নাটোরের গুরুদাসপুরে চাঁদা না পেয়ে এক ঘরে করে রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৮

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুরে চাঁদা না পেয়ে অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে ফতোয়া দিয়ে একটি পরিবারকে এক ঘরে করে রাখায় ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তিন দিন ধরে অমানবিক জীবন যাপন করার পর পুলিশ ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে। পরে এ অমানবিক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর আগে ভুক্তভুগী নারী মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে ওই ইউপি সদস, লাকার মসজিদের ইমাম ও গ্রাম প্রধানসহ ১৬জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযুক্তদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করে। এঘটনায় জড়িত অন্যদেরও ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এদিকে অসহায় ওই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সহ মহিলা অধিদপ্তর।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার দুর্গম রানীনগর মোল্লাপাড়া গ্রামের দিন মুজুর কামরুজ্জামানের স্ত্রী মর্জিনা বেগম তার জামাতা প্রতিবেশী রাশেদুলকে সাথে নিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে সন্ধ্যার পর ভাইয়ের বাড়ি থেকে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে প্রতিবেশী শুকচাঁদ আলী, কামরুল ইসলাম, আতাহার হোসেন ও আলামিন সহ ৭/৮ জন বখাটে যুবক তাদের পথরোধ করে এবং ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।

সেই টাকা দিতে অপরগতা জানালে তাদের গাছের সাথে বেধেঁ নির্যাতন করা হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের যোগসাজসে অনৈতিক কর্মকান্ডের মিথ্যা অভিযোগ তুলে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় সামাজিক ফতোয়া দিয়ে ওই পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়।

গ্রাম্য সালিশে জামাই মেয়ের তালাক ও তাদের একঘরে করে রাখার হুকুম দেয়া হয়। এমনকি ফতোয়া দিয়ে ভুক্তভোগীর মেয়েকে সন্তান সহ স্বামীর বাড়ি থেকে মায়ের বাড়িতে যেতে বাধ্য করেন গ্রাম্য মাতব্বররা।

এদিকে ফতোয়াবাজদের কারণে অসহায় ওই পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ান উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার শীর্ষ কর্মকর্তা সহ মহিলা অধিদপ্তর সহ স্থানীয় ইসলামীক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তারা ছুটে যান সেই দুর্গম মোল্লাপাড়া গ্রামে। ভুক্তভোগীদের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদানসহ আইনি সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এলাকায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এই গ্রামে যা ঘটেছে তা রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এটি সমর্থনযোগ্য নয় হেতু তাৎক্ষনিকভাবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে আইনগত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়। আমরা উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে রয়েছি।

পাশাপাশি ওই পরিবারকে মানসিকভাবে সতেজ রাখার সমর্থনের কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমরা চাই এদেশের প্রতিটি নাগরিক তাদের নিজ অধিকার নিয়ে ভালভাবে বসবাস করুক।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাহারুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,অভিযুক্ত ইউপি সদস্যসহ ঘটনার সাথে জড়িত ৮ জনকে ইতমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.