নাগেশ্বরীতে বিদ্যুতের খুঁটিতে স্বপ্নভঙ্গ আসিকের ট্রান্সফর্মার লাগাতে গিয়ে হারালো ২ হাত ১ পা দায় নিচ্ছে না অফিস কর্তৃপক্ষ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: বিদ্যুতের খুঁটিতে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আসিকের। হাত পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে এখন অসহায় জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাকে। তবে এ দায় এড়িয়ে চলছে জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ।

আর নিজের অসহায়ত্বের দুঃখ ভুলতে কৃত্তিম হাত-পা ও কর্মসংস্থানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সে। জানা গেছে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বামনপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে আসিক আহম্মেদ (২১)। দরিদ্র পরিবারের বড় ছেলে। লেখাপড়ায় বেশিদূর এগুতে পারেনি সে।

২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর থেকেই সংসারের ঘানি টানতে থাকে আসিক। তাই ইচ্ছে থাকলেও পরে আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি তার। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাগেশ্বরী জোনাল অফিসে। দিন রাত পরিশ্রম করে যা আয় হতো তা দিয়েই চলতো সংসার।

কিন্তু হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ২ হাত এবং ১ পা হারাতে হয় তাকে।

আসিক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানায়, গত বছরের ২৬ নভেম্বর কাজের জন্য নাগেশ্বরী জোনাল অফিসে উপস্থিত হয়ে প্রতিদিনের ন্যায় অফিস নির্ধারিত সার্ভিস অর্ডারভুক্ত হয়ে নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন সরকারের বাড়িতে সেচের নতুন সংযোগের মিটার ও ট্রান্সফর্মার উত্তোলন করতে যায়।

সে সময় আসিক কাজ শুরু করার আগে বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করতে অফিসের লাইন টেকনিশিয়ান তোজাম্মেল হককে জানায়। পরে তোজাম্মেল লাইন বন্ধ করলেও আসিকের কাজ শেষ না হতেই তার কাছে ক্লিয়ারেন্স না নিয়েই হুট করে বিদ্যুতের লাইন চালু করেন।

এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হলে তাকে তৎক্ষনাত নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজে নেয়ার পরামর্শ দেন।

পরে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখান থেকেও তাকে দ্রুত ঢাকা বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার ২ হাত এবং এক পা কেটে ফেলতে হয়। এ চিকিৎসায় ব্যয় হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা। আসিকের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। এসব গল্প বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন আসিক।

কান্নাজড়িত হয়ে আরও বলেন, তার এই বিপদের পর অনেকেই সহযোহিতার আশ্বাস দিলেও এখন আর কেউ সাড়া দেন না। যারা বড় বড় কথা বলেছেন তারা কেউ ফোনও রিসিভ করেন না।

আর রীতিমতো এ দায় এড়িয়ে চলছেন নাগেশ্বরী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আতিকুর রহমান, গ্রাহক নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, জুনিয়র ইঞ্জিনয়ার ওয়াজেদুল ইসলাম ওয়াজেদ, লাইন টেকনিশিয়ান তোজাম্মেল হোসেন, লাইনম্যান আশিকুর রহমান।

দুর্ঘটনার পর আসিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের আশ্বাসসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আইনী পদক্ষেপ নিতে বাধা প্রদান করেন তারা। এমনকী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ওয়াজেদুল ইসলাম ওয়াজেদ, লাইন টেকনিশিয়ান তোজাম্মেল হক, লাইনম্যান আশিকুর রহমান মজুরী ভিত্তিতে কাজ করে নিলেও তারা মাস শেষে পুরো মাসের টাকা উত্তেলন করে আসিককে মজুরি বুঝিয়ে দেয়ার বেলায় অর্ধেক মাসের মজুরি দিয়ে বাকী অর্ধেক মাসের মজুরি আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন আসিক।

সে আরও জানায়, কাজের দিন নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের বাড়িতে কাজ করার সময় তিনি কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন অথচ তিনি এখন তা অস্বিকার করছেন যে তিনি নাকি উপস্থিত ছিলেন না।

আসিকের বাবা রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দিন নেই রাত নেই, ঝর নেই বৃষ্টি নেই যখন তখন অফিসের লোকজন আসিককে ডাক দিয়ে নিয়ে যায়। লাইন বন্ধ থাকলে নাকি জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ওয়াজেদের চাকুরি থাকে না। এইভাবে ডাক দিয়ে নিয়ে কাজে লাগায়। ওইদিনও খুব সকালে ওয়াজেদ আমার ছেলেকে ফোন করে ডাক দিয়ে নিয়ে যায়।

পরে খবর পেলাম ছেলে বিদ্যুতের শক খাইছে। ছেলের চিতিৎসা করাতে যেটুকু সম্বল ছিলো সব শেষ করে ফেলেছি। অথচ ছেলে এখন পঙ্গু। বাবা হয়ে ছেলের এমন করুণ দৃশ্য সইতে পারি না।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.