কলকাতা-হাওড়া (পশ্চিমবঙ্গ) প্রতিনিধি: প্রত্যাশিত ছিলই। জল্পনা-কল্পনাও কম ছিল না। প্রত্যাশা মতোই অনেক নতুন মুখ যুক্ত হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায়। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও নতুন ৪ জন জায়গা পেলেন তাঁর টিমে।
তবে মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণ কিংবা রদবদল যা-ই বলা হোক না কেন, বাদ পড়ার তালিকাটা কিন্তু আদৌ প্রত্যাশিত ছিল না অনেকের কাছেই। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং আনুগত্য জানিয়ে আজ বুধবার শেষ মুহূর্তে দফায় দফায় কয়েক জন হেভিওয়েট মন্ত্রীর সরে দাঁড়ানো নিঃসন্দেহে অবাক করেছে রাজনৈতিক মহলকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অবশ্য বিশ্বাস, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নতুন টিম সাজানোর মধ্যে আসলে প্রতিফলিত হয়েছে মোদীজির অসাধারণ দূরদৃষ্টি। অনেক নতুন মুখ এনে তাঁর মন্ত্রীসভাকে তিনি যেমন আরও গতি দিতে চেয়েছেন, ঠিক তেমনই দক্ষ প্রবীণদের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে এবারে তাঁদের বিজেপি-র সংগঠনকে আরও মজবুত করার কাজে লাগাতে চাইছেন। লক্ষ্য অবশ্যই ২০২২এ উত্তর প্রদেশ, গুজরাত,পঞ্জাব সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং অবশ্যই ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন।
দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ আজ বুধবার সন্ধ্যেয় মোট ৪৩ জনকে মন্ত্রীগুপ্তির শপথবাক্য পাঠ করালেন। তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছিলেন নতুন ৪ জন। কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, আলিপুরদুয়ারের সংসদ জন বার্লা, বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার। ৪ বিজেপি সাংসদই পেলেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে নতুনদের স্বাগত জানিয়ে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন জনপ্রিয় গায়ক আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবং রায়গঞ্জের জনপ্রিয় সংগঠক দেবশ্রী চৌধুরি।
নতুনদের মধ্যে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে জন বার্লার মন্ত্রী হওয়াও বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয়। এই দু’জনেই কিন্তু প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে সংসদে পা রেখেছেন ২০১৯এ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন গুরুতর কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই কেন ইস্তফা দিলেন তা এখন বিভিন্ন মহলে গভীর আলোচনার বিষয়। তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এবং আইন ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য মন্ত্রীদের সরে যাওয়া নিয়েও জনমানসে গবেষণার অন্ত নেই।
তবে আজ বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো গোয়ালিয়র রাজপরিবারের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ। গত বছরেই মধ্যপ্রদেশের এই তরুণ হেভিওয়েট কংগ্রেস ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন।
অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রাণেও এখন প্রধানমন্ত্রীর ক্যাবিনেটে। প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী – পদোন্নতি হয়েছে হরদীপ সিং পুরী, কিরণ রিজিজু, মনসুখ মান্ডব্য সহ অন্তত ৭ জনের। উত্তর প্রদেশের আপনা দলের সাংসদ অনুপ্রিয়া পটেল আবার জায়গা ফিরে পেলেন ক্যাবিনেটে।
লক্ষ্যণীয়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জে ডি ইউ নেতা রামচন্দ্র প্রসাদ সিং জায়গা করে নিলেন নতুনদের মাঝে। ওড়িশার অবসরপ্রাপ্ত আই এ এস অফিসার বিজেপি-র রাজ্যসভার সদস্য অশ্বিনী বৈষ্ণবও এলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। একসময় তিনি দায়িত্বপূর্ণ পদে ছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সচিবালয়ে।
সব মিলিয়ে এবারে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৭। নতুন টিম মেম্বারদের মধ্যে সম্ভবত ১১ জন মহিলা। নবীন-প্রবীণে যথাযথ ভারসাম্য নিয়ে আসার লক্ষ্যেই এই রদবদল তথা সম্প্রসারণ বলে জানানো হয়েছে।
মোট ১৫ জন পূর্ণমন্ত্রী শপথ নিলেন। তাদের মধ্যে ৮ জনের পদোন্নতি হলেন। ৭ জন প্রথমবার মন্ত্রী হলেন। পশ্চিমবাংলা থেকে নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন ৪ জন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় যারা জায়গা পাচ্ছেন, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো তারা হলেন:
১. নারায়ণ রানে
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.