নাগেশ্বরীতে ধানক্ষেতে নেকব্লাস্ট সংক্রমণে স্বপ্নভঙ্গ কৃষকের ভবিষ্যতে খাবার এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে হতাশা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নেক বা শীষ বøাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধান ক্ষেত। ক্রমেই বেড়েই চলছে এর সংক্রমণ। এক জমি থেকে আরেক জমির ধান ক্ষেতে ছড়াচ্ছে এই রোগ। ক্ষেতেই ফসল হারিয়ে ভবিষ্যতে না খেয়ে থাকার আসঙ্কায় হতাশ কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ২৪ হাজার ২শ ৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ করেছেন কৃষক। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হয়ত আর কয়েকদিন পরে গোলায় ফসল উঠত তাদের। ঠিক এ মুহূর্তে পাইরিকুলারিয়াপ্রিসিয়া নামক ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আগাম জাতের ব্রিধান-২৮। শীষের গোড়া অথবা শাখা প্রশাখার গোড়ায় কালো দাগ হয়ে পচে যাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে শীষ অথবা শীষের শাখা প্রশাখা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেনো পাকা ধানের ক্ষেত। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত নেক বা শীষ বøাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে উপজেলার ৩.২৫ হেক্টর জমির ধানক্ষেত। এখনো বেড়েই চলছে এর সংক্রমণ।
কৃষকরা জানায়, ধানগাছে বড় বড় শীষ দেখে চোখ জুরিয়ে যেতো। স্বপ্ন দেখতো ভালো ফলনের। কিন্তু ক্ষেতে নেক বøাস্ট রোগের সংক্রমণে সব ধান চিটায় পরিণত হয়ে সে স্বপ্ন ধোয়াশায় মিশে গেছে তাদের।
পৌরসভার বালাটারী এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী জানায় ৭ সদস্যে সংসারে সামান্য আয়ে চলে তাদের সংসার। তারপরও পরিবারের লোকজনের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে অন্যের কাছ থেকে ৩ বিঘা জমি বরগা নিয়ে ব্রিধান-১৮ লাগিয়েছেন তিনি। ধার দেনা করে নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও আগাছা পরিস্কারসহ সকল কাজ করতেন যতœসহকারে। ক্ষেতে ভালো ফলন দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তিনি।
কিন্তু এই স্বপ্ন তার ধোয়াশায় থেকে যায়। ৩ বিঘা জমির ধানই নষ্ট করেছে নেকবøাস্ট। যে ধান রয়েছে এর থেকে জমির মালিককেই কী দেবেন বা নিজেই কী পাবেন এ নিয়ে মাথায় হাত পরেছে তার। এমনকী স্ত্রী সন্তান নিয়ে কীভাবে ভবিষ্যতে দুমুঠো খাবার খাবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
একইভাবে হতাশ ওই এলাকার বহিয়তউল্লাহ, সোহরাব আলী, সাহজাহান মিয়া রবিউল ইসলাম, ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মন্নেয়ারপাড় গ্রামের কৃষক আ. ছালাম, ইয়াজ উদ্দিন, ইছিমুদ্দিন, কালীগঞ্জ ইউনিয়নের কোরালী পাড়ার হোসেন আলী, নুরল ইসলাম, মোহাম্মদ আলীসহ অনেক কৃষক। তারা বলেন, নিজের জমানো অর্থ দিয়ে ও ধার-দেনা করে বহু কষ্টে সেচ নির্ভর এ বোরো মৌসুমে তাদের জমিতে ব্রিধান-২৮ধান লাগিয়েছেন। বিন্তু চোখের সামনে যতেœ গড়া সে ফসল নষ্ট হওয়ায় কান্না আসে তাদের। ফসল হারিয়ে ঋণের বৃত্তে আটকে গেলেন তারা।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আগাম জাতের কিছু ব্রিধান-২৮ এ এর আক্রমণ ঘটেছে। এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মত বালাইনাশক প্রয়োগ করলে তা ঠেকানো সম্ভব। এক্ষেত্রে শীষ বের হওয়ার আগে ১৬ লিটার পানিতে ট্রুপার, জিল মিশিয়ে এর ৪ ড্রাম প্রতি বিঘায় ছিটাতে হবে। সেই সাথে ২০ গ্রাম পটাশ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সেটা অবশ্যই বিকেল বেলায়। শীষ বের হওয়ার পর নাটিভো, সেলটিমা, ফিলিয়া পানিতে মিশিয়ে একইভাবে জমিতে ছিটাতে হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.