নতুন বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে ভারত, ঋণের জন্য চলছে দৌড়ঝাঁপ
বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ১৯ দিনব্যাপী ভয়াবহ এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত-পাকিস্তান। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ঠান্ডা থাকলেও, সংঘাতের রেশ রয়ে গেছে এখনও। তলানিতে নেমে দুই দেশের সম্পর্ক ঠিক হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না কোনো।
সংঘাত শুরুর পর থেকেই চলমান নদীর পানিবণ্টনের লড়াই তীব্রতর করে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে এবার সিন্ধু উপত্যকার চন্দ্রভাগা (চেনাব) নদীর ওপর নতুন বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ভারত। আর সেজন্য ৩ হাজার ১১৯ কোটি রুপির বিশাল এক ঋণের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
শুক্রবার (১১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্পে মোট খরচ হবে ৪ হাজার ৫২৬ কোটি রুপি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিলে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এই বাঁধ ও জলাধার তৈরি হয়ে গেলে সেখান থেকে ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে ভারত।
সূত্রের বরাতে এই খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে এই ঋণের বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ভারত সরকারের একাংশ অবশ্য বিশ্বব্যাংক থেকেই এই ঋণসহায়তা পেতে আগ্রহী। এই বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতাতেই ১৯৬০ সালে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে।
জম্মু–কাশ্মীরের কিসতোয়ার জেলায় চন্দ্রভাগা নদীর ওপর এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেলে তা পাকিস্তানে পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। এতদিন ধরে এই প্রকল্প রূপায়ণে তেমন একটা উদ্যোগ দেখা যায়নি। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বার্থে চন্দ্রভাগার গতিপথ পরিবর্তনের কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালে। এ জন্য ৬০৯ মিটার দীর্ঘ টানেল বা সুড়ঙ্গ তৈরি হবে। বাঁধের উচ্চতা হবে ১০৯ মিটার।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন চাইছে ২০২৭ সালের মধ্যে এই প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ করে ফেলতে। কিসতোয়ার জেলার এই বাঁধ তৈরি হয়ে গেলে জম্মু–কাশ্মীরের শিল্প সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। বিদ্যুতের ঘাটতিও মিটবে।
পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর পাকিস্তানের ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে দেয় ভারত। এই চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগি হয়ে আসছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তি স্থগিত রেখে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে ‘পানি যুদ্ধ’ শুরু করেছে, নতুন এই বাঁধ প্রকল্প তাকে ত্বরান্বিত করবে।
প্রকৃতপক্ষে, ভারত সিন্ধু অববাহিকায় উন্নয়নমূলক যা কিছু করতে পারে, সিন্ধু পানি চুক্তির কারণে এত দিন ধরে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে উঠতে পারেনি। কিন্তু, পেহেলগামকাণ্ড এবং তার জেরে চলা ১৯ দিনের সংঘাতের পর এবার সেই কাজগুলো করার আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে ভারত। এই প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান কী, তা এখনো অজানা। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াও এখনো জানা যায়নি।
সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু অববাহিকার মোট ছয়টি নদীর পানি দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছিল। পূর্ব দিকের তিন নদী বিপাশা (বিয়াস), ইরাবতী (রবি) ও শতদ্রুর (সতলেজ) পানির ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ ভারতের। আর পশ্চিম দিকের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলম (বিতস্তা) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) সিংহভাগ পানি পাওয়ার কথা পাকিস্তানের। চুক্তি অনুযায়ী, এই তিন নদীর মোট পানির ২০ শতাংশের ওপর রয়েছে ভারতের অধিকার ও ৮০ শতাংশের ওপর পাকিস্তানের অধিকার।
পশ্চিমের তিন নদীর পানির ওপর ভারতের অধিকার না থাকলেও চুক্তিতে বলা হয়েছিল, তা থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকার থাকবে তাদের। সেচের কাজেও ওই নদীগুলোর পানি ব্যবহার করতে পারবে ভারত।
ভারত তাই দাবি করছে, চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন না করেই তারা চন্দ্রভাগায় এই বাঁধ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক অনুমোদন পায় কি না। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.