বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: বিতর্কের ডামাডোল আর ১৮ খেলোয়াড়ের ‘বিদ্রোহের’ মধ্যে নতুন দল গুছিয়ে নিয়েছেন পিটার জেমস বাটলার। তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের নতুন অভিযান শুরু আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর দিয়ে। নতুন স্বপ্নের বুননও বাংলাদেশ কোচের চোখে।
তবে, পরিস্থিতির বিবেচনায় তার কণ্ঠে দুরকম সুর। একদিকে নতুনদের মধ্যে ‘আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ’ যেমন দেখছেন, তেমনি নতুন দলকে ‘সময়’ দেওয়ার অনুরোধও করেছেন তিনি।
দুই প্রীতি ম্যাচ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে উড়াল দেওয়ার আগে রোববার সংবাদ সম্মেলনে বাটলার মূলত প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন চলমান সংকট নিয়ে। সাবিনা-মনিকা-মারিয়া-ঋতুপর্ণাদের মতো অভিজ্ঞদের অনেকেই নেই দলে।
বর্তমান দলটি একেবারে আনকোরা না হলেও নতুন। যদিও সাফ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে আফঈদা-আইরিনদের মতো আট জনের; কিন্তু ২৩ জনের দলে একেবারেই নতুন ৯ জন। তবে এই দলকেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ মনে হচ্ছে বাটলারের।
“আমার মনে এটা নতুন জাতীয় দল, নতুন তারকা, নতুন ভিশন, এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন সুযোগ। আমি তাদেরই বেছে নিয়েছি, যাদের নিয়মিত পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে সম্ভাবনা, সততা এবং আরও অনেক কিছু আছে। এরাই বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ।”
“নতুন একটা গ্রুপ, নতুন সব মুখ, আমার মনে হয়, এই মেয়েরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিবে। নতুন অধিনায়ক (আফঈদা খন্দকার), সে খুবই দৃঢ়তাপূর্ণ এবং আমি মনে করি, এই দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সব গুণাবলী তার আছে।”
দীর্ঘদিন ধরেই নারী ফুটবলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সাবিনা খাতুন। এই ফরোয়ার্ডের হাত ধরে উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। কোচের সঙ্গে বিবাদে তিনিও আরও ১৭ জনের সাথে দলছুট। দুবাই সফরে নতুনদের হাত ধরে দলের দৌড় কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে অনেকের। বাটলারও পরোক্ষভাবে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না।
“আমি মনে করি, জীবনে আমাদের কখনও কখনও বাস্তববাদী হতে হয়। আপনি যে স্বপ্নটা পূরণ হতে দেখতে চাইবেন, সেটা নিয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। আমিও জিততে চাই, কিন্তু আমি মনে করি, এই মেয়েরা তরুণ। ভবিষ্যত দলের জন্য তারা গড়ে ওঠার পর্যায়ে আছে। এই সফর তাদের জন্য দারুণ সুযোগ।”
সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর ঘিরে আশাবাদ শোনালেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার জেমস বাটলার। ছবি: বাফুফে
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা সেখানে যাব, নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করব। আমরা যেখানে আছি, সেটা নিয়ে আমি মনে করি, আপনাদের বাস্তববাদী হওয়া প্রয়োজন। এদের নিয়ে ধৈর্য্য ধরা দরকার। তবে আমি খুশি যে, এই দলের মধ্যে আমি অনেক আত্মবিশ্বাস দেখতে পাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ আবারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বাটলারকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে তার আপত্তি থাকা নিয়ে। তিনি জানান, মূলত বাফুফের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে নিয়োগ পেয়েছেন ৫৮ বছর বয়সী এই ইংলিশ কোচ।
এবারের সফর তাই বাটলারের জন্য ‘অগ্নিপরীক্ষাও’। তবে তিনি, এগিয়ে যেতে চান ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে।
“বিশ্বের কোথাও যাদের মূল্য নেই, আমি তাদের বাছাই করি না। তাই আমি নতুন একটা গ্রুপ তুলে এনেছি। আমার সামনে দুটি পথই খোলা ছিল। হয়, বিষন্ন হয়ে এক কোণায় বসে কান্না করা, অথবা যা আছে, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সেটা (চ্যালেঞ্জ) গ্রহণ করা। আমি ইতিবাচকতাটাই গ্রহণ করেছি।”
“আমি বিকল্প নিয়ে ভাবি না। শোরগোল শুনি না। গুজব-গুঞ্জনে কান দেই না। আমি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ঢু মারি না…ইতিবাচক দিকে তাকাই।”
সাফের গন্ডি পেরিয়ে এশিয়ার আঙিনায় যাওয়ার স্বপ্নের কথা আগেও একাধিকবার বলেছেন বাটলার। নতুনদের কাঁধে সাওয়ার হয়ে ফের বললেন একই কথা।
“সাফ এখন ইতিহাস, সাফকে ভুলে যান। এগিয়ে যান। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পেছন ফিরে তাকানোর কিছু নেই। আমি চেষ্টা করছি, নতুন অধ্যায় লেখার। কে থাকল, কে থাকল না, সেটা আমি পাত্তা দেই না। আমরা আসলে ভীষণ ইতিবাচক মানসিকতার ২৩ জন পেয়েছি, যাদের প্রতি আমার অনেক আস্থা আছে যে, তারা তাদের সেরাটা দিবে এবং আমি তাদের কাছে কেবল এটাই চাইতে পারি।”
সোমবার দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেবে দল। সেখানে ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.