নাটোরে গায়েবী মামলায় কথিত ককটেল উদ্ধার!

 

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলায় কথিত ককটেল উদ্ধার দেখানো হয়েছে। নাটোরের নলডাঙ্গা থানার উপ পরিদর্শক মোঃ নুরুজ্জামান বাদি হয়ে বিএনপির স্থানীয় ২১ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেছেন। মামলায় অভিযোগ করেছেন, গত ২১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার ত্রিমোহনী ব্রিজের উত্তর পাশের তিন রাস্তার মোড়ে ওই বিএনপি নেতা কর্মীদের কাছ থেকে পাঁচটি অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া গেছে।

কথিত ঘটনার সময় আসামিদের ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে ২৭ ঘন্টা পর আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে কিন্তুু ককটেল উদ্ধারের জব্দতালিকায় বর্ণিত সাক্ষি, কথিত ঘটনাস্থলের দোকানদাররা এসআই নুরুজ্জামানের মামলার কথিত ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাঁদের সামনে বিএনপির ওই নেতা কর্মীদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাঁদের কাছ থেকে ককটেল বা লাঠি জব্দ করতেও তোঁরা দেখেননি। নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান তালুকদার জানান, ২১ অক্টোবর সকালে তিনিসহ বিএনপির ১৪ নেতা কর্মী নলডাঙ্গা থেকে নাটোর শহরে জেলা বিএনপির কালোপতাকা মিছিলে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। পথে শিবপুর-বউবাজার সড়ক থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের সবাইকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকেসহ তিনজনকে ছেড়ে দেন। বাঁকিদের নাটোর সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন গত (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাঁদেরকে নলডাঙ্গা থানার একটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নলডাঙ্গা আমলী আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদেরকে জেল হাজতে পাঠায়। তাঁরা মামলার নকল উঠিয়ে দেখেন, নলডাঙ্গা থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় ২১জনসহ অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে আটক হওয়া ১১ জনের নাম রয়েছে এবং তাঁদেরকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নলডাঙ্গার ত্রিমোহনী ব্রিজের উত্তর পাশে তিন রাস্তার মোড়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় জব্দ তালিকার বর্ণিত সাক্ষিদের সামনে পুলিশ আসামিদের কাছ থেকে পাঁচটি অবিস্ফোরিত ককটেল ও কয়েকটি লাঠি উদ্ধার করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। আতিকুর রহমানের দাবি, এটি একটি গায়েবী মামলা। মামলার বক্তব্য শতভাগ মিথ্যা ও কাল্পনিক। বাদি ও ভূক্তভোগীদের বক্তব্য যাচাই করতে এই প্রতিনিধি মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে মামলার ঘটনাস্থল ত্রিমোহনী মোড়ে যান।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়,ঘটনাস্থলে অন্তত ১১টি দোকান রয়েছে। কথিত ঘটনাস্থল লাগোয়া তোতা মিয়ার চায়ের দোকান। তোতা মিয়া (৬০) জানান, রোববার (২১ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে তিনি দুপুর পর্যন্ত দোকানে ছিলেন। ওই সময় ত্রিমোহনী মোড় থেকে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। ককটেল উদ্ধারের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। মোড়ের মুদি দোকানি আহাদ আলী (২৫) জানান, তিনি সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দোকানে ছিলেন। ওই সময় ত্রিমোহনী মোড় থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে বা ককটেল উদ্ধার করতে তিনি দেখেননি। রাস্তার পাশের পান বিড়ির ঢোপ দোকানের দোকানদার বাহার আলী বলেন, রোববারের দিন আমি সকাল ১১টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম। ওই সময় আমাদের মোড়ে পুলিশ আসেনি। ককটেল উদ্ধারের ঘটনাও দেখিনি। তবে আজ (২৩ অক্টোবর) নলডাঙ্গা থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা এখানে এসে দোকানদারদের নাম ঠিকানা লিখে নিয়ে গেছেন। ত্রিমোহনী মোড়ের প্রায় তিনশ’ গজ দক্ষিণে ব্রীজের ওপারের মুদি দোকানি লাল মিয়া (৫৫)।

এই মামলার ককটেল উদ্ধারের জব্দ তালিকায় তাঁর সাক্ষর নেওয়া হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি তো এ রকম কোনো ঘটনা দেখিওনি, জানিও না। গত শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নলডাঙ্গা থানার পুলিশ ত্রিমোহনী মোড়ে এসেছিল। সেখানে আমি ও আমার গ্রামের অমর আলীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলাম। ওই সময় গ্রামের শাহীন নামের এক তরুণকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ আমাদের দুইজনের কাছ থেকে সই নেয়। এর দুই দিন পর (২২ অক্টোবর) আমাদের নলডাঙ্গা থানায় ডাকা হয়।

আমরা সেখানে গেলে পুলিশ শাহীনকে গ্রেপ্তারের কারণে আবারও আমাদের সই লাগবে বলে জানায়। আমরা সরল বিশ্বাসে আবারও সই করে বাড়ি চলে আসি।’ তাঁর সামনে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসবের আমি কিছুই জানি না।’ জব্দ তালিকার অপর সাক্ষি অমর আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোববার সকালে আমি ত্রিমোহনী মোড়ে যায়নি।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.