নাগরিকত্ব আইন শিথিল প্রশ্নে ইতালিতে গণভোট চলছে

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইতালিতে নাগরিকত্ব অর্জনের শর্ত সহজ করা এবং বিদেশি কর্মী নিয়োগে উদার নীতি গ্রহণ প্রশ্নে গণভোটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ রোববার (৮ জুন) ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। যা সোমবার (৯ জুন) পর্যন্ত চলবে। তবে পর্যাপ্ত ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ব্যালট পেপারে নাগরিকত্বের প্রশ্নে ভোটারদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তারা ইতালীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় বসবাসের সময়কাল পাঁচ বছরে নামিয়ে আনার পক্ষে নাকি বিপক্ষে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের কোনো দেশের বাসিন্দা, যাদের ইতালির সাথে বিবাহ বা রক্তের সম্পর্ক নেই, তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার আগে দেশটিতে ১০ বছর বসবাস করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তিতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করা হয়।
ইতালির বামপন্থি ও মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং শীর্ষ স্থানীয় একটি শ্রমিক ইউনিয়ন সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই গণভোটের আয়োজনে রাজি করিয়েছে। প্রস্তাবের সমর্থকরা বলছেন, এই সংস্কার দেশটিতে বসবাসকারী প্রায় ২৫ লক্ষ বিদেশি নাগরিককে উপকৃত করবে এবং ইতালির নাগরিকত্ব আইনকে জার্মানি ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য অনেক ইউরোপীয় দেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, তিনি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন কিন্তু ভোট দেবেন না। বামপন্থিরা তার এমন সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে সমালোচনা করেছে। মেলোনির কট্টর ডানপন্থি ব্রাদার্স অফ ইতালি পার্টি অভিবাসীদের জন্য কাজের ভিসার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসন কমানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
ইতালি সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ ইতালীয় নাগরিকত্ব অর্জন করেছে, যা ২০২০ সালের দ্বিগুণ এবং মোট ইইউর এক-পঞ্চমাংশ। এর ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ইইউর বাইরের, যার বেশিরভাগই আলবেনিয়া ও মরক্কোর পাশাপাশি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে এসেছে।
প্রস্তাবিত সংস্কারটি পাস হলেও এটি অভিবাসন আইনকে প্রভাবিত করবে না যা অনেকেই সবচেয়ে অন্যায্য বলে মনে করেন। কারণ বিদেশি পিতামাতার ঘরে ইতালিতে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
তবে প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত পাস হবে কি না তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। ইতালির আইন অনুযায়ী, গণভোট তখনই সফল হবে, যখন দেশটির ৫০ ভাগের বেশি ভোটার ভোটে অংশ নেয়। জনমত জরিপ করা সংস্থাগুলো বলছে, এত বেশি সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে আসবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
গণভোটের ব্যালটে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তনের পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়াতে আরও চারটি সংস্কারের প্রস্তাবও আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক বরখাস্ত হয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে বিপদে অথবা কোনো ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েছেন, তাদের সুরক্ষা আরও বাড়বে।
বামপন্থি ট্রেড ইউনিয়ন সিজিআইএল এ বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। সিজিআইএলের মহাসচিব মরিজিও ল্যানদিনি এএফপিকে বলেন, ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে কর্মীদের স্বার্থের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়ার সংস্কৃতি আমরা পাল্টে দিতে চাই।’  
সিজিআইএলকে সমর্থন দিচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও। তবে অতীতে ওই দলটি ক্ষমতায় থাকাকালীন পাস হওয়া কিছু আইনও সংস্কারের প্রস্তাব এনেছে সিজিআইএল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.