নাটোরের এমকে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর শহরতলীর দিঘাপতিয়া এম কে অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ এনে এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আবেদন করেছেন একজন অভিভাবক।
সম্প্রতি আটজন শিক্ষককে বাদ দিয়ে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রকাশ করে অন্যায় ভাবে নির্বাচন করার চেষ্টার অভিযোগে নাটোর সদরের সহকারী জজ আদালতে মামলার পর বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন ছাত্র অভিভাবক মো: আতিয়ার রহমান।
পরে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক মো: নাসির উদ্দিন ও হিসাব রক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক এ কে এম মোশারফ হোসেন তাদের মামলায় অধ্যক্ষ ছাড়াও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে নাটোর জেলা প্রশাসককেও বিবাদী করেছেন। অধ্যক্ষ সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেও জেলা প্রশাসক বলেছেন কিছু বিষয়ে তদন্ত চলছে।
ছাত্র অভিভাবক মো: আতিয়ার রহমান তার অভিযোগ পত্রে বলেন, নাটোর জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও দিঘাপতিয়া এম কে অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক নিজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে গত ১০ বছরে প্রায় ৭৫জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।
যাদের প্রতি জনের নিকট থেকে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। অনার্সের শিক্ষকদের নিকট থেকেও ৫/৭ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। এতে প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন।
তার বাবা অগ্রণী ব্যাংকে জালিয়াতি করে অন্যের জমি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে ফেঁসে যাওয়ায় অধ্যক্ষ হওয়ার পর তিনি রাতারাতি অগ্রণী ব্যাংকে তার বাবার ঋনের সাড়ে ৫১লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। নাটোর শহরে সরকারি রাণী ভবাণী মহিলা কলেজের সামনের তার দুই ইউনিটের একতলা বাসা ছয় তলা করে ফেলেছেন। সন্তানকে পড়াচ্ছেন ঢাকার সবচেয়ে ব্যয় বহুল বেসরকারি একটি বিশ^বিদ্যালয়ে।
নাটোর শহরের কাফুরিয়াপট্টি, মাদরাসা মোড় ও উপ শহরসহ চারটি স্থানে তিনি দেড় কোটি টাকা দিয়ে আরো চারটি প্লট কিনেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ অধ্যক্ষ একেবারে সাধারন পরিবারের সন্তান।
১৯৯৭ সালে তার আপন দুই ভাই এই কলেজে পিয়ন হিসেবে নিয়োগ পান। তার আরেক ভাই অন্যের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।
এসব করতে তিনি বড় অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে ভূঁয়া নিবন্ধনধারী মো: শাহানূর আলমকে ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারী মার্কেটিং বিষয়ে এবং এর আগে মোছা: দিলারা আক্তারকে রসায়নের মতো গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ভূঁয়া নিবন্ধনধারী হয়েও তারা নিয়মিত সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন।
শুধু তাই নয়, শাহানূর আলমকে নিয়োগের সময় তার আরো যে দুইজন প্রতিযোগী দেখানো হয়েছে তাদের নিবন্ধন সনদেরও কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাদের চুড়ান্ত ফলাফল শীটে তৃতীয় স্থান অধিকারী আবু সাঈদ মো: আক্রামুজ্জামানের ঠিকানা গোপন রাখা হয়েছে।
ক্রীড়া শিক্ষকের শারীরিক শিক্ষা সনদও নিবন্ধন ভূঁয়া বলে অভিযোগ থাকায় তাকে নতুন করে আবার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো: শাহানূর আলম তার নিবন্ধন সনদ বৈধ বলে দাবী করেন। অপরজন মোছা: দিলারা আক্তার বলেন, নিয়োগের পরের বছর তিনি নিবন্ধন করায় এই সমস্যা হয়েছে। গত চার মাস থেকে তাদের দুজনের বেতন ভাতা বন্ধ আছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।
অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দূর্নীতির দায়ে ২০১৭ সালে কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করে রাজশাহী বোর্ড। পরে নাটোর নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল কুদ্দুসের প্যাড ও সিল স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কেন্দ্র প্রদানের জন্য বোর্ডে আবেদন করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক।
বিষয়টি সেসময় বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ায় কলেজের সুনামক্ষুন্ন হয়। কলেজ সরকারি করানোর নামেও লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। কলেজ থেকে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার টাকা প্রদান না করেই এই ইস্যুতে নিয়মিত পরিশোধ বলে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে।
কলেজে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক যে কোর্স চালু আছে তার দূর্নীতির কারণে কেন্দ্র বাতিল করে নাটোর নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারি কলেজে নেয়া হয়।
সেখানে গিয়েও নকলের সুবিধা দেয়ার কথা বলে পরীক্ষা প্রতি ২০০টাকা করে নেয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাককে ঐ পরীক্ষার সব দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া উন্নয়ণ উপ কমিটির আহবায়ক হিসেবে নিজে দায়িত্বপালণ করে কলেজের টাকায় নিজের বাড়ির ইট সিমেন্ট রড কেনা, ঘুষ না দেয়ায় প্রাপ্য থাকার পরও একাধিক প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপকের স্কেল না দেয়া ও এনটিআরসি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠালেও ঘুষ না পাওয়ায় একাধিকজনকে আজ পর্যন্ত যোগদান করতে দেয়া হয়নি।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, অধ্যক্ষ নিজের কাছের ৬/৭জন শিক্ষককে সাথে নিয়ে এভাবে লুটপাট করে কলেজের সম্পদ আত্মসাত করছেন এবং সুনাম নষ্ট করছেন। সব দূর্নীতি ঢাকার জন্য নিজের শেষ কর্ম বছরে নিজের পছন্দ মতো কমিটি করার জন্য অপছন্দের আটজন শিক্ষককে কোন কারণ ছাড়াই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের চেষ্টা করছিলেন তিনি।
কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ আমজাদ হোসেন তাকে কলেজের কোন বিষয়ে জানানো বা দায়িত্ব দেয়া হয় না। তাকে পাশ কাটিয়ে গত বছরের দেড় কোটি টাকার খরচের হিসাব জেলা প্রশাসককে দিয়ে পাশ করানোর সময় তিনি আপত্তি করলে সেটা আর পাশ হয়নি। আটজন শিক্ষককে কোন কারণ ছাড়াই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেছেন।
আজ রোববার দুপুরে দিঘাপতিয়া এম কে অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক নিয়োগের নামে ঘুষ গ্রহনসহ সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত আখ্যায়িত করে বলেন, আমার নামে নাটোর শহরে কোন জমি বা প্লট নেই, আর যে বাড়ি করেছি সেটা আমাদের পারিবারিক সম্প্রতি, অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর আমি কোন কিছুৃ করিনি সবই আগের। গত এক বছর থেকে আমার নামে এসব মিথ্যা অপবাদ ও নানা দপ্তরে ভুয়াঁ অভিযোগ করা হচ্ছে।
ক্রীড়া শিক্ষকের বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, রসায়ন ও মার্কেটিং বিষয়ের প্রভাষকের নিবন্ধন যাচাই করতে দেয়া হয়েছে, দেখা যাক কি হয়। কোন অধ্যক্ষ জেনে শুনে ভুঁয়া নিবন্ধনধারী শিক্ষক নিয়োগ দেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কর্ম জীবনে শুধু একবার তিনি উন্নয়ণ উপ-কমিটির আহবায়ক ছিলেন বলেও তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান। বাদ পরা আট শিক্ষক কলেজের কারিগরি শাখার হওয়ায় নিয়ম মেনেই তাদের বাদ দেয়া হয়েছে বলে অধ্যক্ষ দাবী করেছেন।
অপরদিকে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি নাটোর জেলা প্রশাসক মো: শাহরিয়াজ এ সব অভিযোগ সর্ম্পকে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, অনেক কথা সব মনে নেই। দুদক ও তার দপ্তরে আসা দূর্নীতির কিছু অভিযোগ তদন্ত করার জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রমজান আলী আকন্দকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.