নওগাঁর বরেন্দ্র রেডিও’র অগনিত শ্রোতাদের দিয়েই গেলাম কিন্তু প্রাপ্তির খাতা শূণ্য

 

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর বরেন্দ্র কমিউনিটি রেডিও’র প্রধান অনুষ্ঠান প্রযোজক রিফাত হোসাইন সবুজ রেডিও’র যাত্রাকাল থেকেই যুক্ত এ গণমাধ্যমে। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৭টি বসন্ত। কিন্তু আজও ঘোরেনি ভাগ্যের চাকা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রেডিওকে আকড়ে ধরে আছেন। অর্থনৈতিক দর্ন্যতায় মাঝে মধ্যেই হোচট খেতে হয়। জন্ম ১৯৯০ সালের ১মে জেলার রাণীনগর উপজেলার মালশন গ্রামে। পিতা মো: জহুরুল হক সরদার ও মাতা শামসুন নাহার হক শিরিনের ঘরে জন্মগ্রহন করেন।

২০০৮ সালে স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি, ২০১০ সালে রাজশাহী শাহমখদমু কলেজ থেকে এইচএসসি, ২০১৬ সালে সরকারি তিতুমির কলেজ থেকে ¯œাতক করেন। স্কুল জীবনে বিশ্ববার্তা পত্রিকায় শিশু সাংবাদিকতার মধ্যে দিয়ে মিডিয়া জগতে পথচলা শুরু। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের ২৬ মার্চ যুক্ত হন বরেন্দ্র রেডিওর সাথে। ২০১৩ সালে ব্রডকাষ্টিং সার্পোট, ২০১৪ সালে নিউজ এডিটর , ২০১৫ সালে সহকারি অনুষ্ঠান প্রযোজক এবং ডিসেম্বর ২০১৫ সাল থেকে প্রধান অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে কর্মরত আছেন।

নওগাঁবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিন নানা ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচারের মাধ্যমে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁর প্রায় ৮ লক্ষ শ্রোতাদের কাছে প্রিয় একজন রেডিও কর্মী হিসেবে গ্রহন যোগ্যতা পেয়েছেন। তবে তিনি অর্থনৈতিক ও ব্রেণের এভিআই সমস্যা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। এত সমস্যার পরও সদা হাস্যজ্বল থেকেই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন নওগাঁর সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। এত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও কেন তিনি হাড় ভাঙা শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়টি নিয়ে রিফাত হোসাইন সবুজ বলেন, কমিউনিটি রেডিও এমন একটি প্রচার মাধ্যম যার মাধ্যমে খুব সহজেই বিষয় ভিত্তিক অনুষ্ঠান নির্মানের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছে দেয়া যায় ভালো কিছু মেসেজ। ভালো লাগা আর ভালোবাসা থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার অর্থনৈতিক ও মাথার সমস্যা মাঝে মধ্যেই আমাকে খুব অসহায় করে ফেলে। এমনও কিছু দিন যায় মাথার ওষুধ কেনার টাকা পর্যন্ত থাকে না। ডাক্তার আমার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের এ্যাপোলো হসপিটালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কিন্তু অর্থাভাবে আজও যেতে পারিনাই। নিরবে চোখের পানি ফেলি তবুও কাউকে বুঝতে দেইনা।

রেডিও’র কাজ ছেড়ে অন্য পেশা কেন গ্রহন করছেন না কেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমার জন্ম একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে, অনেক কষ্টে পড়াশুনা করেছি। বার বার পরিবার থেকে আমাকে রেডিও’র কাজ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। আর আমি নিজেও ছেড়ে দিতে চেয়েছি। এখান থেকে যে সামান্য সন্মানী পাই তা দিয়ে নিজের জন্য একটি ভালো পোষাকও কিনতে পারিনা। রেডিও’র প্রতি ভালো লাগা এবং শ্রোতাদের অনুরোধ আমাকে আজও আকড়ে ধরে আছে। সরকার যদি কমিউনিটি রেডিওগুলোতে কিছু দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প দেয় এবং স্থানীয় সরকারি বিভন্ন দপ্তর থেকে কিছু কাজ রেডিও’র জন্য বরাদ্দ দেয় তবে রেডিও’তে সফলতার সাথে কাজ করা সম্ভব। নইলে আমার মতো অনেক কমিউনিটি রেডিও কর্মী মাঝ পথে ঝড়ে যাবে। বর্তমান সরকারের একটি মহৎ উদ্যেগ কমিউনিটি রেডিও তাই আমার আকুল আবেদন আমাদের দিকে সুদৃষ্টি দিবেন।

বরেন্দ্র রেডিও’র স্টেশন ম্যানেজার সুব্রত সরকার জানান, অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে মাঝে মধ্যেই রেডিও’র অনেক কর্মীকে আমরা ধরে রাখতে পারিনা। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে অন্যত্র চলে যায়। তাই ইচ্ছা থাকলেও আমরা রেডিও’র জন্য নিবেদিত কর্মীদের হারাচ্ছি। সরকার যদি কমিউনিটি রেডিও’র দিকে সুদৃষ্টি দেয় তবে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭টি কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারে আছে। স্থানীয় উন্নয়মূলক বিজ্ঞাপন এবং দাতা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত কিছু প্রকল্প দিয়ে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.