নাটোরের সিংড়ায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আ.লীগের এক পক্ষের চার ঘন্টাব্যাপি হামলা, ভাংচুর -লুটপাটের অভিযোগ


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালি ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত চার ঘন্টাব্যাপি সিংড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের এক পক্ষের অভিযোগ, হামলাকারী ব্যক্তিরা তাঁদের দোকান, বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে বীরদর্পে এলাকা ত্যাগ করে ।
পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার বিকেলে পাকুড়িয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিয়োগ করাকে কেন্দ্র করে গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আলিফ হোসেন এবং সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এর জেরে গতকাল বিকেল চারটার দিকে আলিফ হোসেনের নেতৃত্বে ২৫০ থেকে ৩০০ লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে নিয়ে পাকুড়িয়া বাজারে হামলা করেন। এ সময় হামলাকারী বাজারের অন্ততপক্ষে সাতটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করেন।
হামলাকারীদের বাঁধা দিতে গেলে স্থানীয় দরিদ্র চা-বিক্রেতা রনিকে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একই সময় হামলাকারীরা বাজারের পাশে অবস্থিত আইনজীবী মানিক লাল চক্রবর্তীর বাড়িতে হামলা করেন এবং আসবাব ও মামলার নথিপত্র তছনছ করা হয়। এ সময় হামলার প্রতিবাদ করলে আইনজীবী মানিক লালের ছোট ভাই ও সাবেক ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মুক্তা লাল চক্রবর্তীকে মারটি করা হয়।
প্রায় চারঘন্টা ঘণ্টা নারকীয় তান্ডব চালানোর পর হামলাকারী সন্ধ্যা সাতটার দিকে গ্রাম ছেড়ে যান। পরে সিংড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যার পর নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মানিক লাল চক্রবর্তী বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে আওয়ামী লীগ করি। গত উপজেলা নির্বাচনে আমরা নৌকার প্রার্থী শফিকুল ইসলামের শফিকের পক্ষে ছিলাম। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আদেশ আলীর পক্ষ নেন।
এ ছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইটালি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেনের পক্ষে ভোট করি। তাঁর প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন বর্তমান সদস্য আলিফ হোসেন। এসব কারণে ইটালি ইউপির চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম ও তাঁর সমর্থকেরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাঁরা যেকোনো বিষয়ে গ্রামে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতেন।
মানিক লাল অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বিকেলে প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে ক্যাডার ভাড়া করে গ্রামে হামলা চালিয়েছেন। হামলার সময় তিনি ও তাঁর ভাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সময়মতো সাহায্য করেনি বলে তিনি দাবি করেন।
সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রতিপক্ষরা আমার দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। আমি পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি।
তবে আলিফ হোসেন হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গতকাল গ্রামে এলে তাঁদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। এর জেরে কিছু ঘটনা ঘটতে পারে, তবে তিনি সেখানে ছিলেন না বলে দাবি করেন।
ইটালি ইউপির চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন , সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে আমার বোধগম্য নয়।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান , ৯৯৯-থেকে কল পাওয়ার পর প্রস্তুতি নিতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। কারণ, ঘটনাস্থল এখান থেকে অনেক দূরে। এ ছাড়া আমাদের আন্তরিকতার অভাব ছিল না। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.