ধর্ষণ করে বিয়ে করার প্রতিশোধ নিতেই স্ত্রী ও সন্তানকে খুন

ঢাকা প্রতিনিধি: বরগুনার পাথরঘাটা থানার হাতেমপুর গ্রামে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ ধর্ষক শাহীন মুন্সিকে গ্রেফতার করে গত বছরের ৩ জুলাই। তিন মাস কারাবন্দী থাকার পর ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে বিয়ে করার শর্ত সাপেক্ষে আদালত তাকে জামিন দেয়।
জামিন পাওয়ার পরদিন শাহীন মুন্সির সাথে সুমাইয়া আক্তারের বিয়ে হয়। শাহীন মুন্সী পেশায় জেলে। গত ১ জুলাই থেকে সুমাইয়া আক্তার ও তার ৯ মাস বয়সের সন্তান নিখোঁজ ছিল। ২ জুলাই বাড়ির পাশে নরম মাটি দেখতে পেয়ে সুমাইয়ার বাবা রিপন বাদশার সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মাটি খুঁড়ে তার মেয়ে ও নাতনির লাশ উদ্ধার করেন। ঘটনার সময় থেকেই শাহীন মুন্সী পলাতক ছিলেন।
গতকাল সোমবার (১২ জুলাই) রাতে ঢাকার সিআইডির একটি বিশেষ টিম চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীন মুন্সীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর শাহীন মুন্সী জানিয়েছেন যে ধর্ষণ করার পর তাকেই বিয়ে করার পর তিনি পারিবারিকভাবে অশান্তিতে ছিলেন। প্রায়ই স্ত্রীর সাথে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হতো। এর জের ধরে তার স্ত্রীকে মাছ ধরা জালের নাইলনের দড়ি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর বাড়ির পাশে মাটি খুঁড়ে লাশ চাপা দেওয়ার পর ঘরে এসে দেখেন যে তার ৯ মাস বয়সের মেয়ে কান্নাকাটি করছে। তখন তাকে কোলে করে বাড়ির পাশে খালে যাই। খালের পানিতে চুবিয়ে শিশুকে হত্যা করা হয়। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে মেয়েকেও মাটি চাপা দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মা ও শিশু হত্যার এই মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দেন বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত।
সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, গত বছরের ৩ জুলাই শাহীন মুন্সীর বিরুদ্ধে পাথরঘাটা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়ে ৩ মাস কারাবন্দী ছিলেন। পরবর্তীতে আসামী পক্ষ ও ধর্ষণের শিকার পরিবারের পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা হয়। আসামী ওই নারীকে বিয়ে করার সম্মতি দিলে বাদী পক্ষ আদালতে জামিনের বিরোধিতা করেননি। পরে কারাগার থেকে বের হয় সুমাইয়া আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের তিন মাস পর তাদের ঘরে শিশু কন্যার জন্ম হয়। এর মধ্যে করোনার লকডাউনে শাহীন মুন্সী তার পেশা হারায়। দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। গত ৩০ জুন শাহীন তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ওই গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াতে যান। ১ জুলাই বাসায় ফিরে আসার পর স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নাইলনের দড়ি স্ত্রীর গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করেন।
পরে লাশ বাড়ির পাশে মাটি খুঁড়ে চাপা দেন। ওই সময় বাড়িতে শাহীনের মা ঘুমিয়ে ছিলেন। স্ত্রীকে মাটিচাপা দেওয়ার পর ঘরে ফিরে এসে দেখেন ৯ মাস বয়সের মেয়ে কান্নাকাটি করছে। তখন শাহীন শিশুকে নিয়ে খালের পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে স্ত্রীর সঙ্গে মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার পর দিন সুমাইয়ার ছোট বোন বাড়িতে এসে বোনের খোঁজ করেন। ওই সময় শাহীন জানায় যে সুমাইয়া তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। ওই রাতেই শাহীন পালিয়ে যান। পরদিন সুমাইয়ার বাবা মেয়ে ও নাতনিকে খুঁজতে বাড়িতে আসেন। বাড়ির পাশে নরম মাটি দেখে তার সন্দেহ হয়। আশেপাশের লোকজন ডেকে মাটি খুঁড়ে মেয়ে ও নাতনির লাশ উদ্ধার করেন।
সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বিটিসি নিউজকে জানান, এটি একটি সমাজের অবক্ষয়। সামাজিকভাবে ধর্ষণের বিষয়টি মধ্যস্থতা করে একটি সমাধান করা হলেও ওই নারী ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। তার ৯ মাসের সন্তানকেও হত্যা করে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.