নাটোরে ঘুষ দিয়েও বাড়ি পাননি সুপদ শীল সব থাকার পরও পেয়েছেন আব্দুর রহমান

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুর উপজেলায় ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমিও বাড়ি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শ্রী সুপদ কুমার শীল। অপরদিকে নিজের জমিজমা থাকার পরও কীটনাশক ও মুদি দোকানের মালিক আব্দুর রহমান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে ঘুষ দিয়ে নলডাঙ্গা ক্লীক মোড়ে নিজের বড় ভাইসহ দুটি বাড়ি ও জমি বাগিয়ে নিয়েছেন।

লালপুরের রঘুনাথপুর গ্রামের মোঃ ফজলুর রহমানের ছেলে ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন সেন্টুর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শ্রী সুপদ কুমার শীল ও তার স্ত্রী শংকরি রাণী শীল। ৭০ হাজার টাকা নেয়ার কথা অভিযুক্ত আরাফাত রহমান সেন্টু অস্বীকার করলেও আড়বাব ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বুধবার বলেছেন, সেন্টু গরীবের টাকা আত্মসাত করেছে এটা দলের শীর্ষ নেতারাও জানেন।
লালপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শাম্মী আক্তার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, দুই পক্ষকেই হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেন্টুর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রথম পর্যায়ে নাটোরের সাত উপজেলায় আপন ঠিকানা পেয়েছে ৫৫৮টি পরিবার এবং ২য় পর্যায়ে এক হাজার ৩৮১টি পরিবার। ২য় পর্যায়ের এক হাজার ৩৮১ পরিবারের মধ্যে সিংড়া উপজেলাতেই ঘর পেয়েছে ৮০০টি পরিবার। এর বাহিরে গুরুদাসপুরে ১৩৫, বড়াইগ্রাম ১৬৬, বাগাতিপাড়া ১২০, নাটোর সদরে ১০০, লালপুরে ৫০ ও নলডাঙ্গা উপজেলায় ১০টি পরিবার ঘর পেয়েছে।
সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে দরিদ্র ভূমিহীনদের বাদ দিয়ে গণহারে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের রাজনৈতিক কারণে বাড়ি বরাদ্ধ দেয়ার সংবাদ ছাপা হলে তাৎক্ষনিক ছাতারদিঘি ইউনিয়নের ১০টি বাড়ির বরাদ্ধ বাতিল করে উপজেলা প্রশাসন।
এ সময় তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক কোন অনিয়ম না করে সঠিক হকদারদের বাড়ি বরাদ্ধ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
নাটোর সদরের দিয়ার সাতুরিয়ার ৯৪টি বাড়ি সরেজমিন দেখতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়ির সামনে নর্দমার মতো পচা কাদা। পা রাখার মতো কোন ভাল জায়গা নেই। এখানকার অনেক মানুষ ছাগল খাসি নিয়ে একই ঘরে বাস করছেন। জানতে চাইলে বলেন, সরকার ঘর দিয়েছে বলে করোনাকালেও আমাদের আর কোন সহায়তা দেয়া হচ্ছে না। কোন খাদ্য সহায়তাও পাই না। আমরা খাব কি? কোন কাজ নেই, কত না খেয়ে থাকবো তাই শোয়ার ঘরেই ছাগল ভেড়া রেখেছি। এসময় দেখা যায় প্রতিটি ঘরের টিনের চাল ও কাঠ এতটাই ঠুনকো একটু জোরে বাতাস আসলেই হয়ত উড়ে যাবে। অনেক ঘরের বারান্দার পিলারের প্লাস্টার এখনই খসে পড়ছে। হালকা ফাটলও ধরেছে কোন কোনটায়। এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কোন বাসিন্দাই তাদের সভাপতি আবুল কালাম ছাড়া কোন কথা বলতে রাজি হননি। পরে আবুল কালামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জেলা শহরে আছেন বলে জানান।
অপরদিকে জেলার বাগাতিপাড়ার পাঁকা ইউনিয়নের বেগুনিয়া গ্রামে গৃহহীনদের জন্য নবনির্মিত ১৬টি বাড়িতেই অনেক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাগাতিপাড়া ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) নিশাত আনজুম অনন্যা বলেছেন এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
নাটোর সদর উপজেলার দত্তের বাগান আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায় , এখানকার ৫২টি ঘর নির্মালণ করা হয়েছে ইতিমধ্যে পলেস্তরা খসে পরেছে। ঘর প্রাপ্ত সুুুবিধাভোগীদের অভিযোগ ঘর নির্মাণে মানা হয়নি সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়ম। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিটি ঘর। প্রকল্পের স্টিমেটে ঘরের খুুঁটি দৈর্ঘ্য ১২ফিট এবং বারান্দার খুটি ১০ফিট থাকলেও দেয়া হয়েছে ১০ ফিট। খুটির প্রস্থ পরিমাপ ৪বর্গ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে অনেক কম। রডের পরিমাণেও রয়েছে গড়মিল। খুটিতে দেয়া হয়েছে ১ সুতি রড। ঘর ও লেট্রিন নির্মাণে ২১টি খুটির পরিবর্তে দেয়া হয়েছে ১৯টি খুটি। কাঠ এবং মেঝের মানেও রয়েছে ঘাপলা। প্রথম শ্রেণির ইট দিয়ে ভিটি দেয়াল ৮ ইঞ্চি করার কথা থাকলেও করা হয়েছে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি। ব্যবহার করা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির ইট। মেঝের খোয়াতেও একই ধরনের ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরাত ফেরদৌসি নামে এক নারী বিটিসি নিউজকে জানান, ঘর নিমার্ণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমার স্বামী হাবিব মোল্লাকে পিটিয়েছে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাঙ্গাঙ্গীর আলমের রংপুর থেকে আনা মিস্ত্রী মিনহাজ পিটিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে।
আছিয়া খাতুন ও রোকেয়া বেগম বিটিসি নিউজকে জানান, ঘর তৈরীর দুই মাস না হতেই ফাটল দেখা দিয়েছে । আমরা ভয়ে ঘরে ঘুমাতে পারিনা। কখন যে ভেঙ্গে পরে।
তবে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রকল্পটির তত্ত¡াবধানে থাকা সদ্য বদলী হওয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাঙ্গাঙ্গীর আলম।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বিটিসি নিউজকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার দেশের ভূমিহীন দরিদ্র মানুষের বাসস্থানের চাহিদা পূরণ করে তাদের জীবনধারা স্বাভাবিক ও সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে থাকে। উদ্দেশ্যটি যে মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাম ভাঙিয়ে সরকারের টাকায় দুর্বৃত্তদের ভাগ বসানো এবং প্রকল্পের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.