নাটোরে এস্কেবেটার মেশিনে কাবিখার কাজ- বঞ্চিত শ্রমিকরা


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে কাজের বিনিময়ে টাকা প্রকল্পে এস্কেবেটার মেশিন দিয়ে কাজ করে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এস্কেবেটার মেশিন দিয়ে কাজটি করার ফলে কর্ম থেকে বঞ্চিত হয়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ৫৬টি প্রকল্প এলাকার মাঠ পর্যায়ে গিয়েও এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে। জনপ্রতিনিধি এবং উপকারভোগীরা বলছেন, কিছু অসৎ কর্মকর্তার প্রকাশ্য চুরির কারণে সরকারের ভালো উদ্যোগের ফল পাচ্ছেন না হাজার হাজার শ্রমজীবী। অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক।
জানা যায় ,২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারের কাজের বিনিময়ে টাকা কাবিটার আওতায় নাটোর সদর উপজেলায় ৭১টি প্রকল্পে প্রায় ১কোটি সাড়ে ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।দরিদ্র মানুষের সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর জন্যই সরকারের এ প্রকল্পগুলো। কঠোর নির্দেশনা থাকলেও প্রকল্পের কাজ চলছে মেশিন দিয়ে। অথচ শ্রমিকদের কথা বলে বরাদ্দের টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। এমনকি কাজ করা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের পর।
করোটা খাল সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি এবং দিঘাপতিয়া ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোজাফফর হোসন বলেন, খাল খননের কাজ শুরু করেছেন ১লা তারিখে। তিনি বলেন কাজ শুরু করার আগে দুই দফায় টাকা উত্তোলন করেছেন। কাজ শেষ করলে বাঁকি টাকা দেবে পিআইও অফিস। খাল কাটতে ভেকু ব্যবহার করা যাবে না এবং শ্রমিক দিয়েই কাটতে হবে এমন কথা কেউ বলেনি তাকে। অফিসের সাথে কথা বলেই এভাবে খাল কাটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বিটিসি নিউজকে বলেন, কাবিখা প্রকল্পে শ্রমিকের পরিবর্তে মেশিন দিয়ে মাটি কাটার অনেক ঘটনা ঘটছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েও সেসব বন্ধ হচ্ছে না। শ্রমিকের বদলে মেশিন দিয়ে মাটি কাটলে তা হবে বড় ধরনের দুর্নীতি এবং সরকারের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। এমন অনিয়ম সেসব প্রকল্পে হয়েছে সেসবের বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত হয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান আরো বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা এবং জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার যোগসাজশে সকলেরই চোখের সামনে জনগণের অর্থ আÍসাৎ হচ্ছে অথচ সবাই চেয়ে চেয়ে দেখছে।
এদিকে প্রকল্পের টাকায় পুকুর বা জলাশয় ভরাট করার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চাঁদপুর গ্রামের উত্তরবঙ্গ শিশু উন্নয়ণ প্রকল্পর কার্যালয়ের পাশে পুকুর ভরাট চলছে এ প্রকল্পের টাকায়। এমনকি বাইরে থেকে মাটি কিনে ফেলা হচ্ছে এখানে। খরচ ১লাখ টাকা হলেও তুলে নেয়া হয়েছে বরাদ্দের ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
এই প্রকল্পের সভাপতি পলাশ বারৈ বলেন, কত টাকা বরাদ্দ তিনি জানেনই না। অফিসের লোকজন তুষার নামে এক ঠিকাদার ঠিক করে দিয়েছে তারা মাটি দিয়ে পুকুর ভরাট করে দিচ্ছে তাতেই তারা খুশি। চেক উত্তোলন করেন আর ঠিকাদারকে সব টাকা দিয়ে দেন বলেন জানান পলাশ বারৈ।
এবিষয়ে ঠিকাদার তুষারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প কমিটির চাহিদা অনুযায়ী ১০০ ট্রাক মাটি ফেলা হচ্ছে আর টাকা আমরা নিয়ে নিচ্ছি। কমিটির লোকেরা আরও মাটি চাইলে দেবেন বলে জানান তিনি।
আরেক প্রকল্প চন্দ্রকলা পূর্বপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থানের প্রাচীর নির্মাণ ও মাটি ভরাট কাজে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কমিটি ও গ্রামবাসী জানে মাত্র এক লাখ টাকার কথা।
গোরস্থান কমিটির সভাপতি বিশারদ উদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, ১ লাখ টাকা বরাদ্দের কথা শুনেছেন তিনি। প্রকল্প কমিটির সভাপতি ২নাম্বার শ্রেণির ৭ হাজার ইট দিয়েছে যার দাম ৭০ হাজার টাকা। বাকি কাজ গ্রামবাসী চাঁদা তুলে করেছে।
প্রকল্প কমিটির সাধারণ স¤পাদক শামীম হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রকল্প সভাপতি আনোয়ার শুধু তার সই নিয়েছেন বরাদ্দ কত বা কিভাবে খরচ হচ্ছে কোন কিছুই তার জানা নাই।
এসব অনিয়ম অস্বীকার করে প্রকল্প সভাপতি আনোয়ার বিটিসি নিউজকে বলেন, ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দের কথা সবাই জানে। কাজ চলমান আছে, গোরস্থান কমিটি আরও টাকা চাইলে দেবেন তিনি।আর সূত্রধরপাড়ার রাস্তা সংস্কারের বরাদ্দ ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্প সভাপতি হেলেনের মেম্বার জানেনই না কিভাবে হচ্ছে সেই কাজ।
৭১টি প্রকল্পের মধ্যে প্রায় সবগুলো প্রকল্প ঘুরেই দেখা গেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। নীতিমালায় প্রকল্পের সাইনবোর্ড দেয়ার কথা থাকলেও কোন প্রকল্পেই নেই সেই সাইনবোর্ড
এত অনিয়মের পরও প্রকল্পের তদারকিতে নিয়োজিত নাটোর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওমর খৈয়াম অনিয়মের পক্ষেই সাফাই গাইছেন। তিনি বলছেন, করোনার কারণে শ্রমিক না পাওয়ায় কিছু প্রকল্পে মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। তবে তারা জানতে পেরে সেসব বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সব অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বিটিসি নিউজকে বলেন সরকারের কোনো প্রকল্পে অনিয়ম সহ্য করা হবে। দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.