নাটোরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ


নাটোর প্রতিনিধি: বিশ্ববাজারে অর্গানিক (জৈব) সবজি ও ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জৈব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দামও তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহারে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাড়ছে উৎপাদন খরচ। দূষিত হচ্ছে মাটি, পানি ও বাতাস। দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচির্ত্য।
এসব সমস্যা থেকে কৃষক ও পরিবেশকে বাঁচাতে নাটোরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইপিএম প্রকল্পের আওতায় মডেল প্রকল্প হিসেবে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ শুরু হয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে নাটোরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ।
সবজি চাষে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার মানবদেহের জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দিন দিন। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার সঙ্গে উৎপাদিত শাকসবজি ভোক্তার ক্রয়ের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে নাটোরে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইপিএম প্রকল্পের আওতায় মডেল প্রকল্প হিসেবে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে উত্তরের জেলা নাটোরে। কৃষকদের ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে অন্তত ৫০০ কৃষককে নিয়োজিত করা হয়েছে এ কাজে। সেক্স ফেরোমেন, আঠালো ফাঁদ ও জৈব সার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করে দাম ভালো পাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদনও।
এতে খুশি স্থানীয় সবজিচাষীরা। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষে কৃষকদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে অন্তত ৫০০ কৃষককে নিয়োজিত করা হয়েছে। সেক্স ফেরোমেন, আঠালো ফাঁদ ও জৈব সার ব্যবহারে ভালো দাম পাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদনও। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে বাইরের জেলাগুলোতে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ বিভিন্ন শীতকালীন বিষমুক্ত সবজি চাষ হয়েছে ২৪৮ হেক্টর জমিতে। এসব জমি থেকে চার হাজার মেট্রিক টন নিরাপদ এবং বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।নাটোর সদর উপজেলার ফতেঙ্গাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের ভেতরে জমির চারদিকে সবুজ নেট দিয়ে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ করেছেন ওই গ্রামের কৃষক ওসমান গণি। কোনো ক্ষতিকর পোকা-মাকড় যাতে বাইরে থেকে আক্রমণ করতে না পারে, সে জন্য জমির পুরোটা ঢেকে দেওয়া হয়েছে নেট দিয়ে। আর এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে নেট হাউস পদ্ধতি। সেই সঙ্গে জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার।
শুধু নেট হাউস নয়, সেক্স ফেরোমেন, আঠালো ফাঁদ আর জৈব কীটনাশক এবং জৈব সার প্রয়োগ করে এই গ্রামের অন্তত ৫০০ কৃষক বিষমুক্ত শিম, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। পরিবেশবান্ধব কৌশলগত পদ্ধতি ব্যবহার করার কারণে উৎপাদন খরচও কমেছে তাঁদের। আর দাম ভালো পাওয়ায় খুশি সবজিচাষিরা।
নিরাপদ সবজিচাষি ওসমান গণি বিটিসি নিউজকে বলেন, সম্পূর্ণ বিষমুক্ত উপায়ে এই স্কোয়াশ চাষ করেছেন তিনি। উৎপাদনে শতভাগ জৈব সার ব্যবহার করেছেন। সেই সঙ্গে পুরো জমি নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ১৮ শতাংশ জমি থেকে শুরুতেই ২০ মণ স্কোয়াশ বিক্রি করা হয়েছে। প্রতি মণ স্কোয়াশ বাজারে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সিংড়ার মধ্যগ্রাম এলাকার কৃষক আসলাম হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, বাঁধাকপির চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো। এই কীটনাশকের পেছনে যে টাকা ব্যয় করতে হতো তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যেত। বিক্রির সময় দাম পাওয়া যেত না। জৈব সার ব্যবহারের ফলে এখন উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় মুনাফা কিছুটা কম হলেও লোকসানে পড়তে হয় না।
আলেয়া বেগম নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা বিটিসি নিউজকে বলেন, এক বিঘা জমিতে শিম বা টমেটো চাষ করতে আগে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো। এখন জৈব সার, সেক্স ফেরোমেন ও আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে সেই কীটনাশকের টাকাটা আর লাগে না। এতে সবজি উৎপাদনের ব্যয়ের পরিমাণ কমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করতে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ২৫ জন কৃষক নিয়ে একেকটি দল গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০০ জন কৃষকের ১০০ একর জমি বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের আওতায় আনা হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.