নাটোরে এনজিও কিস্তির জালে বন্দি জীবন, মানা হচ্ছে না সরকারী নির্দেশনা

নাসিম উদ্দীন নাসিম: (বিশেষ প্রতিনিধি): নাটোরে বিভিন্ন এনজিও আদায় করছে কিস্তির টাকা। তারা মোবাইলে ফোন করে চাপ সৃষ্টি করা সহ কর্মচারী পাঠিয়ে টাকা আদায় করছে। এই কাজে বড় বড় এনজিও সহ নাটোরের ক্ষুদ্র এনজিও গুলো রয়েছে।

তবে এনজিও গুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে তারা কোথাও চাপ সৃষ্টি করছেন না। তবে কেই ইচ্ছাকৃতভাবে কিস্তির টাকা প্রদান করলে টাকা গ্রহণ করছেন।

জেলার সকল উপজেলায় একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। জানা যায় , নাটোরের আশা, র্ব্যাক , প্রশিকা, টিএমএসএস, আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, লাস্টার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, কৈননিয়া, আলো, উত্তরা ডেভলপমেন্ট সোসাইট,গ্রামীণ ব্যাংক, আরআরএফসহ নানাটোর জেলায় বিভিন্ন এনজিও কিস্তির টাকা আদায় করছে। তবে কৌশল গতভাবে ভিন্নতা অবলম্বন করা হচ্ছে। পূর্বে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হলেও এখন ফোন করে অথবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

হরিশপুর এলাকার সালেহা বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আশা থেকে তিনি ঋন নিয়েছিলেন। সে টাকা দিতে চায়নি বলে তার সঞ্চয় থেকে পাওনা টাকা কেটে নিয়েচে। তেবাড়িয়ার রাবেয়া বেগম জানান, তিনি উত্তরা ডেভলপ মেন্ট সোসাইটি থেকে ঋন নিয়েচিলেন। আজ বাসায় এসে মাঠ কর্মি বলে গেছেন আগামি সপ্তাহ থেকে তাকে টাকা দিতে হবে।

স্টেশন বড়গাছা এলাকার শবনম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তিনি গ্রামিণ ব্যাংক থেকে ঋন নিয়েছিলেন। তারা হুমকি দিয়েছে আগামি সপ্তাহ থেকে টাকা না দিলে ব্যবস্তা নিবে। অপরদিকে কান্দিভিটা মহল্লার ফেন্সি ও বেবী জানান, তারা এসএসএস থেকে ঋন নিয়েছিলেন।এখন আগামি সপ্তাহ থেকে কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। একই এলাকার বিপাশা জানান, তার

ছেলের চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে আশা ও র্ব্যাক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। এখন দুটি সংস্থাই কিস্তির টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন ছেলের চিকিসা করাবেন নিজেরা খাবেন না এনজিও র কিস্তি দিবেন। এমন অভিযোগ অসংখ্য মানুষের।

হযরত আরী নামে একজন ব্যক্তি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তাকে বলা হচ্ছে কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য। না হলে টাকার পরিমাণ বেড়ে যাবে ভবিষ্যতে লোন পাবেন না বলে ভয় ভিতী দেখাচ্ছেন।

তিনি বলেন, পেশায় একজন অটোচালক। গত দুই মাস বসে থেকে ধার দেনা করে সংসার চালিয়েছেন। এখন অটো চালানো শুরু করলেও আয় কমে গেছে। ধার দেনা কিচু কিছু করে পরিশোধ করে সংসার চালাতেই হিমসীম খাচ্ছেন।

এ অবস্থায় কিস্তির টাকা দিব কোথায় থেকে। তিনি বলেন, সরকার জুন মাস পর্যন্ত এনজিও ঋন পরিশোধ করা লাগবেনা বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে এরা টাকা চাচ্ছে কেন?ছাতনী মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, টিএমএসএস থেকে লোন নিয়েছিলাম। এ সপ্তাহে কিস্তিদিতে বাধ্য করেছে তারা। শুধু আমি না, আরও অনেকেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এনজিওর কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়েও তারা বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় তারাও চোখে অন্ধকার দেখছেন। তিনি বলেন, র্ব্যাক, প্রশিকা, টিএমএস, আশার মত বড় বড় এনজিও যেখানে টাকা তুলছেন, সেখানে আমাদের মত ছোট ছোট সংস্থার টাকা আদায় বন্ধ রেখে আমাদের বেতন ভাতা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এক ঋণগ্রহীতা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এরপরও এনজিওগুলোর মাঠকর্মীদের চাপ ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ ঋণগ্রহীতা।

নাটোর পৌর শহরের রিক্সা চালক তেবাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ মজিদ মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তাঁর পরিবারে ৮ জন সদস্য। প্রতি সপ্তাহে এনজিও’র কিস্তি দিতে হয় ১৪শ টাকা।তিনি বলেন, বর্তমানে শহরে মানুষ কমে গেছে এখন তার আয় নাই। কি করে সংসার চলবে আর এনজিওর কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করবে এ নিয়েই তিনি চিন্তিত।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিয়মিত কিস্তি নিচ্ছে এনজিওগুলো। এনজিওগুলোর প্রতিনিধিরা স্বীকার করেন সরকার জুন মাস পর্যন্ত এনজিও কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। একারণে আমরা কাউকে কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি করছিনা। যেহেতেু আমাদের অফিস খোলা রয়েছে সে কারণে আমরা কিস্তির টাকা গ্রহণ করছি।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সরকার জুন পর্যন্ত এনজিওর কস্তি তুলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এরপরেও যদি কেই কিস্তর টাকা তুলেন, অভিযোগ দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্তা নেওয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন নাসিম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.