নওগাঁয় টেকনিশিয়ানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

 

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া অভিযোগ কেন্দ্রের টেকনিশিয়ান গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গত তিন বছর থেকে তিনি অফিসে কর্মরত। এ অভিযোগ কেন্দ্রের আওতায় ভারশোঁ ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বিদ্যুৎগ্রাহকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তার হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসীরা দ্রুত তাকে অনত্র বদলির দাবী জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নতুন গ্রাহকের বাড়িতে বৈধ মেইন সুইচ লাগানোর কথা। ভারত (ইন্ডিয়ান) থেকে অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা মেইন সুইচ গ্রাহকদের নিতে এক প্রকার বাধ্য করা হয়। ওই মেইন সুইচগুলো উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের ভেড়ি দূর্গাপুর গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রাহকদের বাড়িতে লাগানো হয়। পরবর্তিতে বিষয়টি প্রকাশ পেলে সেগুলো খুলে ফেলে অন্য মেইন সুইচ লাগানো হয়। এ মেইন সুইচগুলো গোলাম রাব্বানী অবৈধভাবে চোরাই পথে ভারত থেকে নিয়ে এসে গ্রাহকের নিতে এক প্রকার বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিআরইবি অফিসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা তার আত্মীয়। আর এসুযোগের কেউ তার কিছু করতে পারবেনা বলে ধরাকে সরা করে চলেছেন তিনি। বিদ্যুৎ সংযোগের বিভিন্ন ভূল ধরে এলাকাবাসীদের কাছ থেকে একপ্রকার জোর পূবর্ক চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা দিলে অবৈধভাবে বিদ্যুতের লাইন ব্যবহার করার সুযোগ আছে। আর কেউ চাঁদা না দিলে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে মর্মে মামলার ভয় দেখানো হয়। অফিসে ওই গ্রাহকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিলের কাগজে জরিমানা স্বরুপ বাড়তি টাকা লিখা দেন। মোট কথা অনিয়মই যেন তারে কাছে নিয়মে পরিনত হয়েছে। টাকা দিলেই সব অনিয়ম তখন নিয়ম হয়ে যায়।

নতুন গ্রাহকের কাছে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিগুলো গোলাম রাব্বানী মালশিরা পোস্ট অফিসের পিয়ন সোহেল রানাকে হাত করে সবগুলো চিঠি তিনি নিজের কাছে রাখেন। এরপর প্রতি গ্রাহককে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে মিটার সংযোগের নামে টাকা দাবী করেন। যদি কোন গ্রাহক টাকা দিতে বিলম্ব করেন তাহলে তার হয়রানির শেষ থাকেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এসবের কারণে এলাকাবাসীরা তাকে হায়ান (হিং¯্র পশু) নামে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া মাসোয়ারার একটি অংশ নওগাঁ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিলন কুমার কুন্ডুর কাছেও যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রী বিটিসি নিউজকে বলেন, টাকা ছাড়া গোলাম রাব্বানী কিছুই বুঝেনা। গ্রাহকের বাড়িতে মিটার লাগাতে দেরী হচ্ছে। তার কথা অফিস যখন বলবে তখন মিটার লাগানো হবে। কিন্তু ৫শ’ টাকা তার হাতে ধরিয়ে দিলে দ্রুত মিটার লাগানো হয়। অনিয়মই যেন তারে কাছে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা গরীব মানুষ বিদ্যুতের মিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চলে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারিনা।

মশিদপুর গ্রামের ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমার পাড়ায় বিদ্যুতের নতুন ১৭জন গ্রাহক। ১৫ কেবি ট্রান্সফর্মার লোড নিতে পারেনা। এজন্য গত দেড় বছর আগে ২৫ কেবি ট্রান্সফর্মার নিতে গোলাম রাব্বানির সাথে ৭৫ হাজার টাকায় চুক্তি করা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা তুলে ও ভোটার আইডির ফটোকপি সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র তাকে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছেন বলে দাবী করে আর কাজ করে দেননি। টাকাগুলো তিনি আত্মসাত করেছেন। পরবর্তিতে গ্রামের লোকজনকে কিস্তি (এনজিও) থেকে টাকা তুলে আমাকে পরিশোধ করতে হয়েছে। এছাড়া গত ৩ মাসে আমার কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে প্রায় ২ মণ দেশীয় পাবদা, টেংরা ও মাগুর মাছ নিয়েছেন।’

চৌবাড়িয়া বাজারে আরেক ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, বাজারে মার্কেটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ওয়ার্কসপের দোকান করেন। দোকানের মালিক মার্কেটে বাণিজ্যিক মিটারে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছেন। এজন্য গোলাম রাব্বানী আমার কাছ থেকে গত একবছর চাঁদা হিসেবে মাসে ৩ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। চাঁদা দেয়া বন্ধ করলে গত তিনমাস থেকে মোট বিলের সাথে জরিমানা স্বরুপ মাসে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন মামলা করারও ভয় দেখানো হয়। আমরা এলাকাবাসী তার কাছ থেকে পরিত্রাণ চাই।

ভেড়িদূর্গাপুর গ্রামের গ্রাহক সাইফুল ইসলাম ও কাজেম আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রায় ১১ মাস হলো গ্রামে একই সাথে ১৫০টি মিটার সংযোগ হয়েছে। ইলেকট্রিক মিস্ত্রী মোজাফ্ফর ও মিজানুর রহমান এসব কাজ করেছেন। কিছু ভারতীয় (ইনডিয়ান) মেইন সুইচ লাগানো হয়েছিল এবং পরে খুলে ফেলা হয়।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাবাই হাটের হাউজ ওয়ারিং মিস্ত্রী ওয়াহাব বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘গোলাম রাব্বানী চরম দূর্নীতিবাজ লোক। দেশীয় প্রদীপ, গ্রামীণ, সেভেন স্টার ও এমইপিসহ কয়েকটি মেইন সুইচ বাড়ীতে লাগানো হয়। তবে তিনি ভারত থেকে অবৈধভাবে কিছু মেইন স্ইুচ সংগ্রহ করেছিলেন। যেগুলো বাড়ীতে লাগানোর কোন অনুমোদন বা নিয়ম নাই।’

পোস্ট অফিসের পিয়ন সোহেল রানা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যার চিঠি তাকেই দিই। এ বিষয়ে গোলাম রাব্বানীর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

এ বিষয়ে চৌবাড়িয়া অভিযোগ কেন্দ্রের টেকনিশিয়ান গোলাম রাব্বানী বিটিসি নিউজকে বলেন, আমিতো কোন ব্যবসায়ী না যে আমার কাছ থেকে মেইন সুইচ কিনতে হবে। গ্রাহকরা যে যার মতো করে দোকান থেকে কিনে নিয়েছেন। আর ট্রান্সফর্মারের বিষয়ে সাইফুল কেন আমাকে টাকা দিবে। সে কি দালালী করে। আর তার কাছ থেকে আমি মাছ কিনে নিয়েছি। এলাকায় কেন আমি চাঁদাবাদী করব। আর কেনই বা মামলা করার হুমকি দিব। তবে যার স্বার্থে আঘাত লাগে সে আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তীহিন।

নওগাঁর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিলন কুমার কুন্ডু বিটিসি নিউজকে বলেন, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এছাড়া ভারতীয় মেইন সুইচের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.