নতুন স্বপ্ন নিয়ে ২০২৩ সালকে বরণ বিশ্ববাসীর

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিদায় ২০২২, স্বাগত ২০২৩ সাল। ফেলে আসা বছরটিতে না পাওয়ার অনেক বেদনা কিংবা বিশ্বে অনেক বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটলেও নতুন আশা নিয়ে বছরটিকে বরণ করল গোটা বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষ। কেননা করোনা মহামারি তাদের একেবারে শেষ করে দিয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আজ তাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা এখনো তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। তার ওপর রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতির খেলার এই যুদ্ধ থামছে না। মুখে মুখে আশার বুলি আওড়ানো হলেও বাস্তবে শান্তির দেখা নেই। এরপরতো রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি। মানুষের জীবনে তা নাভিঃশ্বাস এনে দিয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে গত কয়েক বছর পানসে ছিল নববর্ষ উদ্যাপন। তবে লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এখন অনেকটাই শিথিল বিশ্বের অধিকাংশ দেশে। নতুন বছরে অনেকেই ভালোভাবে নববর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিলেও আবারও করোনার নতুন ধরন ভয় জাগাচ্ছে।
সিডনি নববর্ষ ২০২৩ উদ্যাপনের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে একটি যেটি গত দুই বছর ধরে লকডাউনের আওতায় ছিল। করোনার ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল শহরটিতে। অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত আবার চালু হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, এবার সিডনিতে নববর্ষ উদ্যাপনে সামিল হবে অন্তত ১০ লাখ মানুষ। সিডনি কর্তৃপক্ষ আরো আশাবাদী, প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন বা টেলিভিশনে নববর্ষ উদ্যাপনের আয়োজন উপভোগ করবে। ফায়ার ওয়ার্কসের আয়োজক ফরচুনাটো ফোটি বলেন, ‘যদি আমরা সকলকে নববর্ষ উদ্যাপনে একত্রিত করতে পারি এবং নতুন করে আনন্দের সঙ্গে সামনের বছরের দিকে তাকাতে পারি, তাহলে আমরা এটিকে একটি ভালো কাজ হিসেবে দেখব।’
আবার ২০২২ সাল কারো কাছে আনন্দের হলেও কারো কাছে বিষাদের। এই বছর ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল আইকন পেলেও চলে গেলেন।
একই সঙ্গে বিশ্বনেতাদের একজন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেও মারা গেছেন এ বছর। অপরদিকে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গোটাবিশ্বে ব্যাপক গোলযোগের সৃষ্টি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। জ্বালানি তেলের বাজারও বছর জুড়ে ছিল অস্থিতিশীল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ৩০০ দিনেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরো ১০ হাজার মানুষ। বহু ইউক্রেনীয় জীবন বাঁচাতে পাড়ি দিয়েছেন সীমান্তে।
দেশটির ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন অন্য দেশে। রাশিয়ার মিসাইল হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে ইউক্রেনে। অনেক ইউক্রেনীয় হয়তো মোমবাতি প্রজ্বালন করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবেন। আবার অনেকের মাঝে থাকবে আপনজন হারানোর বেদনা।
ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়াতেও জমকালো নববর্ষ উদ্যাপনের তেমন আগ্রহ নেই অনেকের। মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বাসিন্দাদের নববর্ষ কীভাবে উদ্যাপন করবেন সে বিষয়ে ভোট দিতে বলার পর মস্কো তার ঐতিহ্যবাহী আতশবাজির প্রদর্শনী বাতিল করেছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম বহু দেশে করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ঠিক এ সময়ে করোনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চীনে।
চীনের সরকার জিরো কোভিড পলিসি শিথিল করার পরপরই হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। সুতরাং নববর্ষ উদ্যাপনের তেমন কোনো আভাস মিলছে না দেশটিতে। বাণিজ্যিক হাব সাংহাইয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরের বিখ্যাত বান্ড ওয়াটারফ্রন্টে কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম হচ্ছে না এবার। তবে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশেই বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে জোরোসোরে। বিশেষ করে আর্জেন্টাইনদের কাছে এবারের বর্ষবরণ উদ্যাপন একটু ভিন্ন রকম। (সূত্র: এএফপি, এনডিটিভি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.