নাটোরে উন্মুক্ত বিলে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের চলনবিলে উন্মুক্ত হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক পরিবার। আত্ম প্রত্যায়ী এসব পরিবারের সদস্যরা তাঁদের সংসার থেকে অভাবের কালো ছায়া দুর করে এনেছেন সুখ আর স্বাচ্ছন্দ।
অনেকেই তাদের এই উদ্যোগকে অনুসরন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। হাঁস পালন অপেক্ষা কৃত কম পুঁজিতে বেশি লাভ জনক। বিল-জলাশয় ও নদীর উন্মুক্ত পানি থাকায় সেখানে হাঁস পালন বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। পাশাপাশি ডিম মিলছে ভালো।
সিংড়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, গুরুদাসপুর উপজেলায় ছোট–বড় মিলে ২০০টি হাঁসের খামার রয়েছে। ক্যামবেল, ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের ১০ লাখের বেশি হাঁস পালন করা হচ্ছে এ সব খামারে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বেশি ডিম দেওয়ার কারণে ক্যামবেল জাতের হাঁস বেশি পালন করা হচ্ছে। বর্ষায় চলনবিল ও শুকনো মৌসুমে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নন্দকুঁজা, আত্রাই ও গুমানীনদ–নদীতে এসব হাঁস পালন করে থাকেন খামারিরা।
হাঁস পালনে সাবলম্বী হওয়া এসব পরিবার বছরের পুরোটা সময় হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মূলত হাঁসের ডিম বিক্রি করেই সংসারের অভাব অনটন মেটায় ঐ পরিবার গুলো। তা ছাড়া ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচের যোগান দেয়া হয়।
চলনবিলের সিংড়া উপজেলার শতাধিক পরিবারের উপার্জনের একমাত্র পথ হাঁস পালনে। সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অনেক পরিবার নিজ উদ্যোগে উন্মুক্ত বিলে হাঁস পালন করে আসছেন।
এর মধ্যে ডাহিয়া, আয়েশ, বিয়াশ,বলিয়াবাড়ী, কালিনগর, কৃষ্ণনগর, আনন্দনগর, সাতপুকুরিয়া, হিজলী, কান্তনগর গ্রামের অনেক পরিবার হাঁসপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
চলনবিল– অধ্যুষিত সিংড়ার আনন্দ নগর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। দিন মজুরি করে চালাতেন ছয় জনের সংসার। সেই অবস্থায় বছর খানেক আগে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করা টাকায় শুরু করেন হাঁস লালন–পালন। সেই হাঁসে ঙ করে তাঁর সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। বছর জুড়ে হাঁস পালন করেন তিনি। এখন তাঁর খামারে ক্যামবেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ডিম দিচ্ছে ৪৮০টি হাঁস। বছরে খরচ বাদে লাভ হচ্ছে তিন-চার লাখ টাকা।
জানা যায় ,সকাল থেকে হাঁস গুলো বিলে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সারাদিন কখনও পানিতে কখনও ডাঙ্গায় হাঁস চড়তে থাকে। দিনঙহাঁস দেখাশুনা করার জন্য রাখাল রাখা রাখা হয়। সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে বিলের এক পাশে জাল দিয়ে ঘেরা এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে হাঁস গুলোর রাত্রি বাসের ব্যবস্থা। সকাল হলে আবার বিলে নেয়া হয়। এ ভাবেই দিন যায়। যেহেতু বিলে চড়ানো হচ্ছে বলে হাঁসেদের খাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোন খরচ নেই। কেবল মাত্র একদিন বয়সের বাচ্চা কেনা, ঔষধ পত্র, লোক বলের খরচ। কাজেই তার এই খামাড় অত্যন্ত লাভ জনক। কোন সহযোগিতা ছাড়াই এসব পরিবার সাবলম্বী হয়ে উঠছে।
তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আরো অনেকেই হাঁসপালনে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে জানান তারা। কালিনগর গ্রামের মন্টু আলী বলেন, সমিতি থেকে লোন নিয়ে হাঁসপালন করছি। কিন্ত সরকারিভাবে কোন লোন পাইনি। একটি বাড়িএকটি খামারের উপকার ভোগীরা সরকারি ভাবে সহয়োগিতা পেলেও তারা টাকা কাজে লাগান না বলে অভিযোগ করেন।
মন্টু আলী আরও জানান, সে হাঁস পালনে সংসার চালান। তার গত বছর কলেরা রোগে ২০০টি’র মত হাঁস মরে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন। তবে বর্তমানে নতুন ৭০০টি হাঁস কিনে পালন শুরু করেছেন। ডিম বিক্রি করে লোকসান পুষিয়ে নিয়েছে।
কৃষ্ণ নগর গ্রামের সাদ্দম হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ১০ বছর থেকে হাঁস পালন করে আসছি। বর্তমানে ১ হাজার টি হাঁস রয়েছে। হাঁস পালন করে জীবিকা র্নিবাহ করছি।
কালিনগর গ্রামের রমিজুল করিম বলেন, প্রায় ২০বছর থেকে হাঁস পালন করে আসছি। এটি অনেক লাভ জনক। ৪০০টি হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন ২৫০/৩০০টি ডিম বিক্রি করা হয়। ডিম ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।
রমিজুল করিম আরেক জন খামারী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সারা বছর হাঁস পালন করেন। হাঁসের খাবার মেটানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ভাবে খামার স্থাপন করেন। প্রকৃতিক ভাবে খাবার মেটানো খরচ কম হয়। শুধু পরিশ্রম বেশি হয়, তবে লাভ বেশি হচ্ছে। কথা হয় কয়েক জন ডিমে আড়ৎ দারের সাথে।
তারা জানান, প্রতিদিন তারা কয়েক হাজার ডিম কিনে নেন এবং তা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সাধারণত এক দিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করে থাকেন খামারিরা। ছয় মাস পর এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাড়তি খাবার কম লাগে। তা ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমও মেলে বেশি। খরচ বাদে একজন খামারি প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন। ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের এ সব মানুষ কম পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন। ফলে বেকারত্ব ঘুচছে। মিলছে আমিষের চাহিদাও। হাঁস পালনে খামারিদের সরকারি ভাবে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.