নাটোরের বাগাতিপাড়ায় হলুদের দাম না পেয়ে হতাশ চাষীরা

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়ায় চলতি বছর হলুদের ফলন ভাল হলেও দাম না পেয়ে হতাশ চাষীরা। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বিদেশ থেকে আমদানির কারণে হলুদের বাজারে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চাষী, ব্যবসায়ী ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

হলুদ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া ও মাটি অনুযায়ী এ অঞ্চলে পাবনায়া, সোনামূখী, গাঙ্গী জাতের হলুদের চাষ বেশি হয়। এর মধ্যে পাবনায়া হলুদের চাহিদা বেশি হওয়ায় তুলনামুলক দাম বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু চলতি বছর ফলন ভাল হলেও বাজারে দাম না থাকায় সব জাতের হলুদেই লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষীদের। বাজারে প্রতি মণ কাঁচা হলুদ বিক্রি করে জমি থেকে হলুদ উত্তোলনের শ্রমিকের দামই উঠছে না। বিগত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে বিক্রি করতে হচ্ছে এসব হলুদ। ফলে আগামীতে হলুদ চাষে নিরুৎসাহীত হচ্ছে চাষীরা।

উপজেলার তমালতলা বাজারে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ওই বাজারে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন হলুদ কেনা-বেচা হয়। ওই বাজারে কাঁচা হলুদ বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা দরে। চাষীরা বস্তা ধরে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও ভাল দাম না পেয়ে নিরুপায় হয়ে কম দামে বিক্রি করছে।

বিক্রেতা যোগীপাড়ার শাহজাহান বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি গাঙ্গী জাতের হলুদ বিক্রি করেছেন মণ প্রতি ৪০০ টাকা দরে। নজরুল ইসলাম ধুলাউড়ি গ্রাম থেকে তমালতলা বাজারে এসেছিলেন হলুদ বিক্রি করতে। তিনি জানালেন, তার হলুদই ওই দিনের বাজারের সেরা ছিল। তাই সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা দরে ৬ মণ হলুদ বিক্রি করেছেন। কিন্তু তারপরেও তাতে তার লোকসান গুনতে হয়েছে। তিনি বললেন, বর্তমান বাজার দরে হলুদ বিক্রি করে উত্তোলন খরচ বাবদ শ্রমিকের মূল্য এবং বহন খরচ দিলে আর কিছুই থাকে না। বীজ, সারসহ রোপন খরচ সব লোকসান। তাই তিনি সামনে বছর হলুদ চাষ ছেড়ে দিতে চান।

ওই বাজারে ৪০ বছর ধরে হলুদ বেচা-কেনার সাথে জড়িত ব্যবসায়ী গালিমপুর গ্রামের খলিলুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, বিদেশ থেকে হলুদ আমদানির কারনে বাজারে হলুদের দাম কমে গেছে। গত বছরের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে হলুদ। তার মতো ব্যবসায়ী উমর আলী, শফিকুল জানালেন, কাঁচা হলুদ কিনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করেন তারা। বাজারে শুকনা হলুদের দাম কম থাকায় কাঁচা হলুদও তাদের কম দামে কিনতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৪ দশমিক ৩ মেট্টিকটন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোমরেজ আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, চলতি বছর মসলা জাতীয় হলুদ ফসলটির ফলন ভাল হয়েছে। তবে চাষীরা দাম পাচ্ছেন না বলে তাকে অনেকেই জানিয়েছে। গত বারের চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। দামটা একটু বেশি হলে চাষীরা লাভবান হতেন এবং হলুদ চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ত।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.