নাগেশ্বরীতে শহিদ মিনার ভাংচুরের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের র‌্যালিতে অংশ না নেয়ার কারণ জানতে চাওয়ার জেরে শহিদ মিনার ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষক ও তাদের লোকজনের বিরুদ্ধে।
একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল পৌণে ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে নাগেশ্বরী উপজেলার জয়মঙ্গল এগারো মাথা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় নাগেশ্বরী থানায় অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। পুলিশ বলছে ইউপি চেয়ারম্যান আপোস করবেন, তাই মামলা নেয়া হয়নি।
অভিযোগে জানাগেছে, একুশে ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় মাঠ থেকে শোক র‌্যালি বের হলে ম্যানেজিং কমিটি, অন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী অংশ নিলেও সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মানিক, আব্দুল কুদ্দুছ ও কম্পিউটার শিক্ষক শামসুর রহমান বিদ্যালয়ের বারান্দায় র‌্যালিং-এ বসে মোবাইলে ভিডিও দেখছিলেন। সেখানে গিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুছের কাছে র‌্যালিতে অংশ না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে পাশ থেকে কম্পিউটার শিক্ষক শামসুর রহমান ও তার ভগ্নিপতি সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মানিক সভাপতির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন সবাইকে কেন যেতে হবে! এ নিয়ে উচ্চবাচ্য হলে শামসুর রহমান ও মনিরুল ইসলাম মুঠোফোনে কল করে ভাই ভাতিজাদের স্কুলে ডাকেন।
র‌্যালি শেষে পৌনে ১১টার দিকে বহিরাগতরাসহ শিক্ষক শামসুর ও মানিকের সাথে সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক সোলায়মান আলীর তর্ক হয়। এক পর্যায়ে শহিদ মিনারের খুঁটি তুলে সভাপতিকে মারতে যায় শামসুর-মানিকের লোকজন। এ সময় বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মিশুক মিয়া বাঁধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। পরে শহিদ মিনার ভাংচুর করে শিক্ষক মানিক ও শামসুরের লোকজন।
পরে জরুরী নম্বরে কল করে ঘটনা জানানো হলে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান নাগেশ্বরী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
আসামী করা হয় সহকারি শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মানিক, কম্পিউটার শিক্ষক শামসুর রহমান সরকার, হাতিরভিটা এলাকার আতাউর রহমানের ছেলে একরামুল হক লিটন, জহুর আলীর ছেলে মাসুদ রানা ও শহিদুল ইসলাম, মৃত আকবর আলীর ছেলে ফজলুল হক, জয়মঙ্গল এগারোমাথার রুহুল আমিনের ছেলে শহিদুল ইসলামসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোলায়মান আলী বলেন, সবাই র‌্যালিতে গেছে, আমাদের কম্পিউটার শিক্ষক শামসুর রহমান, তার ভগ্নিপতি সহকারি শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মানিক র‌্যালীতে না গিয়ে বসে পা দোলাচ্ছিল। পাশে আর এক শিক্ষক কুদ্দুছ ছিল। তার কাছে সভাপতি জানতে চেয়েছে র‌্যালিতে না যাওয়ার কারণ। এটা নিয়ে বাজলো। পরে মোবাইল করলো। ওই শিক্ষকদের ভাতিজারা এসে সাজানো শহিদ মিনারের খুঁটি তুলে সভাপতিকে মারতে যায়। আমার অফিস সহায়ক ছেলেটাকেও মারধর করে। ওরা ন্যাক্কারজনক কাজটি করেছে।
সভাপতিকে রুমের ভেতর নিলেও জানালা দিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। তিনি জানান, সভাপতিকে ওই দুই শিক্ষক মানতে পারেনি। তার জেরে এ ঘটনা হতে পারে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি স্কুলে র‌্যালিতে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা গেলেও বারান্দায় আব্দুল কুদ্দুছ বসে ছিলেন। পাশে পা দুলিয়ে মোবাইলে ভিডিও দেখছেন মনিরুল ইসলাম মানিক ও শামসুর রহমান। আমি কুদ্দুছকে বলেছি ‘র‌্যালিতে গেলেন না কেন!’। এ কথায় মনিরুল ও শামসুর উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে এসে বলে সবাইকে কেন যেতে হবে! বলেছি যেতে হবে। পরে ভাই ভাতিজাদের ডেকে শহিদ মিনারের খুটি তুলে আমাকে মারতে আসে। শহিদ মিনার ভেঙে দেয়। ট্রিপল নাইনে কল দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানালে নাগেশ্বরী থানা থেকে ভ্যান আসে। থানায় অভিযোগ করেছি।
কম্পিউটার শিক্ষক শামসুর রহমান সরকার বলেন, অসুস্থ্য থাকার কারণে আমরা দুইজন শিক্ষক র‌্যালিতে যাইনি। এজন্য স্কুলের সভাপতি শিক্ষককে খারাপ ভাষায় কথা বলায় উপস্থিত লোকজনের সাথে উচ্চ কথাবার্তা হয়েছে। শহিদ মিনার ভাঙার বিষয়য়ে বলেন, শহিদ মিনার ভাঙা হয়নি। খুটি দিয়ে সাজানো ছিল সেই খুটি তুলেছে লোকজন। ভগ্নিপতি সহকারি শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মানিকের বিষয়ে বলেন তিনিও বসে ছিলেন।
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রূপ কুমার সরকার বিটিসি নিউজকে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করতে এসআই মোহাম্মদ আলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ভালো বলতে পারবেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি আপোষ করবেন বলেছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, স্কুলের সভাপতি মিজানুর রহমান লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি কাগজ পাইনি। থানা থেকে ফোনে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত করেছি। কাজ চলছে।
নেওয়াশী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মুকুল বিটিসি নিউজকে বলেন, ঘটনা শুনে স্কুলে গিয়ে সবাইকে লাইব্রেরিতে দেখেছি। পরে পুলিশ গেছে। আমরা কথা বলে এসেছি। সামনের বুধবার বসার কথা আছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই রকেট বিটিসি নিউজকে বলেন, বিষয়টি বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউ আমাকে জানায়নি। বুধবার অফিস থেকে বাসায় আসার পর লোক মারফত জানতে পেয়ে প্রধান শিক্ষককে তিনবার কল করেছি। তিনি রিসিভ করেননি। আমাদের অফিস সহায়ককে ঘটনাস্থল গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানতে বলা হয়েছে। এরকম ঘটনা কেনো কেউ জানালো না। সব মিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.