তকরি আবি¯কার।
রাকেশ সাহা দাবি করেছেন, এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে খুব বেশি খরচ হবে না। স্বল্প খরচের এই প্রযুক্তিটি তিনি
দেশের কল্যাণের জন্য সরকারকে দিতে চান। রাকেশ সাহা সিংড়া পৌর শহরের মাদারপিুর মহল্লার মুদি দোকানী রতন কুমার সাহা ও গৃহিনী শ্রীবানী সাহার একমাত্র পুত্র ।
এ বিষয়ে সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, রাকেশ সাহা একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার উদ্ভাবনের নেশা রয়েছে। ভবিষ্যতে রাকেশ আরও ভালো কিছু উদ্ভাবনে কাজ করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এবিষয়টি জানার পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি’ তাকে উৎসাহ দেন এবং ১ টি ল্যাপটপ উপহার দেন ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.