নাটোরে কেউ কি নেই যে অসহায় প্রতিবন্ধী শাওনের প্রতি ন্যায় বিচার করবে? এতো বড় অন্যায় আল্লাহ সইবে না ——

বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি: বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আইনের হাত অনেক লম্বা। এসব চিরন্তন বাণীর রূপ দেখতে এবং ক্ষমতার দম্ভ আর আর্থিক প্রতাপশালীদের কাছে মাথা নূয়ে দাঁড়ানোর চিত্র দেখতে হলে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড়ের মাছেম সুপার মার্কেটে যেতে হবে।

এই মার্কেট হওয়ার অনেক আগে থেকেই এখানে খাবার হোটেলের ব্যবসা করছে শাহ আলম। মার্কেট হওয়ার পর নিজের সবটুকু সম্পদ বিক্রি করে আবুলের হোসেনের স্ত্রী শাহানা বেগমের নিকট থেকে  দুটি দোকানের পজিশন  কিনে ” শাওন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ” চালু করেন। তিনযুগের হোটেল  ব্যবসা চালিয়ে তেমন কিছু করতে পারেনি তিনি। কোনমতে ৬ সদস্যের সংসার চালিয়ে আসছিল।

 ১২ বছর আগে দুর্ঘটনায় স্পাইনাল কোডে আঘাত পাওয়ায় বড় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শাওন এখন প্রতিবন্ধী।   প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা করাতে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
থাকার মধ্যে আছে একখন্ড মাথাগোঁজার ঠাঁই আর হোটেলটি। ইতিমধ্যে উপার্জনের একমাত্র সম্বল হোটেলটি  রক্ষা করতে গিয়ে দুইবার স্টোক করে শয্যাশায়ী হয়েছেন শাহ আলম। বড় ছেলে হিসেবে প্রতিবন্ধী শাওনই এখন হোটেল পরিচালনা করে আসছে।
হোটেলের পাশ দিয়ে জেলা পরিষদের একটি রাস্তা রয়েছে যা মাদ্রাসা মোড় হতে নারদ নদী  পর্যন্ত গিয়েছে। হোটেলটির পাশে থাকা সরকারী সামান্য পরিত্যাক্ত জমি রয়েছে যা হোটেল মালিক শাহ আলম গত দুই যুগ ধরে ভোগদখল করে আসছিল। আনুমানিক তিন বছর পূর্বে মাদ্রাসা মোড়ের আসকান আলীর ছেলে জুয়েলের লোভাতুর চোখ যাই সরকারী জায়গাটির দিকে।
পৌরসভা থেকে লীজ নেয়া হয়েছে বলে দাবী করে হোটেল সংলগ্ন জায়গায় প্রাচীর নির্মান করে দখলে নেয় তিনি । হোটেল মালিকের অনুমতি না নিয়েই জুয়েল অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক হান্ডিখানা ভেঙ্গে ফেলে এবং শাহ আলমের পজিশনে দ্বোতলায় উঠার সিড়ি তৈরী করে।
যা দেখে প্রতিবাদ করার সময় শাহ আলম প্রথম ব্রেন স্টোকে আক্রান্ত হয়। জীবন বাঁচাতে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ভারতের বেঙ্গলোরে নেয়া হয়। এই সুযোগে জুয়েল এবং তার ভাইয়েরা সরকারী খাস জায়গায় অবৈধ ভাবে ছাদ ঢালাই রুম  তৈরী করে ভাড়াটিয়া খুজতে থাকা।
হোটেল ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থে রুমটি ভাড়া নিতে বাধ্য হয়। ভাড়া নেওয়ার চুক্তি হওয়ার সময় ধার করজা করে জুয়েলের হাতে প্রতিবন্ধী শাওন প্রথমে ৫ বছরের জন্য  জামানাত হিসেবে দেয় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা  স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করে এবং বাঁকি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য ৬ মাস সময় বেঁধে দেয় শাওন কে। ৬ মাস পরে বাঁকি দেড় লাখ টাকা দিতে অসুস্থ বাবা কে নিয়ে জুয়েলের কাছে যাই শাওন।
দেড়লাখ টাকা হাতে পাওয়ার পর আগের ৫ বছরের চুক্তিপত্রটি জুয়েল ছিড়ে ফেলে এবং ক্ষমতার জোর দেখিয়ে নতুনভাবে  ৩ বছরের  জন্য ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করে। এদৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলেই শাহ আলম দ্বিতীয় বার ব্রেন স্টোক করে।
