নাটোরের সাত রাজকন্যার গ্রাম খাজুরা লাহিড়ীপাড়া


নাটোর প্রতিনিধি:  উদ্যোগ ও সংরক্ষনের অভাবে নাটোরের সাত রাজকন্যার গ্রাম নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা লাহিড়ীপাড়ার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।

সংরক্ষণের অভাবে লাহিড়ী পাড়া গ্রামের শতর্বষী মঠ মন্দির গুলো ধ্বংসের দারপ্রান্তে ।এক সময় এই গ্রামে ২২ জমিদারের বাস ছিল। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী নাটোরের রানী ভবানীর কন্যা সহ ৭ রাজকন্যার বিয়ে হয় এই গ্রামের ৬ জমিদার পুত্রের সাথে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হলে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ফলে পর্যায়ক্রমে এসব জমিদার পরিবার তাদের বসতবাড়ি ফেলে রেখে ভারতে চলে যান। তাদের ফেলা যাওয়া বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও দইু’একটি বাড়ির চিহ্ন এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তবে এইগুলো এখনো অতীত ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। জমিদারদের বংশধরদের কেউ কেউ এখনও এই গ্রামে বাস করলেও তাদের সাধারনভাবেই জীবন কাটাতে হচ্ছে।

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিশাল হালতি বিলের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে এই খাজুরা লাহিড়ী পাড়া গ্রাম। সাত রাজকন্যার গ্রাম বলেই অধিক পরিচিত এই গ্রাম। জেলা সদর থেকে এই গ্রামের দুরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার ।

নলডাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে এর দুরত্ব প্রায় সমপরিমান। এই গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। এই গ্রামের ৬ জমিদার পুত্র শামাকান্ত লাহিড়ী,উম্মেকা কান্ত লাহিড়ী,সুরেন্দ্র নাথ লাহিড়ী,রঘুনাথ লাহিড়ী,সুরেন্দ্র মোহন লাহিড়ী ও জীতেন্দ্র নাথ লাহিড়ীর ঁ এর সাথে ৭ রাজকন্যার বিয়ে হয়।

স্থানীয়রা বিটিসি নিউজকে জানান,নাটোরের মহারানী রানী ভবানীর একমাত্র মেয়ে রাজকন্যা তারা সুন্দরীর বিয়ে হয় এই গ্রামের জমিদার রঘুনন্দন লাহিড়ীর সাথে।

জমিদার শামাকান্ত লাহিড়ী বিয়ে করেন দুই রাজকন্যাকে। প্রথম স্ত্রীর কথা কেউ বলতে না পারলেও শামাকান্ত লাহিড়ীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার জমিদার কন্যা ইন্দুবালা।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর জমিদারপ্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর জমিদারদের স¤পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করে । এসময় অনেকেই ভারতে চলে যান। জমিদারদের দুই একজন বংশধর এখনও সেই স্মৃতি ধরে রেখে জীবন পারি দিচ্ছেন। প্রায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এসব পরিবার।

জমিদার শ্যামাকান্ত লাহিড়ীর বংশধর রনজিত কুমার লাহিড়ী বলেন,তার দাদু শামাকান্ত লাহিড়ী বিয়ে করেন দুই রাজকন্যাকে। তাদের দুজনায় ছিলেন ময়মনসিং জেলার।

প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ময়মনসিং জেলার মুক্তাগাছার জমিদার কন্যা ইন্দুবালাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার দাদু। তাদের পাশের জমিদার উম্মেকা কান্ত লাহিড়ী বিয়ে করেন তাহেরপুরের জমিদার কন্যাকে।

তার দাদু শামাকান্ত লাহিড়ী জীবিত থাকাকালীন সময়ই জমিদারপ্রথা উচ্ছেদ হয়।

দাদুর মৃত্যুর পর তার বাবা নরেশকান্ত লাহিড়ী জমিজমা বিক্রি করে বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। পরে সরকার জমিদার স¤পত্তি অধিগ্রহণ করলে তাদের পরিবারের দুর্গতি নেমে আসে।

যে টুকু আছে তাও সংস্কারের অভাবে ধংস হয়ে যাচ্ছে। এখন কোনভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী মামুনুর রশীদ এবং ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ও স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সুকুমার দাস বিটিসি নিউজকে জানান,দেশ ছেড়ে যাওয়ায় ওই জমিদারদের জমিজমা ও বাড়িঘর প্রায় দখল হয়ে গেছে।

রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সেগুলো ধংস হয়ে যাচ্ছে । সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে লাহিড়ীপাড়া গ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য। তারা জমিদারদের ইতিহাস সহ জমিদারদের স্মৃতি সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছেন।

একই সাথে তারা সাত রাজ কন্যার গ্রাম হিসেবে পরিচিত খাজুরা লাহিড়ী পাড়া গ্রামের এই ২২ জমিদারের ইতিহাস সংরক্ষন করে রাজসিক নাটোরের ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করতে দ্রৃত পদক্ষেপ নিতে সরকারের পাশাপাশি প্রতœতত্ত্ব সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান।

একই সাথে তারা এই গ্রামকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের প্রতি দাবী জানান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বিটিসি নিউজকে বলেন,বিষয়টি প্রথমবারের মত জেনেছেন। বিষয়টি জানার পর এলাকায় নিজে সরেজমিন গিয়ে প্রবীন ব্যাক্তি ও জমিদারদের বংশধরদের সাথে কথা বলবেন এবং ইতিহাস সংগ্রহের জন্য একজন শিক্ষককে ওই গ্রামে পাঠাবেন বলে জানান তিনি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.