নওগাঁয় আমন কাটা মাড়াই শুরু : দাম নিয়ে শঙ্কা

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় শুরু হয়েছে আগাম জাতের আমন ধান কাটা মাড়াই। দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে চারিদিকে সোনালী রঙের আমনের মৌ মৌ গন্ধ। ক্ষেতভরা মাঠে সোনালী নতুনও ধানে হাসি নেই কৃষকের মুখে। এ বছর বৃষ্টি নির্ভর আমন ধান হয়ে পড়ে সেচ নির্ভর। ফলে একদিকে পানির অভাবে চাষবাদে খরচ বেশি পড়েছে এবং ফলনও কম হয়েছে। অপরদিকে বাজারে নতুন ধানের দামও কম হওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। ফলে আগামীতে কৃষকরা ধান চাষবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় প্রায় ২ লাখ ২৪৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে বৃষ্টি নির্ভর পোরশা উপজেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর, সাপাহারে ১৬ হাজার ১৫০ হেক্টর ও নিয়ামতপুরে ২৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমানের আবাদ হয়েছে। এ তিন উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি খরায় আক্রান্ত হয়, তীব্র খরায় আক্রান্ত ছিল ৫০০ হেক্টর এবং ১৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্ভব নয়। এ বছর প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকের ঘরে উঠবে বলে জানা গেছে।

এ বছর শুরু থেকেই বৃষ্টি তেমন একটা না হওয়ায় পুকুর, ডোবা, শ্যালো মেশিন ও গভীর নলকুপ দিয়ে আমনের আবাদ করতে হয়েছে। যে সময় ধানের গাছ ফুল ও দুধ আসে তখন পানি না পাওয়ায় দানা পুষ্ট হয়নি। এতে ফলনের কিছুটা ব্যঘাত হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের অন্য উপায়ে পানি দিতে গিয়ে ধান উৎপাদনে বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে। তবে স্বল্প সময়ে উৎপাদন সক্ষম উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান-৪৭-৪৯-৬২. বিনা-৭, স্বর্ণা-৫, ত্বরা স্বর্ণ ও সোনার বাংলা জাতের ধানের ভাল ফলন হয়েছে। ভালো ফলন হলেও বাজার দাম কম হওয়ায় হতাশ চাষিরা। তবে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত প্রশাসনের পক্ষে বাজার মনিটরিং এর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

জেলার পোরশায় বারিন্দার হুমায়ন কবির ও জালুয়া গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, বিঘা প্রতি ১৫-১৬ মণ ধানের আবাদ হয়েছে। এদিকে শ্যালো মেশিন দিয়ে ধানের আবাদ করতে গিয়ে বিঘা প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। অনেক জায়গায় পানির অভাবে ধান পুড়ে মারা গেছে। বাজারে নতুন ধান প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়। ফলে ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ উঠলেও লাভ হবে না।

মান্দা উপজেলার দেলুয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক বজু গোপাল বিটিসি নিউজকে বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে সোনার বাংলা জাতের ধানের আবাদ করেছেন। যে সময় ধান বেরোয় তখন পানি সংকট পড়ে। ফলে ধানের দানা তেমন পরিপুষ্ট হয়নি। এতে উৎপাদনে বিঘাপতি ৩-৪ মন ধান কম হয়েছে।

ধামইরহাট উপজেলার ধানতাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হাসান বিটিসি নিউজকে বলেন, এ বছর বৃষ্টি না হলেও কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দেয়নি। ফলে কৃষকরা সুষ্ঠু ভাবে ধান কাটা মাড়াই করতে পারছেন। তবে কৃষকরা ধানের দাম না পেলে আগামীতে ধানের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হলে কৃষকরা দাম পাবেন বলে আশাবাদী।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বিটিসি নিউজকে বলেন, এবছর সুষম বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষককে সম্পূরক সেচে যেতে হয়েছে। এমনকি ধান রোপনের সময়ও বৃষ্টি হয়নি। ফলে বৃষ্টি নির্ভর আমন এবার সারা বছরই সেচ দিয়ে আবাদ করতে হয়েছে। এতে কিছুটা বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে কৃষকদের। জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর খরার কবলে পড়ে ফসল নষ্ট হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। কর্তন মৌসুমের পরে যদি বাজার দর ভাল থাকে তাহলে কৃষকরা লাভবান হবেন। কৃষকরা ২-৩ মাস ধান ধরে রাখতে পারলে ভাল দাম পাবেন। কিন্তু তাদের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠেনা। কিছুদিন পর বাজার উঠে গেলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে আগামীতে তারা ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.