নাটোরের জাকিরের ব্যতিক্রম আমের চিঠি

নাটোর প্রতিনিধি: মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগে হাতে লেখা চিঠির প্রচলন নেই বললেই চলে। তাই নতুন প্রজন্মের মাঝে চিঠির আবেদন ছড়িয়ে দিতে এক ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন নাটোর লালপুর উপজেলার লক্ষণবাড়িয়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক জাকির হোসেন। প্রতি বছর মধুমাসে আমের গায়ে চিঠি লিখে প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সমাজসেবক, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ভাললাগা লোকজনকে নিজ উদ্যোগে আমের চিঠি পৌঁছে দেন তিনি। সবুজ আমের মাঝে লাল বৃত্ত এঁকে বাংলাদেশের পতাকার আদলে কাঁচা আমকে সাজিয়ে তুলেন তিনি। ১৯৯৯ সাল থেকে সৌখিন এই চিঠি লেখক তার এই ভাললাগা প্রকাশ করে চলেছেন।
আমের চিঠি লেখক জাকির হোসেন বলেন, চিঠির প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা থেকে ১৯৯৯ সাল থেকে আমের গায়ে চিঠি লিখে মানুষকে উৎসাহিত করি। সেই সাথে চিঠিটা বাংলাদেশের পতাকার আদলে লিখি যাতে সবাই দেশপ্রেমে উদ্বদ্ধ হয়। আধুনিক যুগে চিঠি লেখা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। হাতে লেখা চিঠির মায়া মমতা মানুষ ক্রমেই ভুলে যাচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের কারণে মানুষ চিঠি লেখা ভুলেই যাবে। আমের গায়ে চিঠি লেখা দেখে যদি লোকজনের চিঠি লেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় তাহলে স্বার্থকতা। বিগত দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে চিঠি লেখা বন্ধ ছিল।
এবছর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, নাট্য নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু, যমুনা টিভির স্পেশাল করেসপনডেন্ট মাহফুজ মিশুসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, সমাজসেবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে আমের চিঠি লিখে উপহার দিয়েছি।
আমের চিঠি নামে একটা ফেসবুক আইডিতে এইসব স্মৃতি আপলোড করি। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও আমের চিঠি লিখে চিঠি লেখায় উৎসাহিত করেছি। জাকির হোসেন তার আমের চিঠি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিতে উপহার দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গিনেজ বুকে আমের চিঠি অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি।
কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমের চিঠি হাতে পেয়ে যমুনা টিভির স্পেশাল করেসপনডেন্ট মাহফুজ মিশু তার ফেসবুকের টাইম লাইনে লিখেন, ভদ্রলোকের নাম জাকির। পেশায় পল্লী চিকিৎসক। ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগেও তিনি বাঁচিয়ে রাখতে চান হাতে লেখা চিঠিকে। সেজন্য প্রায় দেড় দশক ধরে তাঁর এই উদ্যোগ ‘আমের চিঠি’। প্রিয় আর পছন্দের মানুষকে আমে নিজ হাতে লিখে চিঠি পোষ্ট করেন তিনি। সাথে থাকে উনার গাছের আমও।
পুরো চিঠি জুড়ে ‘চলতে চলতে’ অনুষ্ঠান নিয়ে ভাললাগা আর ভালবাসার কথা। সবুজ আমের ওপর লাল বৃত্ত দিয়ে যেন এক টুকরো বাংলাদেশ ভালবাসা হিসেবে পাঠিয়েছেন তিনি। অনেক ধন্যবাদ সৃষ্টিশীল মানুষ জাকির ভাই। আপনাদের এই ভালবাসা আর দোয়া নিয়েই পথ চলতে চাই।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, জাকির হোসেনের কাছ থেকে অত্যন্ত চমৎকার ও সুসজ্জিত একটি আমের চিঠি উপহার পেয়েছেন। আমের চিঠি পেয়ে সত্যিই অভিভ‚ত হয়েছি। আমি তার এই কাজে উৎসাহ প্রদান করছি। আগামী দিনগুলোতে তার এই সৃজনশীল কাজ আরও বিস্তৃত হবে। জাকির হোসেনের আবেদনটি মামনীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাঠানো হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.