নাটোরের বড়াইগ্রামে প্রধান শিক্ষক পিঞ্জুর প্রতারনায় সর্বশান্ত মানুষ!

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামের রামেশ্বরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরোয়ার হোসেন ওরফে পিঞ্জু সরকারের বিরুদ্ধে নিজ বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু নিয়োগের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোই শেষ নয়, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুটেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক পিঞ্জু সরকারের বিরুদ্ধে বড়াইগ্রাম থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগিরা। তারপরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ।
এদিকে নিয়োগ বাণিজ্য ও পাওনা টাকা চাওয়ায় গত ২৮মে পিঞ্জু সরকার ও তার ভাই সহ ভুক্তভোগি ইলিয়াস পারভেজকে মারপিট করেছে। এই ঘটনায় থানায় ওই প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জনকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদি মারপিটের শিকার উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের মারিয়া গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইলিয়াস পারভেজ (৩৪)।
আসামীরা হলেন, রামেশ্বরপুর গ্রামের মৃত নওশের আলী সরকারের ছেলে সরোয়ার হোসেন পিঞ্জু (৫৫), মৃত নুরুজ্জামান সরকারের ছেলে রকি সরকার (৩৩) ও মৃত তমেজউদ্দিনের ছেলে আজিজ (৪৫)।
মামলার বিবরণ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১১ এপ্রিল দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় নিজ বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক সরোয়ার হোসেন পিঞ্জু। সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে বাদি ইলিয়াস পারভেজ এর ভাগিনা রাশিদুল ইসলাম আবেদন করেন এবং চাকুরী দিবেন মর্মে প্রধান শিক্ষক ৫ লক্ষ টাকা নেন।
চুক্তিমতে দীর্ঘদিনেও ওই চাকুরি না দিয়ে নানা অজুহাতে টালবাহানা করতে থাকলে ও পরবর্তীতে আরও অনেকের কাছ থেকে অনুরুপ মোটা অংকের টাকা নিয়েছে এমন খবর জানার পর বাদি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বারবার তাগাদা দেয়। এক পর্যায়ে গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিদ্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছালে প্রধান শিক্ষক সহ উল্লেখিত আসামীদের সাথে বাদির দেখা হয়। সেখানে টাকার কথা বললে প্রধান শিক্ষক পিঞ্জু সরকার ও তার ভাই সহ এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এতে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ভুক্তভোগী ইলিয়াস পারভেজ জানান, ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে আমি ধার স্বরুপ৪০ হাজার টাকা ও ভাগিনার চাকরি বাবদ ৫ লক্ষ টাকা পাই। সেটা বার বার চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং আমাকে মারপিট করে। মারপিট করার সময় আমার পকেটে থাকা ২৫ হাজার টাকাও তারা নিয়ে নেয়।
ইলিয়াস পারভেজ আরও জানান, তিনি স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নানা ধরণের ছলচাতুরি করে এক কোটির অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার মধ্যে খাল খনন প্রকল্পের ভেকু ভাড়ার ৭ লক্ষ ২৯ হাজার একই ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চলকে পরিশোধ করেননি, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে রয়না ভরত সরকার বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজাহার আলীর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ও একই এলাকার আল আমিনের কাছ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সরোয়ার হোসেন পিঞ্জু জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাকে হয়রানি ও হেয় প্রতিপন্ন করার প্রয়াসেই এই মামলা করা হয়েছে। তবে আল আমিনকে চেক প্রদান সহ সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদুউত্তর দিতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সারোয়ার হোসেন পিঞ্জুর প্রতারনায় সাধারণ মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়েছে। কারনে অকারনে তিনি সাধারণ মানুষকে মারপিট করেন। তাছাড়া স্থানীয় এক সাংবাদিকের ছত্রছাড়ায় পিঞ্জু সরকার দিনের পর দিন প্রতারনা করে যাচ্ছেন। এছাড়া পিঞ্জু সরকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সিদ্দিক বিটিসি নিউজকে জানান, এ ব্যাপারে থানায় সরোয়ার হোসেন পিঞ্জুকে প্রধান আসামী করে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। এই অভিযোগ ছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থানা পুলিশের কাছে জমা হয়েছে। অভিযোগ গুলো তদন্ত পূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.