ধামইরহাটে ১০ বছর ধরে বিনা বেতনে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান ও শালবন পাহারা

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর সীমান্তঘেষা উপজেলা ধামইরহাট। যেখানে রয়েছে প্রায় দুইশ বছরের পুরাতন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শালবন ও আলতাদিঘী। যার আয়তন প্রায় ১ হাজার ২শ বিঘা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছুটে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। এখানে তিন বছর একটি বেসরকারি সংস্থাতে কাজ করার পর মেয়াদ শেষ হলেও গত ১০ বছর ধরে বিনা বেতনে দেখভাল করছেন ১২ গ্রামের ২৪ জন হতদরিদ্র নারী-পুরুষ। ভবিষ্যতে তাদের এ কাজটি স্থায়ীকরণ হবে এই আশায় পড়ে আছেন।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আরন্যক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বেসরকারী সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ কর্তৃক ১২টি সমিতির ৬জন মহিলাসহ ২৪ জনকে শালবন ও আলতাদিঘী দেখাশুনার জন্য সম্পৃক্ত করা হয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত (অর্থ্যাৎ তিন বছর) কার্যক্রম চালিয়ে এনজিও ‘পদক্ষেপ’ তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেন। ইতিমধ্যে ২০১১ সালে আলতাদিঘীকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পদক্ষেপ এনজিও তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার পরও এলাকার স্বার্থে হতদরিদ্র ২৪ জন নারী-পুরুষ অদ্যাবধি আলতাদিঘীর মাছ গভীর রাতে পাহারা দেওয়া, শালবন দেখাশুনা, জাতীয় উদ্যানে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কাজে সহযোগিতা করে আসছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সালে আগত আরন্যক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বেসরকারী সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ ১২টি সমিতিতে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা এককালীন (রিভলবিং ফান্ড) প্রদান করেছেন। এছাড়া আরও কোন উন্নয়ন তাদের জন্য কেউই করেনি।

বন পাহারায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ (সিপিজি) বা কমিউনিটি বন পাহারাদল এর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল ইসলাম ও সম্পাদক ফিরোজ বাবু বলেন, আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হবার পরে ২০১২ সালে কক্সবাজারে বন পাহারায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘এক্সপোজার ভিজিট’ কার্যক্রমে ৭ দিনের শিক্ষামুলক প্রদশর্ণীতে অংশ গ্রহণ করি। আমাদেরকে ২০১০ সালে ধামইরহাটে আকস্মিক সফরে আসা তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা যথাক্রমে আবুল বাশার মিয়া ও অজিদ কুমার রুদ্র উদ্যান এলাকায় কর্ম সংস্থানের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত কোন বেতন-ভাতা পাইনা, স্থায়ীকরণ হবে এই আশায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আলতাদিঘী সহ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি)’র সভাপতি মুশফিকুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, জাতীয় উদ্যান ও শালবন এলাকার জয়জয়পুর, মইশড়, মোল্লাপাড়া, আলতাদিঘী, দাদনপুর, খয়েরবাড়ী, অমরপুর, বাখরপুর, শেখায়পুর উত্তর চকযদু (খড়ডাঙ্গা)সহ প্রায় ১২ টি গ্রামের ‘জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ও পুনুরদ্ধার’ নামক ১২টি সমিতির প্রত্যেকটিতে ২ জন করে মোট ২৪ জনের সমন্বয়ে পিপলস ফোরাম ও বনবিভাগের সমন্বয়ে বন পাহারাদল তৈরী করা হয়। তারা অদ্যাবধি বিনা পারিশ্রমিকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, যেহেতু আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান। এলাকায় হাজার হাজার পর্যটক, দর্শনার্থীদের আগমন, তাদের সার্বিক নিরাপত্তা, বনের শৃঙ্খলা ও বন দেখাশুনায় তারা ১০ বছর যাবৎ নিয়োজিত। তাদের ভাগ্যোউন্নয়ন তাদের পরিবারের সদস্যদের ভালভাবে দু’মুঠো খাবার তাদের মুখে তুলে দেবার লক্ষ্যে কর্মরত ২৪ জনকে স্থায়ী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-নজর দেয়া প্রয়োজন। এ জন্য আমি সরকারের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ধামইরহাট উপজেলা বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বিটিসি নিউজকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উপরোক্ত ২৪ জনকে তাদের সমিতির মাধ্যমে এনজিও পদক্ষেপ বন পাহারার কাজে সম্পৃক্ত করেছেন। ওই এনজিও কিছু অর্থ পাহারা কাজের নিয়োজিত সিপিজি’র সমিতিতে দিয়েছেন। তাদের নিয়মিত পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে বনবিভাগের সাথে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.