নাটোরের লালপুরে কাজু বাদাম চাষের অপার সম্ভাবনা

নাটোর প্রতিনিধি: দামি ফল হিসেবে কাজু বাদামের পরিচিতি সবার কাছে। আমদানি নির্ভর এ ফলটি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার কৃষকদের ।বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় নাটোরের লালপুরে। এখানকার মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশ কাজুবাদম চাষের জন্য উপযোগী।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাজুবাদাম ও কফি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কাজুবাদাম জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী হিসেবে ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে কাজুবাদাম চাষে ৫০ শতক জমিতে পাঁচজন ও কফি চাষে ৩৩ শতক জমিতে পাঁচজন কৃষককে সহায়তা দেয় কৃষি বিভাগ। কাজুবাদাম চাষী উপজেলার লালপুরের মোখলেসুর রহমান, ভবানীপুর-চাঁদপুরের সাইদুর রহমান, পালিদেহার তারেক মাহমুদ, কেশবপুরের মাজহারুল ইসলাম লিটন ও ডহরশৈলার আবুল কাশেম। কফি চাষী উপজেলার মনিহারপুর গ্রামের আনিসুর রহমান, ওয়ালিয়া মধ্যপাড়ার হাসান ইমাম, ভবানীপুরের রিমা খাতুন, টিটিয়ার শামীমুল ইসলাম ও দাঁইড়পাড়ার আবু সাইদ।
বাংলাদেশ কাজুবাদাম ও কফি গবেষনা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম রতন জানান,এখানকার মাটি, আবহাওয়া সবই কাজু বাদাম চাষের বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই। আর আগে দাম না পাওয়ার যে বিষয়টি ছিল সেটি এখন নেই।বীজ থেকে চারা হয়। চারা লাগানোর তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ফুল ধরে। ফল সংগ্রহ করা হয় মে মাসে। রোগ-বালাইও কম। আর একটি গাছে জাতভেদে ৪ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত বাদাম হয়। সাধারণত পেকে নিচে পড়ে গেলে সংগ্রহ করে শুকানো হয়। আর শুকালে ১ বছর রাখা সম্ভব। কৃষি কর্মকর্তাদের আশাবাদ- কৃষকরা আন্তরিক পরিচর্যা করলে এখানে ভালো কাজু বাদাম উৎপন্ন হবে। নাটোরের লালপুরে কাজু বাদামের চাষ বাড়লে দেশের কাজু বাদামের চাহিদা পূরণে ভ‚মিকা রাখতে পারবে।
দেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বাদাম জাতীয় ফসলে কাজুবাদাম শীর্যে রয়েছে। এ ফসলের যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমনি রয়েছে পুষ্টিগুণও, যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ চমকপ্রদ। কাজুবাদাম হৃৎপিন্ডের জন্য শক্তিদায়ক, ডায়াবেটিক রোগের জন্য উপকারী, হজমে সহায়ক, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, পিত্তথলি ও কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়, রক্ত শূন্যতায় কাজ দেয়, হাঁড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে, ব্লাড প্রেসার কমায়, অবসাদ দূর করে ভালো ঘুম আনয়নে সাহায্য করে।
নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার কেশবপুর গ্রামের মাজহারুল ইসলাম কাজুবাদামের চাষ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে প্রদর্শনী বাগান পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কাজুবাদাম ও কফি গবেষনা উন্নয়ন ও স¤প্রসারণ প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম রতন।
পরিদর্শন শেষে ওই কৃষিবিদ বিটিসি নিউজকে জানান, বর্তমানে বান্দরবনসহ পাহাড়ি এলাকায় কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। দেশে কাজুবাদামের চাহিদাও ব্যাপক, দেশে যে পরিমাণ কাজুবাদাম উৎপাদন হয় তা দেশের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল, তাই দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য সমতলে কাজুাবদাম চাষের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লালপুরের আবহাওয়া কাজুবাদাম চাষের উপযোগী হওয়ায় উপজেলায় কাজুবাদাম চাষের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে।
সরেজমিন লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার কেশবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাজু বাদামের গাছের সারি। শ্রমিকরা আগাছা পরিষ্কার করছেন। গাছের গ্রোথও ভালো।
এ বাগানের উদ্যোক্তা কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম (লিটন) বিটিসি নিউজকে জানান, গত অক্টোবর মাসে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে চারা গ্রহন করে ৫০ শতক জমিতে রোপন করি। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কাজু বাদাম চাষ করছি। ফসলের অবস্থা ভালো। লালপুর উপজেলা এ ফসলের উপযোগী।নতুন কিছু চাষ করার মানসিকতা থেকেই কাজুবাদাম চাষ শুরু করেছি, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, বাংলাদেশ কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এখানে কাজু বাদাম চাষ করা হচ্ছে, কৃষককে প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে । ফসলের অবস্থা ভালো। কৃষকরা আন্তরিক পরিচর্যা করলে এখানে ভালো কাজু বাদাম উৎপন্ন হবে। লালপুরে চাষ বাড়লে দেশে কাজু বাদামের চাহিদা পূরণে ভ‚মিকা রাখতে পারবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.