নওগাঁয় ব্যতিক্রমী নবান্ন উৎসব

নওগাঁ প্রতিনিধি: কাঁঠাল পাতার ঠোঙ্গা ও তাল পাতার চামচ। শিক্ষার্থীদের মুষ্ঠিবদ্ধ চাল। আর এ চাল থেকে ক্ষীর ও পায়েস। এ যেন এক অন্য রকম নবান্ন উৎসব। অগ্রহায়নের প্রথম দিন শহর তলির ‘পশ্চিম নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে’ শিক্ষার্থীদের মুষ্ঠিবদ্ধ চাল সংগ্রহের মাধ্যমে দিনব্যাপী ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’।

হেমন্ত এলেই বাংলার দিগন্তজোড়া প্রকৃতিতে ছেয়ে যায়। অবারিত প্রান্তরে শস্যের দোলা হাসি ফোটায় কৃষকের মুখে। আর নতুন ধানে নবান্ন তো কৃষকের জন্য এক আনন্দের উৎসব। নতুন ফসল ঘরে তোলতে বাংলার কৃষকরা কাটা মাড়াইয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে। আর নতুন ধান থেকে তৈরী নানান পিঠা। আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত নবান্ন উৎসব উদযাপন করা হয়।

গতকাল সকালে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার সময় সাথে করে নিয়ে এসেছিল মুষ্ঠি চাল। আর চাল থেকে ক্ষীর ও পায়েস তৈরি করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আগত অতিথিদের ক্ষীর ও পায়েস তৈরি করে দিয়ে আপ্যায়ন করানো হয়। গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে খাবার পরিবেশন করা হয় কাঁঠালের পাতার ঠোঙ্গা ও তাল পাতার চামচ। এরসাথে মুড়ি-মুড়কি।

 

 

পরে নবান্ন উৎসবের আলোচনায় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হাসেম আলির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, একুশে পরিষদ নওগাঁ উপদেষ্টা শরিফুল ইসলাম খান ও ময়নুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এমএম রাসেল।

এরপর চলে নাচ, গান, গল্প ও কবিতা আড্ডা।

বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী রাশিদুজ্জামান, হাসিব ও শিহাব বলেন, স্কুলে আসার সময় নবান্ন উসবের জন্য বাড়ি থেকে একমুঠো চাউল নিয়ে আসছিলাম। সেই চাউল থেকে ক্ষীর ও পায়েস করা হয়েছিল। খুবই ভাল লাগছে এমন আয়োজনে। আগে কখনোই এমন আয়োজন করা হয়নি।

একুশে পরিষদের উপদেষ্টা শরিফুল ইসলাম খান বলেন, বাঙালীর এক প্রিয় উৎসব নবান্ন। আমনের নতুন ধানে বাঙালীর ঘরে ঘরে নতুন ধানের পিঠা ও পায়েস উৎসব হয়ে থাকে। অতিথীদের আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। যেদিন থেকে নতুন ধান কাটা শুরু হয়েছিল ঠিক তখন থেকেই এ উৎসব পালন হয়ে আসছে। তবে ঠিক করে তা বলা সম্ভব নয়। নি:সন্দেহ এটি বাঙালীদের প্রিয় উৎসব।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এমএম রাসেল বলেন, আগে আমরা দেখতাম গ্রামে আমাদের মা-খালারা বাড়িতে নতুন ধান উঠলেই সেই ধানের চাল দিয়ে ক্ষীর, পিঠা-পুলি তৈরি পাড়া প্রতিবেশির মাঝে বিতরণ করতেন। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আবহমান কাল থেকে এ উৎসব পালন করে আসছে। বাংলার ঋতুভিত্তিক যে অসাম্প্রদায়িতক উৎসবগুলোর এই প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলতেই এই উৎসবের আয়োজন। নতুন প্রজন্মের জন্য মাঝে অসম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক। আমরা আরো কয়েকটি স্কুলে এ আয়োজন করব। এছাড়া আগামী বছর পাড়া ও মহল্লায় চালু করা হবে।#

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.