নাটোরের লালপুরে খাস জায়গা দখল করে পুকুর খনন!


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরের বিলশলীয়া বিলে সরকারী খাস জমি দখল ও দুটি ব্রীজের প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দুটি পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে এক সরকারী কর্মকর্তার স্বজনদের বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ওই সরকারী কর্মকর্তার পরিবার তার প্রভাবকে ব্যবহার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই অবৈধ পুকুরটি খনন করেছেন। যাতে করে ওই বিলের কয়েকশ একর জমিতে বৃষ্টি বা বর্ষা হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে করে দুই তিন ফসলী জমি এক ফসলী ও কোন কোন জমি অনাবাদী জমিতে পরিণত হবে।
তবে পুকুর খননকারীদের অভিযোগ এতে পানি প্রবাহের কোন বিঘœ ঘটবে না, তবে পুকুরের মধ্যে সরকারী জায়গা থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিলশলীয়া বিলের দুটি ব্রীজের মাঝখানে দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। যাতে বন্ধ হয়ে গেছে দুটি ব্রীজেরই প্রবেশ মুখ। এতে করে বৃষ্টি বা বর্ষা হলে পানি প্রবাহের কোন সুযোগ থাকবে না।
এছাড়া স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, খননকরা পুকুরটির মধ্যে খাস জমি রয়েছে। পুকুর মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কারো কোন কথাই তারা কর্ণপাত করেননি।
তারা জানান, স্থানীয় শরীফ আহমেদ লিংকন একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ায় তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা দ্রুত পুকুরটি খনন করে ফেলেছেন। এছাড়া লিংকনের স্বজনরা এলাকার কৃষকদের নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে পুকুর খননকালে প্রতিবাদ করারও সুযোগ দেননি। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করে অভিযোগ দিলেও বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। পরে বিষয়টির সমাধান করতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দাখিল করেছেন।
বিষয়টি খোঁজ নিতে সংবাদকর্মিরা ঘটনাস্থলে গেলে মুর্হুতের মধ্যে জন সমাগমের সৃষ্টি হয়। এ সময় পুকুর খননেন ফলে নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরেন তারা।
এ সময় বিলে জমিতে চাষরত স্থানীয় কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ব্রীজ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় তারা তাদের ফসল শংকিত। বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে তার ফসল ঘরে উঠবে কিনা তাই নিয়ে সংশয়ে আছেন তিনি। এছাড়া বর্ষার পানি নামাতেও বিঘœ ঘটবে বলে জানান তিনি।
ইজাহার আলী নামে আরো এক ব্যক্তি জানান, এই বিলে হাজার হাজার বিঘা কৃষকের জমির পানি প্রবাহ হতো এই ব্রীজের নিচ দিয়ে। কিন্তু পুকুর করায় এই পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এতে তাদের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে এমনকি অনেক জমি অনাবাদী হওয়ার আশংকা করেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকার যেখানে পানি প্রবাহ নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নেবে সেখানে আরো আমাদের বিলের পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করা হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আব্দুল হক নামে আরো একজন কৃষকও বলেন তাদের ফসল আবাদ করা এখন শংকার মধ্যে পড়লো। দুই পাড়েই পুকুর করায় তারা এখন কিভাবে পানি নিষ্কাষণ হবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা।
এদিকে কৃষকদের এমন নানা অভিযোগ ও কষ্টের কথা যখন শুনছিলেন সংবাদকর্মিরা। তখনই একটি বাইক যোগে পুকুর মালিকের ছেলে সহ ৩জন সন্ত্রাসী কায়দায় সেখানে উপস্থিত হয়ে সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এসময় কৃষকরা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠলে সেখানে বাকবিতন্ডার ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে গণমাধ্যমকর্মিদের মধ্যস্ততায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তবে এ সময় সংবাদকর্মিদের সাথে উত্তেজিত হওয়া গোয়ালীপাড়ার শিবলি নামের এক যুবক নিজেকে পুকুর মালিক পক্ষের দাবী করলেও আসলে পুকুর মালিকের সাথে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেননি তিনি। এ সময় তিনি একবার পুকুর মালিকরে ভাই ও আরেকবার লিজগ্রহীতার লোক বলে দাবী করে।
পরে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। ফসলী জমিতে পুকুর খনন বৈধ কিনা বা পাস আছে কিনা জানতে চাইলে প্রথমে পাস ও বৈধতার দাবী করলেও পরে তার ব্যাপারে কোন প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হন সে।
এ সময় পুকুর মালিক শরীফ আহমেদ লিংকনের ছোট ভাই আবু সাঈদ দুলু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সরকারী নিয়ম মেনে তারা পুকুর খনন করেছেন। এতে পানি প্রবাহের কোন সমস্যা হবে না । কারণ পানি প্রবাহের জন্য তারা রিং স্থাপন করেছেন। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে সমস্যা হলে তারা পুকুরের পাড় কেটে হলেও পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করে দেবেন।
এছাড়া পাশে একটি খাল ছিল সেটা পুন সংস্কার করলে পানি প্রবাহে বাধা থাকবে না বলে দাবী করেন তিনি। তবে পুকুরের মধ্যে সরকারী খাস জায়গা থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তার দাবী রাস্তা করার সময় তাদের জমি রাস্তার মধ্যে চলে যাওয়ায় পাশের খাস জমিতে তারা পুকুর খনন করেছেন।
পুকুর খনন ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে তারা পুকুর খনন করেছেন কারণ প্রায় ২০ বছর থেকে তারা জমিতে কোন ফসল পান না।
এদিকে আড়বাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম দাবী করেন, এই দুটি ব্রীজ দিয়ে দুই ইউনিয়নের পানি প্রবাহ হয়। কিন্তু দুটি পুকুর খননের ফলে সেই পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধকতার সৃষ্টি হবে। এরা প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে মানুষকে জিম্মি করে এসব কাজ করে। আজ সন্ত্রাসী নিয়ে হাজির হওয়াই তার প্রমাণ করে।
তিনি বলেন স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি তাই উর্দ্ধতন বিভাগেও অভিযোগ করা হয়েছে। অবিলম্বে এই পুকুর অপসারণ করা না গেলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় কৃষকদের কষ্টের শেষ থাকবে না।
সেখানে উপস্থিত আড়বাব ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পুকুর খননের ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোন মতামত নেয়া হয়না। বরং জানতে চাইলে হুমকি ধামকি প্রদান করা হয়। এ সময় তিনি বলেন এই পুকুর খননের ফলে এলাকার যে ক্ষতি সাধন হবে তা পূরণ করা অসম্ভব। তাই এটা প্রতিরোধ করা না গেলে এলাকার মানুষ চরম ক্ষতিতে পড়বেন।
এদিকে অভিযুক্ত সরকারী কর্মকর্তা ও রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ লিংকন এর সাথে তাঁর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (দায়িত্ব প্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার ভ‚মি শাম্মী আক্তার খাস জমির বিষয়টির ব্যাপারে সত্যত স্বীকার করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছি, ব্রিজের মুখে যে ভাবে পকুর খনন করা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও পানি নিস্কাশনে বাধাগ্রস্থ হবে। আর খাস জমির বিষয়ে মৌখিক ভাবে অভিযোগ পেয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.