নাটোরের গুরুদাসপুরে লিচুর বাম্পার ফলন

 

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে এবছর মোজাফ্ফর জাতের আগাম লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গুরুদাসপুর, নাজিরপুর, বিয়াঘাট, নাড়ানপুর ,বেড়ঙ্গারামপুর ও শাহাপুর কালিনগড় লিচু গ্রাম নামে ক্ষ্যাত। গাছে গাছে লাল টস্ টসে লিচু। ভারে মাটি ছুঁয়া অবস্থা। সে সব লিচু সংগ্রহ করে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আড়তে (লিচুর পাইকারি মোকাম)। অনেকে আবার ক্রেতাদের দৃষ্টিকার্ষনের জন্য দাম হাঁকছেন। সব মিলিয়ে মধু মাসের এই ফলকে ঘিরে জমে উঠেছে গুরুদাসপুরে লিচুর পাইকারি মোকাম। পাইকার, ফড়িয়া আর বিক্রেতাদের হাঁক ডাকে কান ঝালাপালা অবস্থা। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়ঙ্গারামপুর কানু ব্যাপারির বটতলার চিত্র এটি।

গ্রামের বাগানগুলোতে চলছে লিচু সংগ্রহের কাজ। চাষিরা লিচু সংগ্রহ করে সেসব লিচু নিয়ে যাচ্ছে বেড়ঙ্গারামপুর কানু ব্যাপারির বটতলার লিচুর আড়তে। সেখানে গড়ে উঠেছে ২০-২৫টি আড়ত। দরদাম করে কিনছে ফরিয়া-মহাজনরা। গ্রামের উৎপাদিত এসব লিচু ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে।

‘লিচু আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা বলেন- এবারের লিচু মৌসুমের শুরুতে অতিবর্ষণ, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে বেশিরভাগ লিচু চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার পরও লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গ্রামের বাগানগুলোতে লিচু সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করছে। দুপুর নাগাদ এই আড়তে বিক্রির উদ্দ্যেশে লিচুর পসরা সাজানো হয়। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এই মোকাম থেকে লিচু পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে ৪০ ট্রাক লিচু ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, যশোরসহ দেশের আভ্যন্তরিন জেলাতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি ট্রাকে ২০০ ঝুড়ি, এক ঝুড়িতে ২হাজার ২০০টি লিচু থাকে। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই আড়তের লিচু ক্রয়-বিক্রয়, প্রক্রিয়াজাতকরন আর ট্রাক লোড করার ব্যস্ততা। জুনের শেষ সপ্তাহেই এই আড়তের সমাপ্তি ঘটবে।

শুক্রবার লিচুর আড়তে গিয়ে দেখাগেছে, আকার ও গুনগতমান ভেদে মোজাফফর জাতের প্রতি এক হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২হাজার ২০০ টাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক আব্দুস সালামসহ কমপক্ষে অন্তত ১০জন লিচু চাষি জানালেন, মওসুমের শুরুতে শিলা বৃষ্টি আর ঝড়ের কারনে লিচুর গুটি নষ্ট হয়েছিল। পরে অনুকুল আবহাওয়ায় ফলের আকার-আকৃতি বড় হয়েছে। এ কারণে ভালো দামে ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে কৃষকের।

আরেক লিচু চাষি মজির উদ্দিন জানালেন, তিনি এক একর জমিতে লিচু বাগান করেছেন। প্রতি বিঘায় গাছ রয়েছে ১৬টি। প্রতিটি গাছে গড়ে পাঁচ হাজার লিচু ধরেছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী গড়ে ১হাজার ৫শ টাকা বিক্রি করবেন। এতে প্রতি বিঘায় ৯০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি হবে। এতে তার প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ ১৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে বিঘায় লাভ হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা। তাঁরমত এলাকার সকল লিচু চাষিই লাভের মুখ দেখছেন।

সিলেটের বাদামতলি থেকে আসা ‘মা-বাবা ফল ভান্ডার’ এর প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জানালেন, মোজাফফর জাতের আগাম লিচু পাওয়া যায় এই মোকামে। একারনে চাহিদা-লাভ দুইটাই থাকে। প্রতিদিন তিনি দেড় থেকে দুই লাখপিস লিচু কিনে থাকেন তিনি। তাঁরমত দেশের অন্য জেলা থেকেও মহাজনরা লিচু কিনে থাকেন। এখানকার লিচুর আকার রং স্বাদ ভালো হওয়ায় দেশজুড়ে এই লিচুর চাহিদা ব্যাপক।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, উপজেলায় ৪১০হেক্টর জমিতে মোজফ্ফর, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ হয়েছে। এরমধ্যে নাজিরপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে আগাম জাতের মোজাফফর জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। এই লিচুর বৈশিষ্ট হলো উৎপাদন বেশি হয়। পোকা-মাকড়ের আক্রমন তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে গুরুদাসপুর উপজেলায় চলতি মওসুমে ৩ হাজার ৮শ ২০ মেট্টিকটন লিচু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজার মূল্যে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা। একই সাথে লিচুকে ঘিরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.