স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের সম্মুখে চুক্তি হয় পৌরসভার প্রয়োজনে রুমটি ভাঙ্গা পরলে চার লাখ টাকা ভাড়াটিয়াকে  ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে জুয়েলের অবৈধ নির্মিত ঘরটি রাস্তা নির্মানের জন্য পৌরসভা ভেঙ্গে ফেলে। ভেঙ্গে ফেলার সাত মাসে ও প্রভাবশালী জুয়েল প্রতিবন্ধি শাওনকে জামানাতের টাকা ফেরত দেয়নি। জামানাত টাকা ফেরত চাইলেই অসহায় শাহ আলমকে গালিগালাজ ও মারপিট এবং হুমকি ধামকি দেয়া হয়।
গত মার্চ মাসে নাটোর পৌরসভার সম্মানীত মেয়র উমা চৌধুরী জলি সহ কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন, নান্নু শেখ সহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে অসহায় শাহ আলমের পরিবারকে তিন মাসের মধ্যে জামানাতের টাকা ফেরত দিতে বলে। তারা রায় মেনেই নিলেই ৬ মাসেই টাকা পরিশোধ করেনি।
উল্টো হোটেলটির পজিশনের বারান্দায় জোরপূর্বক পানের দোকান বসিয়ে ভাড়া দিয়ে হোটেল মালিক অসহায় শাহ আলমকে উৎখাতের পায়তারা চালাচ্ছে। প্রতিবন্ধী পরিবারটি জিল্লুর শেখ জুয়েলের অন্যায় অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পরেছেন। বর্তমানে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে শাওন, বিছানাগত শাহ আলম ও তার অসুস্থ সহধর্মিণী নিয়ে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছে।
প্রতিবন্ধী এই পরিবার নিজের রুটি রোজীর একমাত্র অবলম্বন  রক্ষা করতে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে ঘুরলেও কোন সুফল পায় নি। অবশেষে এই অসহায় পরিবারটি আয়ের একমাত্র উৎস  রক্ষার দাবীতে রাস্তায় এসে দাড়াতে বাধ্য হয়।
পরিবারটির এমন অসহায় অবস্থা দেখে এলাকার কিছু সহৃদয় ব্যক্তি জুয়েলের এ হীন অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেন। গতকাল রোববার জোরপূর্বক শাওনের হোটেলের পজিশনে পান দোকান বসানোর চেষ্টা করলে বাঁধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে শাওনের ঠিক মতো হাত পা চলে না সেই প্রতিবন্ধীর নামে সদর থানায়  পানের দোকান রুস্তমকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে।
ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার, এলাকাবাসী ও সরেজমিন অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে,শহরের মাছেম সুপার মার্কেটে হোটেল  ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান করে কোনো রকম জীবনযাপন করে আসছিলেন শাহ আলম ।
জুয়েলের ফুপুর মালিকানাধীন দুটি দোকান ঘর নিয়ে শাওন হোটেল চালিয়ে আসছে। এখানে আসকান আলী এবং তার ছেলেদের কোন জায়গা নেই। এরই মধ্যে সম্পুর্ণ অন্যায়ভাবে শাহ আলমের দখলে থাকা খাস জায়গাটি দখলের জন্য এলাকার প্রভাবশালী আসকান আলী এবং তাঁর পুত্র জুয়েল মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ওই জায়গায় পান সিগারেটের দোকান হিসেবে ভাড়া দেয়।  শুধু তাই নয়, মার্কেটটিতে আসকানের মালিকানায় একটি মাত্র দোকান রয়েছে।পুরো জায়গাটি তার নিজের বলে দাবি করে অসহায় পরিবারটির প্রতি বিভিন্নভাবে হয়রানি শুরু করেছে। ভূমিদস্যু জুয়েলের হুমকি ধামকির ফলে শারীরিক প্রতিবন্ধী শাওন হোটেলটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। চার সন্তানের সন্তানের জনক অসহায় শাহ আলম কান্নাজড়িত কন্ঠে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আসকান, ছেলে জুয়েল ও জিন্না জবরদখলসহ উৎখাতের পায়তারা চালাচ্ছে। প্রতিবন্ধী পরিবারটি অন্যায় অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পরেছেন।
চারদিন ধরে একমাত্র আয়ের উৎস্য হোটেলটি বন্ধ রয়েছে।  বর্তমানে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছে অসহায় পুরো পরিবার। কেউ কি নেই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন নাসিম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.