নাটোরের লালপুরে কৃষকদের মধ্যে কার্পাস তুলার চাষ বাড়ছে


নাটোর প্রতিনিধি: লাভজনক ও ফলন ভাল হওয়ায় নাটোরের লালপুর উপজেলার বড়াল নদী বিধৌত ৮টি এলাকার কৃষকরা তুলা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। এতে এই এলাকার অনেক দরিদ্র বেকার লোকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই এলাকার কৃষিতে তুলা চাষ একটি নতুন সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা ।

রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অর্ন্তভুক্ত দয়ারামপুর ইউনিট সূত্রে জানাগেছে, রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগীতায় চলতি মৌসুমে লালপুর উপজেলায় ধুপইল, ফুলবাড়ী, চংধুপইল, তারাপুর, রামাগাড়ী, আব্দুলপুর, ভবানীপুর এলাকায় ১৬০ একর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৪ হাজার মন তুলা উৎপাদন হবে। এ অঞ্চলের কৃষকরা উফশী সিবি-১২, সিবি-১৪, সিবি-১৫ ও হাইব্রিট রুপালি-১, রুপালি-২ ও লালতির ডিএম-৩ জাতের তুলার চাষ বেশি করেছে।

সরেজমিনে তুলা ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, জমি গুলি সবুজ তুলা গাছে ভরে আছে, প্রায় গাছ গুলিতেই রয়েছে কাঁচা তুলার ফল। দুই একটি গাছে ফল থেকে সাদা তুলা ফুটতে শুরু করেছে। কৃষকরা বলছেন আর কয়েকদিন পর ক্ষেত থেকে তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। ধুপইল এলাকার তুলা চাষী আব্দুল মজিদ জানান, এই অঞ্চলে আগে তেমন তুলার চাষ হতো না। সমকালীন ফসল হিসেবে গম, মসুর ও শাকসবজি চাষই ছিলো তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু যে টাকা ব্যয় করে তারা সমকালীন ফষল চাষ করতো তাতে কোন রকম খরচ উঠতো তবে লাভের মুখ দেখা যেতনা। বিগত কয়েক বছর থেকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দয়ারামপুর ইউনিটের সহযোগীতায় তারা তুলা চাষ করেছেন।

বিটিসি নিউজকে তুলা চাষী কামাল হোসেন জানান,অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম খরচে তুলার চাষ করা যায়। তুলা চাষ করতে প্রয়োজনীয় বীজ, সার, ঔষধ সরবারহ এবং তুলা উৎপাদনের সার্বক্ষনিক পরিচর্যাও তুলা উন্নয়ন বোর্ড করায় তুলার ফলনও ভালো হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত তুলার চাহিদা ও দাম ভাল।

উৎপাদিত তুলা নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের নিকট থেকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বীজ তুলা সংগ্রহ মালিক সমিতি কুষ্টিয়া (জিনিং) কো¤পানী সরাসরি ক্রয় করে থাকেন। ফলে অন্যান্য ফসলের মতো বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যায় পড়তে হয়না তাদের। ফলে এই এলাকার কৃষকরা তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছে।বর্তমানে প্রতি মন তুলার দাম ২ হাজার ৫ শত টাকা। শ্রমিক ও সারের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় যদি প্রতি মন তুলার দাম ৩ হাজার টাকা করে পাওয়া যায় তবে আগামীতে এই এলাকার অধিক জমিতে তুলার চাষ হবে বলে তিনি জানান।

রিপন আলী বিটিসি নিউজকে জানান , ‘আমি ৬ বিঘা জমিতে সিবি-১৫ জাতের তুলা চাষ করেছি। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। বড়াল নদীর এই এলাকায় আমার দীর্ঘদিন থেকে তুলার চাষ করে আসছি। বর্তমানে বড়াল নদীটি মরে যাওয়ার কারনে তুলা চাষের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পানি সেচ আমরা পা¤েপর মাধ্যমে দিচ্ছি এতে একটু খরচ বেশি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগষ্ট মাসে জমিতে তুলার বীজ বপন করা হয় এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে জমি থেকে তুলা সংগ্রহ শুরু হয়। এক বিঘা জমিতে তুলা চাষে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমি থেকে ১২-১৬ মন তুলা উৎপাদন হয়। যা বিক্রয় করে খরচ বাদ দিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তুলার দাম একটু বৃদ্ধি করলে এই এলাকায় তুলা চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছে কৃষকরা ।

রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দয়ারামপুর ইউনিটের বীজ তুলা সংগ্রহ ও জিনিং অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, তুলা একটি লাভজন ফসল। দিন দিন এই এলাকায় তুলার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারনত উঁচু ও মাঝাড়ি উচুঁ জমিতে তুলা চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে লালপুর-বাগাতিপাড়া দুই উপজেলা মিলে ৩ শত একর লক্ষামাত্র নির্ধারন করা হয়। তবে আমারা এই অঞ্চলের কৃষকদের তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ করায় বর্তমানে লালপুরের ৮টি এলাকায় ১৬০ ও বাগাতিপাড়ায় ১২০ একর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। এই সকল জমি থেকে প্রায় ৭-৮ হাজার মন তুলা উৎপাদন হবে। আগামীতে এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য তুলা চাষ হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনা। কেউ তুলা চাষে আগ্রহী হলে তাদের কে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়া হবে বলেও তিনি জানান ।#

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি মোঃ খান মামুন।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.